অভিষেক চৌধুরী, কালনা: সেই ষোড়শ শতকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পথিকৃৎ মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যর (Mahaprabhu Sree Chaitanya) জীবনী নিয়ে বাংলা সাহিত্যের প্রথম কাব্য রচনা করেছিলেন বৃন্দাবনদাস ঠাকুর। আজ একবিংশ শতক। বাংলার সাহিত্যের অন্যতম সেই সম্পদ সংরক্ষণে (Conservation) বস্তুত কোনও ব্যবস্থাই হয়নি। পূর্ব বর্ধমানের (East Burdwan)মন্তেশ্বরের দেনুড় গ্রামে বৃন্দাবনদাসের বসতভিটা। সেখানে এবার নিত্যানন্দ প্রভুর ৫৫১ জন্মমহোৎসবে তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে সেই পুঁথি সংরক্ষণেরই জোরদার দাবি উঠল। বৃন্দাবনদাস রচিত ‘শ্রীচৈতন্যভাগবত’ বাংলা সাহিত্যের তো বটেই, তা এক জাতীয় সম্পদ। তাই তা ঠিকমতো সংরক্ষিত না হলে বিপুল ক্ষতি বলে মনে করছেন দাবিদাররা। কলেজ ছাত্রী থেকে ভক্ত, সেবাইতদের একই বক্তব্য।
২১ ফেব্রুয়ারি থেকে মন্তেশ্বরের (Manteswar) দেনুড়ে বৃন্দাবনদাস ঠাকুরের পাটবাড়িতে তিনদিন ধরে মহাসমারোহে পালিত হল নিত্যানন্দ প্রভুর জন্মমহোৎসব। শুক্রবার তা শেষ হয়েছে। সেই উপলক্ষে দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্তরা বৃন্দাবনদাস ঠাকুরের হাতে লেখা পুঁথি ‘শ্রীচৈতন্যভাগবত’ সংরক্ষণের দাবি তুললেন। আসলে মন্তেশ্বরের দেনুড় পঞ্চায়েতের দেনুড় গ্রামে রয়েছে বৃন্দাবনদাস ঠাকুরের বসতভিটা। যেখানে বসেই তিনি নিজের হাতে চৈতন্যদেবের উপর আধারিত জীবনী গ্রন্থ ‘শ্রীচৈতন্যভাগবত’ লিখেছিলেন তুলোট কাগজের উপর। তাঁর ভিটেয় সেই পুঁথি আজও বর্তমান। ওই গ্রন্থে রয়েছে চৈতন্যদেবের বাল্য ও কৈশোরলীলা। চৈতন্যজন্ম থেকে গয়াগমন, সন্ন্যাসগ্রহণ ও নীলাচলগমনের ঘটনা রয়েছে। উঠে এসেছে তৎকালীন সমাজজীবনের ছবি ও নবদ্বীপের সমাজচিত্র। গুরুত্বের দিক থেকে যা এক অমূল্য সাহিত্যসম্পদ।
[আরও পড়ুন: ‘ডার্ক ওয়েবে অবৈধ লীলা খেলা চালায় সুপারস্টাররা! কেন্দ্র পদক্ষেপ করুক’, কঙ্গনার নিশানায় কারা?]
বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে (University Syllabus) ‘শ্রীচৈতন্যভাগবত’ কাব্যের কিছু খণ্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু হলে কী? আজও সকলের অগোচরে রয়েছে সেই পুঁথি। জরাজীর্ণ সেই পুঁথিকে সেবাইতরা সযত্নে রাখার চেষ্টাও করছেন। তা সত্ত্বেও সংরক্ষণের জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তার অভাবে ওই গুরুত্বপূর্ণ পুঁথি বর্তমানে নষ্ট হতে বসেছে। বৃন্দাবনদাসের পাটবাড়িতে চলা নিত্যানন্দ প্রভুর জন্মমহোৎসবে যোগ দেওয়া ভক্তরা এদিন ওই ‘শ্রীচৈতন্যভাগবত’ গ্রন্থের সংরক্ষণের দাবি তোলেন।
[আরও পড়ুন: মোদির প্রচারেও বক্স অফিসে লক্ষ্মীলাভ অধরা! পয়লা দিনে ‘আর্টিকল ৩৭০’-এর আয় কত?]
বর্ধমান থেকে আসা এক পড়ুয়া প্রথমা চক্রবর্তী জানান, “বৃন্দাবনদাস ঠাকুরের লেখা শ্রীচৈতন্যভাগবত গ্রন্থ আমাদের দেশের জাতীয় সম্পদ। এই অমূল্য সম্পদকে সংরক্ষণ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।” একই দাবি মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, কলকাতার মত বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ভক্তদের। পাটবাড়ির সেবাইত সুলোচন মহন্ত, নরহরি মহন্তরা জানান, “আমরা সাধ্যমত গ্রন্থটিকে একটি কাঠের বাক্সে রেখেছি। তবে এটিকে সংরক্ষণের জন্য সরকার হস্তক্ষেপ করলে ভালো হয়।”
দেখুন ভিডিও: