শুভঙ্কর বসু ও দীপঙ্কর মণ্ডল: বেসরকারি স্কুলের ফি থেকে ‘করোনা ছাড়’ উঠে যাওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেল অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী মহলে। শুক্রবার আদালত নির্দেশ দিয়েছে ১ মার্চ থেকে বেসরকারি স্কুলগুলি পড়ুয়াদের থেকে ফের পুরো বেতন নিতে পারবে। পাশাপাশি চলতি মাসে বকেয়া ফি’র ৫০ শতাংশ মিটিয়ে দিতে হবে। ইউনাইটেড গার্ডিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “বেশিরভাগ বেসরকারি স্কুল এযাবৎ আদালতের রায়কে অমান্য করে ১০০ শতাংশ ফি নিয়েছে। শুধু তাই নয় ব্যাপক হারে স্কুলগুলি ফি বাড়িয়েছে। বেসরকারি স্কুলগুলোর যথেচ্ছাচারকে রুখতে আন্দোলনই একমাত্র পথ।”
বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইভেট স্কুল’স টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’–এর বক্তব্য, বহু স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীদের বেতন এখনও অনিয়মিত। কোথাও ৪০ শতাংশ, কোথাও ৩০ শতাংশ বেতন কেটে নেওয়া হচ্ছে। ফি থেকে ‘করোনা ছাড়’ উঠে গেলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা আবার পুরনো হারে বেতন পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। অভিভাবক সংগঠনের বক্তব্য, “২০২০ সালে কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) রায় অমান্য করার জন্য স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু তা দেখতে পেলাম না। আদালত বলেছিল স্কুল খোলার এক মাস পর থেকে সম্পূর্ণ ফি নেওয়া যাবে। অথচ ১ মার্চ থেকে সম্পূর্ণ ফি নেওয়ার কথা বলল।”
[আরও পড়ুন: জল্পনার অবসান, ফের তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই]
সরকারি নির্দেশে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস চালু হয়েছে। বহু স্কুলে এখনও চলছে অনলাইন ক্লাস। নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে খুলবে এমন স্কুল আছে। এক্ষেত্রে পুরো ফি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। পাশাপাশি কিছু অভিভাবক জানিয়েছেন, সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। পুরো ফি দিতে আপত্তি নেই।
২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর রাজ্যের সব বেসরকারি স্কুলের টিউশন ফি ২০ শতাংশ কমানোর নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। আদালত জানিয়েছিল, ২০১৯-২০২০ সালে যে টিউশন ফি ছিল, তার ২০ শতাংশ কমাতে হবে। ২০ শতাংশ কম করার পরও যে অভিভাবক ওই ফি দিতে পারবেন না, তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য প্রমাণ-সহ কুড়ি শতাংশের বেশি ফি কমানোর আবেদন করতে পারবেন। স্কুল কর্তৃপক্ষকে তা বিবেচনাও করতে হবে।
বেসরকারি স্কুলগুলির বক্তব্য, অনলাইন ক্লাস হলেও শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীদের বেতন এবং খরচ কমেনি। গত বছর বেসরকারি স্কুলের বর্ধিত ফি নিয়ে অভিভাবকরা তুমুল বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের বক্তব্য, কোভিড আবহে সবাই আর্থিক সংকটের মধ্যে। টিউশন ফি ছাড়াও ডেভেলপমেন্ট ফি, ট্রান্সপোর্ট ফি, ল্যাব ফি, কম্পিউটার ফি, স্টেশনারি ফি দেওয়ার কথা বলে কিছু স্কুল। আদালতের নির্দেশে এই ফি গুলি মকুব হয়। আগামী মাস থেকে আর কোনো ফি মকুব করবে না কোনও স্কুল।