লগ্নিতে বড় রিটার্ন পাওয়ার আশা কেই বা রাখেন না! এক্ষেত্রে ব্যালেন্ডসড অ্যাডভান্টেজ ফান্ড তথা ব্যাফ-এর উপযোগিতা যে রয়েছে, ট্রেড পণ্ডিতরা তা হামেশাই বলে থাকেন। বহু ইনভেস্টর ব্যাফ-এ লগ্নি করে উপকৃত হয়েছেন। যাঁরা এখনও উদ্যোগী হননি, কোন কোন বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন, জেনে নিন নীলাঞ্জন দে-র লেখায়।
ব্যালেন্সড অ্যাডভান্টেজ ফান্ড (ব্যাফ)
ডেট এবং ইক্যুইটির মিশ্রণে হাইব্রিড শ্রেণীর ফান্ডের সৃষ্টি, ‘সঞ্চয়’-এর পাঠক তা বেশ জানেন। বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড প্রকল্প আছে– কোনটিতে ইক্যুইটির অংশ বেশি, আবার কোনটিতে ডেটের পরিমাণ উঁচুর দিকে বলে আলাদাভাবে চোখে পড়ে। তবে রিটার্নের নিরিখে (অবশ্য গ্যারান্টি দেওয়ার প্রশ্নই নেই) ব্যালেন্সড অ্যাডভান্টেজ ফান্ড একেবারেই স্বতন্ত্র ধরনের শ্রেণি। তার নিজস্বতার কথা ইনভেস্টররা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন। আজ সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ‘ব্যাফ’(ব্যালেন্সড অ্যাডভান্টেজের উল্লেখ করার সময় এই নামেই সাধারণত ডাকতে পছন্দ করেন পেশাদাররা) নিয়ে আলোচনা।
ব্যাফ কী করতে চায়?
ইক্যুইটির পরিমাণের সুবিধা বুঝে বড়-সড় রিটার্ন আনার পক্ষপাতী ফান্ড হাউসগুলো। অন্যদিকে ডেটের অংশ কম রেখেছেন তাঁদের অনেকেই। লক্ষ্য, কেবল ‘স্টেবিলিটি’ বা ভারসাম্য রক্ষা। পোর্টফোলিওতে তাই সাধারণভাবে ইক্যুইটির ভূমিকা খুব ইতিবাচক। ভালো রিটার্নের মূল নির্ধারক এই অ্যাসেট ক্লাসটিই হয়, এ কথা তো অনস্বীকার্য। ব্যাফ সাধারণত বেশ ‘ডায়নামিক’ পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়ে থাকে। ফান্ড ম্যানেজারের স্বাধীনতা থাকে বেশ অনেকটাই। একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট ফান্ড ম্যানেজার ইক্যুইটির লিমিটের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন। ইদানিং লার্জ এবং মিড ক্যাপ মিশ্রিত পোর্টফোলিও রক্ষা করেছেন ফান্ড ম্যানেজারদের একটি বড় অংশ।
[আরও পড়ুন: পথে বেরলেই ‘সেফ ড্রাইভ…’, অ্যাক্সিডেন্ট পলিসিতে কী না থাকলেই নয়?]
