সূচনা থেকেই জনপ্রিয় ডিজিটাল ব্যাংকিং পরিষেবা। বর্তমানে তা আকাশচুম্বী। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের অগ্রগতি নিয়ে ‘সঞ্চয়’-এর জন্য বিশেষভাবে লেখা এই প্রতিবেদন
এক বছর আগে আমাদের পরিচিত দুনিয়ায় বিরাট ওলটপালট ঘটে গিয়েছে আর আমাদের জীবনও পুরোপুরিভাবে বদলে গিয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্কের ব্যবহার, বাড়ি থেকে কাজ এবং লকডাউন এক চরম বাস্তব হয়ে উঠেছে। একটি বছর অতিক্রম করতে পারা এবং ১০০ কোটি টিকাকরণ করতে পারা, যুগ্মভাবে আমাদের ভাল ভবিষ্যতের রুপোলি রেখা দেখাচ্ছে। কিন্তু আমরা সকলে আগে যেভাবে জীবনযাপন করতাম এবং ব্যাংকে কাজকর্ম পরিচালিত হত, তা সম্ভবত পাকাপাকিভাবে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে।
মহামারীর আগে, ডিজিটাল ব্যাংকিং ক্রমশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছিল, বিশেষত নগর এবং মেট্রো শহরগুলিতে। কিন্তু মহামারীর বিস্তারের কারণে যখন লকডাউন প্রক্রিয়া শুরু হল, তখন সারা দেশের মানুষই কার্যত তাঁদের যাবতীয় ব্যাংকিং প্রয়োজনীয়তার জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থাকে গ্রহণ করে নিলেন।
[আরও পড়ুন: বেশি সুদ চান? আপনার চাহিদা পূরণ করতে পারে স্মল ফাইন্যান্স ব্যাংক]
ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (NPCI) এর ফ্ল্যাগশিপ পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (UPI)-এর মাধ্যমে ২০২১-এর সেপ্টেম্বর মাসে ৬.৫ ট্রিলিয়ন পরিমাণ অর্থের ৩.৬৫ বিলিয়ন লেনদেন রেকর্ড করা হয়েছে। এই সংখ্যা আকার এবং অঙ্কের মূল্যে সর্বকালীন বেশি। এই নিয়ে টানা তিন মাস এই প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার করে ৩ বিলিয়নেরও বেশি লেনদেন হয়েছে, যা মহামারীর সূচনার পর থেকে দেশে আরও বেশি পরিমাণ ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিতবাহী।
গ্রাহকরা যখন এগিয়ে এসে ডিজিটাল ব্যবস্থাকে আপন করে নিয়েছেন, ব্যাংকগুলিরও দায়িত্ব এবং কর্তব্য হল তাঁদের সুরক্ষিত ও নিরাপদ ডিজিটাল ব্যাংকিং পরিষেবা দেওয়াটা নিশ্চিত করা।
HDFC ব্যাংকে আমরা, নতুন নতুন ভবিষ্যতমুখী ডিজিটাল পণ্য ও পরিষেবা বাজারে নিয়ে আসার জন্য একটি ডিজিটাল ফ্যাক্টরি ও একটি এন্টারপ্রাইজ ফ্যাক্টরি স্থাপন করেছি। এই ফ্যাক্টরিগুলি অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্যামিং ইন্টারফেস (API), ডেটা ও ক্লাউড ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
নতুন প্রযুক্তি স্ট্যাক/অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহারে এই ডিজিটাল ফ্যাক্টরি গ্রাহকদের জন্য নতুন সমাধান প্রদান করবে। একইসঙ্গে সেগুলির সক্ষমতাকেও যাচাই করবে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে বিরাট আকারের বুদ্ধিতে সহায়তা দানের জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন ও প্রযুক্তির ‘আপগ্রেডেশন’ করার উপযুক্ত পরিকল্পনা।
অন্যদিকে এন্টারপ্রাইজ ফ্যাক্টরি নতুন যুগের ওপেন-সোর্স স্ট্যাক ব্যবহার করে উত্তরাধিকার প্ল্যাটফর্মগুলি প্রতিস্থাপনের প্রচেষ্টার মূল ভিত্তি হবে। ব্যাংক তার টেক আইপি তৈরি এবং মালিকানার জন্য এন্টারপ্রাইজ ফ্যাক্টরি ব্যবহার করতে চায়।
ব্যাংক ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত আইপি প্রযুক্তির বিকাশ করছে এবং প্রযুক্তি কোম্পানি, ফিনটেক এবং বড় আইটি সংস্থাগুলির সহযোগিতায় একটি দেশীয় ক্লাউড আর্কিটেকচারের উদ্যোগ নিচ্ছে। নির্ভরযোগ্যতা, উপলব্ধতা, বিস্তৃতি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ডিজিটাল ফ্যাক্টরির প্রচেষ্টার মূলে থাকবে। এই উদ্যোগগুলি ব্যাংকটিকে ভবিষ্যতের জন্য ‘নির্মাণ’ করার সময় তাকে ‘পরিচালনা’র কৌশল উপলব্ধি করতে সহায়তা করবে।
এন্টারপ্রাইজ ফ্যাক্টরি এবং ডিজিটাল ফ্যাক্টরি উদ্যোগগুলি উৎপত্তি, অর্থ প্রদান, ঋণ, সংগ্রহ ইত্যাদির মতো মূল ডোমেইনগুলিতে ডিজিটাল উদ্যোগের পরিসরকে সম্বোধন করবে। কনভার্সেশনাল এআই, হালকা ধরনের মোবাইল/পেমেন্ট অ্যাপ্লিকেশন, মাল্টি জিও হরাইজন্টাল ডাটাবেসের ব্যবহার, এআই/এমএল প্রযুক্তির মতো নতুন প্রযুক্তির বিবিধ ও ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।
ফিজিক্যাল বা ব্রাঞ্চ-ব্যাঙ্কিং পরিষেবা প্রদান যেমন চলতে থাকবে, বলে রাখা ভাল যে আপনার স্থানীয় ব্যাংক শাখাটি আগামী দিনে কিছুটা পৃথকভাবে কাজ করতে পারে। ব্যাংকগুলি তাঁদের গ্রাহকদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার লক্ষ্যে তাঁদের শাখাগুলিকে এখন আরও বেশি করে ব্যবহার করবে। যে সব শাখা তাঁদের গ্রাহকদের জন্য আরও ভাল পরিষেবা দিতে পারবে, তারা নিঃসন্দেহে অন্যদের থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেকটা এগিয়ে থাকবে। হাইপার-কম্পিটিটিভ বা উচ্চ প্রতিযোগিতামূলক বাজার এবং ‘ডিজিটাল’ ব্যাংকিং দুনিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি প্রাসঙ্গিকতা লাভে গ্রাহকদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা প্রদান অত্যন্ত জরুরি।