দীপঙ্কর মণ্ডল,বারাণসী: সবচেয়ে প্রাচীন জীবন্ত নগরীগুলোর মধ্যে একটি। গঙ্গার পশ্চিম পারের ঘাটগুলি সন্ধ্যা আরতির জন্য তৈরি হচ্ছিল। দশাশ্বমেধ, মানমন্দির হয়ে ললিতা ঘাটে তখন সন্ধে হব হব। এখান থেকে জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির সবচেয়ে কাছে। এগোতে গিয়েই হোঁচট! গলিতে ঢুকেই দেখি, সামনের বাড়িগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। ধ্বংসাবশেষের উপর ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল এক কিশোর। বলল, “চওড়া রাস্তা হবে। আমরা তো দূরে চলে যাব। তাই সন্ধেবেলা ঘুড়ি ওড়ালেও বাবা আর বকে না।” ললিতা ঘাটের কাছে ২৭৫টি বাড়ি ভাঙা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের ‘কাশী বিশ্বনাথ করিডর’ তৈরি হবে। ঘাট থেকে বিশ্বনাথের মন্দির পর্যন্ত ৫০ ফুটের রাস্তা, অডিটোরিয়াম, মিউজিয়াম, ভোগশালা-সহ অনেক কিছু হবে। বাজেট প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। ২৫ হাজার বর্গমিটার এলাকার ভোল বদলে যাবে। বছরখানেক পরে আর চেনাই যাবে না পুরনো মহল্লাটিকে।
দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানীর কদর যে আরও বাড়বে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। বৃহত্তর স্বার্থে নিজেদের শৈশবকে হারিয়ে যেতে দিচ্ছেন সবাই। খুশির কথা বলছেন ললিতা ঘাট সংলগ্ন বাসিন্দারা। নেপালের পশুপতিনাথের আদলে থাকা মন্দির, বৃদ্ধাশ্রম আর নদীর উপর ঝুলন্ত একটি ইস্কুলে বুলডোজার চালানো হয়নি। এই করিডরের উপর ছড়িয়ে প্রচুর ছোট ছোট মন্দির। তা অক্ষত থাকলেও পুরনো বাড়িগুলি ভাঙার সময় চোট পেয়েছে বিগ্রহ। মন্দিরগুলিকে সংস্কার করা হবে। স্থানীয়দের একটি অংশের দাবি, এখানে কোনও বাড়ি ছিল না। যাঁরা এখানে ছিলেন, তাঁরা জোর করে মন্দিরের ভিতরে রান্নাবান্না করে থাকতে শুরু করেন। তবে সরকারিভাবে কাউকেই নিরাশ করা হয়নি। বাড়ির মালিক থেকে ভাড়াটে – সবাই পুনর্বাসন পেয়েছেন।
[আরও পড়ুন: ফণীর তাণ্ডবে বদলেছে চিলকা হ্রদ, আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?]
মিডিয়ার একাংশের খবর দেখে কলকাতা থেকে মনে হচ্ছিল বারাণসীর সেইসব সরু গলি বুঝি আর নেই। কিন্তু দিব্যি ঠিক আছে সব। শুধু নির্দিষ্ট এই এলাকাটির প্রাচীন রূপ আর থাকছে না। এই ভাঙচুর বনাম সভ্যতার উন্নয়নের বিরুদ্ধে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। তবে দিনভর ঘুরে একজনকেও নয়া প্রকল্পের বিরুদ্ধে বলতে শোনা যায়নি। বৃদ্ধাশ্রমের পাশে অক্ষত বাড়িটি থেকে বেরিয়ে এলেন বিবেক নামে এক যুবক। তাঁর কথায়, “কুছ পানে কে লিয়ে কুছ খোনা ভি পড়তা হ্যায় স্যর। জিতনে মোকান তোড়া গয়া, সভিকো বহুত প্যায়সা মিলা। খুশি খুশি সবনে দূর চলা গিয়া।” কেউ কেউ অবশ্য টাকা পাওয়ার পরেও এলাকা ছাড়েননি। গঙ্গার ঘাটগুলিতেই অনেকে শুয়েবসে কাটাচ্ছেন। সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ বললেন, “গোটা জীবনটা যেখানে কাটালাম, নতুন করে আর কোথায় যাব? মা গঙ্গার কোলেই শেষ জীবন কাটাতে চাই।”
বাস্তবিকই বারাণসী তীব্র নেশার মতো। পুরাণের নানা ঘটনা, মিথ, বাস্তব, উদাত্ত আকাশ, সন্ধ্যা আরতি, বিকেলে নৌকাভ্রমণ সব মিলিয়ে এখানে এলে আর ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করে না। নেপালের বাসিন্দা এক বৃদ্ধা আরতি দেখার ফাঁকে ভাঙা হিন্দিতে বললেন, “হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ মোক্ষলাভের জায়গা বারাণসী। রাস্তা হোক আর নাই হোক, মাথার উপর ছাদ থাকুক আর নাই থাকুক, এখানেই বাকি জীবন কাটাব।” ভেঙে দেওয়া বাড়িগুলির সামনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় যুবক অবিনাশ অনেক কথা বললেন। তাঁর মত,“মোদি আসার পর বারাণসীর অনেক উন্নতি হয়েছে। ঘাটগুলিতে আগে নাকে রুমাল নিয়ে বসতে হত। শৌচালয় ছিল না। সেই অবস্থা আর নেই। রাস্তাঘাট ঝকঝকে। আলো জ্বলছে। শ্রাবণ মাসে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাবা বিশ্বনাথের কাছে আসেন। রাস্তা চওড়া না করলে তো পদপিষ্ট হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