উদাহরণ: অ্যাক্সিস ব্যালেন্সড অ্যাডভান্টেজ ফান্ড পক্ষপাতহীনভাবে আমরা অ্যাক্সিস মিউচুয়াল ফান্ডের এই বিশেষ প্রকল্পটি বেছে নিলাম, কেবল উদাহরণ হিসাবে দেখা উচিত হবে।
ফান্ড হাউসের তথ্য অনুযায়ী :
- গত ৩১ শে ডিসেম্বরের অ্যাসেটের পরিমাণ ছিল ১৯৭৮ কোটি টাকা।
- গত ১২ই জানুয়ারির ন্যাভ: ১৭.৪৩ টাকা
- কতখানি ইক্যুইটি লগ্নি করতে পারেন ফান্ড ম্যানেজার : ১০০%
- এই সন্ধিক্ষণে প্রায় ৭০% বিনিয়োগ করা হয়েছে ইক্যুইটিতে
- এই সময় আনুমানিক ৭৫% আছে লার্জ ক্যাপ স্টকে এবং ১৪% আছে মিড ক্যাপে।
- মোট ডেট অ্যালোকেশন : ২৫%
- ফান্ডের বেঞ্চমার্ক : Nifty 50 Hybrid Composite Debt 50:50 Index
কী রকম রিটার্ন এসেছে সাম্প্রতিককালে:
এক মাস : ৪.৪৩%
তিন মাস : ৮.৯৪%
ছয় মাস : ১৩.১৮%
নয় মাস : ২১.৬৩%
এক বছর : ২২.২৩%
বিনিয়োগ উপদেষ্টারা কী বলেন ব্যাফ নিয়ে–
‘সঞ্চয়’-এর পক্ষ থেকে আমরা বিভিন্ন পরামর্শদাতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কীভাবে ইনভেস্টররা ব্যাফ নিয়ে উপকৃত হতে পারেন, তাঁরা জানিয়েছেন। যে দুটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন :
(ক) ইক্যুইটি দেবে গ্রোথ এবং ডেট আনবে আংশিক নিশ্চয়তা – লগ্নিকারীরা যেন সেভাবেই অ্যালোকেশন করেন এই ধরনের ফান্ডে।
(খ) এককালীন লগ্নি তো করাই যেতে পারে, তবে সিপের মাধ্যমে স্বল্প পরিমানে বিনিয়োগ করে, নিয়মিতভাবে তহবিল বাড়ানোর চেষ্টা করা – এই দুইভাবেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
পরমার্শদাতাদের মধ্যে আমরা বেছে নিয়েছি শ্রী নিখিল কুমার মান্না-কে, যিনি বহুদিন ধরে ইনভেস্টরদের লগ্নির ব্যাপারে সহায়তা করছেন, অনেককে অ্যাক্টিভ বিনিয়োগের জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য জেনে নেওয়া যাক–
‘অনেক বিনিয়োগকারীই একশো শতাংশ ইক্যুইটি ভিত্তিক ফান্ড চান না, তাঁরা মনে করেন স্বল্প পরিমাণে ডেট থাকা বাঞ্ছনীয়। রক্ষণশীল ইনভেস্টরের রিস্ক প্রোফাইলের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ইক্যুইটি ও ডেটের মিশ্রণ তাঁদের পছন্দ। ব্যাফের ক্ষেত্রে ফান্ডে ম্যানেজার পরিস্থিতি বুঝে অ্যাসেট অ্যালোকেশন নির্ধারণ করেন। গড়পড়তা হাইব্রিড ফান্ডের তুলনায় তাঁর স্বতন্ত্রতা বেশি।
[আরও পড়ুন: মাত্র হাজারে ‘প্ল্যান’ করুন ফিক্সড ইনভেস্টমেন্ট]
যদি ধারাবাহিকভাবে কেউ ভালো ব্যাফে লগ্নি করেন, তাহলে তাঁর উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে না, এ কথা আমি বিশ্বাস করি। তবে তার আগে, অর্থাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটু খোঁজ খবর করে নেওয়া দরকার। নিজে না করতে পারলে উপযুক্ত পরামর্শদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। দেখে নিন কিছু জরুরি পয়েন্ট। যেমন, পোর্টফোলিওতে কী ধরনের ইক্যুইটি অ্যাসেট আছে। অথবা সেখানে মার্কেট ক্যাপের বিন্যাস ঠিক কেমন। ইদানিং দেখতে পাচ্ছি একাধিক ‘নিউ জেনেরেশন’ ফান্ড বাজারে পা রেখেছে। প্রয়োজন মনে করলে সেইসব প্রকল্পও খুঁটিয়ে দেখতে পারেন। ছোট বিনিয়োগকারী, যাঁরা সামগ্রিকভাবে ‘রিটেল ইনভেস্টর’ বলে পরিচিত, ব্যাফ সম্বন্ধে আগ্রহী হতে পারেন। আমি চাই তাঁদের ধারণা যেন স্বচ্ছ হয়। ব্যাফ ভালো রিটার্ন আনতে সক্ষম, সেরকমই যাঁরা মনে করেন, তাঁরা যেন রিস্কের বিষয়ে অবগত থাকেন। প্রতি মাসে ইনভেস্টমেন্টের খাতে টাকা সরিয়ে রাখুন, যাতে ব্যাফের মতো ফান্ডে ধীরে ধীরে মোটা তহবিল তৈরি করতে পারেন।’
নিখিল কুমার মান্না
কর্ণধার, মান্না ক্যাপিটাল
(৩১ শে জানুয়ারির ন্যাভ অনুযায়ী)