সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬১.১ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। তবে আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে বেশির ভাগ মানুষ (৬৫.৯ শতাংশ) বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। আর শুধুমাত্র নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত ৩১.৯ শতাংশ উত্তরদাতার। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের নয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (CEC) ও চার নির্বাচন কমিশনার আগামীকাল অর্থাৎ রবিবার শপথ নেবেন। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান বলেছেন, নির্বাচন যত দেরি হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়বে।
রবিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নতুন নির্বাচন কমিশনকে শপথ পাঠ করাবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন। চারজন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, প্রাক্তন জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, প্রাক্তন যুগ্মসচিব তহমিদা আহমদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। উল্লেখ্য, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের একমাস পর ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। গত বৃহস্পতিবার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় ৷
এদিকে কমিশন গঠনের পরেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, পুরনো স্বৈরাচারীরা দেশি-বিদেশি প্রভুদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেই চলেছেন। তাই দেশকে রক্ষা ও ভবিষ্যৎকে নিয়ে ভাবতে হলে নির্বাচনের কোনও বিকল্প নেই। শনিবার চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির কাউন্সিল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভার্চুয়ালি এসব কথা বলেন তিনি। তারেক বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার হটিয়েছি। কিন্তু হটিয়ে দেওয়া স্বৈরাচার তো থেমে নেই। দেশি ও বিদেশি দোসরদের নিয়ে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। দেশের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধি আর নির্বাচন দরকার।
আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ও সত্যিকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারলে, জনগণ তবেই জনপ্রতিনিধি বাছাই করতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। শুধুমাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সংস্কারের বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তারেক। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে সেই সংস্কার বিএনপিও চায়। বেশি সংস্কার করতে গিয়ে নির্বাচন করতে দেরি হলে ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ নিতে পারে।
সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকার করা এক সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, ১৮.৭ শতাংশ মানুষ চান দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন। ৮. ৬ শতাংশ মানুষ নির্বাচন চান ১৮ মাসের মধ্যে। সবচেয়ে কম ৫.৮ শতাংশ জনগণ চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। কত দ্রুত নির্বাচন হওয়া উচিত এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেছেন ৪.৬ শতাংশ মানুষ। নির্বাচন কবে হওয়া উচিত সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি ১.১ শতাংশ মানুষ।
গত ৫ আগস্ট 'গণঅভ্যুত্থানে' হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ? এ নিয়ে কী ভাবছেন দেশের নাগরিকরা? এই বিষয়ে অক্টোবরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখ ভয়েস অফ আমেরিকা দেশব্যাপী একটি সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষাটি ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার এডিটোরিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড। ভয়েস অফ আমেরিকার ঠিক করে দেওয়া সুনির্দিষ্ট প্রশ্নমালার উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড টেলিফোন ইন্টারভিউইংয়ের মাধ্যমে দেশের আটটি বিভাগে ১৮ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সি এক হাজার মানুষের মধ্যে সমীক্ষাটি চালানো হয়।