[আরও পড়ুন: শক্তি বাড়ল ভারতীয় বায়ুসেনার, হাতে এল অত্যাধুনিক মার্কিন হেলিকপ্টার]
যাঁরা উত্তর কলকাতায় থাকেন, তাঁরা বারাণসী শহরে এলে একফোঁটাও নিজের পাড়াকে মিস করবেন না। বড়বাজারের ঘিঞ্জি গলি, পানের দোকান, গাড়ির আওয়াজ, রিকশার টুং টাং সব আছে। শুধু এখানে যোগ হয়েছে টোটোর উপস্থিতি।
১৯ মে এখানে ভোট। বিমানবন্দরে নেমেই শহরে চরকিপাক দিলাম। বিজেপি বাদে একটাও অন্য পতাকা চোখে পড়েনি। সবাই মোদির নামে ধন্য ধন্য করছেন। অখিলেশ যাদব-মায়াবতীর জোট এখানে ফিকে। কয়েক দিন পরে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর রোড শো। তা নিয়ে তাপ-উত্তাপ নেই কারও। মোদির বিরুদ্ধে বারাণসীতে ২৫ জন প্রার্থী। সমাজবাদীর শালিনী যাদব এবং কংগ্রেসের অজয় রাইয়ের মুখ ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখতে হল। রিকশাওয়ালা থেকে হোটেলের সাফাই কর্মী, মন্দিরের পূজারি থেকে কলসেন্টারের যুবতী সবার মুখে মোদি। গতবার সাড়ে তিন লাখেরও বেশি ভোটে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে এগিয়ে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর জয়ের রেকর্ড ভাঙার অপেক্ষায় মন্দির নগরী।
এই ভাঙচুর বনাম সভ্যতার উন্নয়নের বিরুদ্ধে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। তবে দিনভর ঘুরে একজনকেও নয়া প্রকল্পের বিরুদ্ধে বলতে শোনা যায়নি। বৃদ্ধাশ্রমের পাশে অক্ষত বাড়িটি থেকে বেরিয়ে এলেন বিবেক নামে এক যুবক। তাঁর কথায়, “কুছ পানে কে লিয়ে কুছ খোনা ভি পড়তা হ্যায় স্যর। জিতনে মোকান তোড়া গয়া, সভিকো বহুত প্যায়সা মিলা। খুশি খুশি সবনে দূর চলা গিয়া।” কেউ কেউ অবশ্য টাকা পাওয়ার পরেও এলাকা ছাড়েননি।
বাস্তবিকই বারাণসী তীব্র নেশার মতো। পুরাণের নানা ঘটনা, মিথ, বাস্তব, উদাত্ত আকাশ, সন্ধ্যা আরতি, বিকেলে নৌকাভ্রমণ সব মিলিয়ে এখানে এলে আর ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করে না। নেপালের বাসিন্দা এক বৃদ্ধা আরতি দেখার ফাঁকে ভাঙা হিন্দিতে বললেন, “হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ মোক্ষলাভের জায়গা বারাণসী। রাস্তা হোক আর নাই হোক, মাথার উপর ছাদ থাকুক আর নাই থাকুক, এখানেই বাকি জীবন কাটাব।” যাঁরা উত্তর কলকাতায় থাকেন, তাঁরা বারাণসী শহরে এলে একফোঁটাও নিজের পাড়াকে মিস করবেন না। বড়বাজারের ঘিঞ্জি গলি, পানের দোকান, গাড়ির আওয়াজ, রিকশার টুং টাং সব আছে। শুধু এখানে যোগ হয়েছে টোটোর উপস্থিতি।
[আরও পড়ুন: প্রচারে সানি দেওলের হাতিয়ার ‘ঢাই কিলো কা হাত’]
১৯ মে এখানে ভোট। বিমানবন্দরে নেমেই শহরে চরকিপাক দিলাম। বিজেপি বাদে একটাও অন্য পতাকা চোখে পড়েনি। সবাই মোদির নামে ধন্য ধন্য করছেন। অখিলেশ যাদব-মায়াবতীর জোট এখানে ফিকে। কয়েক দিন পরে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর রোড শো। তা নিয়ে তাপ-উত্তাপ নেই কারও। মোদির বিরুদ্ধে বারাণসীতে ২৫ জন প্রার্থী। সমাজবাদীর শালিনী যাদব এবং কংগ্রেসের অজয় রাইয়ের মুখ ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখতে হল। রিকশাওয়ালা থেকে হোটেলের সাফাই কর্মী, মন্দিরের পূজারি থেকে কলসেন্টারের যুবতী – সবার মুখে মোদি। গতবার সাড়ে তিন লাখেরও বেশি ভোটে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে এগিয়ে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর জয়ের রেকর্ড ভাঙার অপেক্ষায় মন্দির নগরী।
The post ইতিহাস হারাচ্ছে, তবুও নাগরিক জীবনের উন্নয়নই অগ্রাধিকার বারাণসীবাসীর appeared first on Sangbad Pratidin.