অস্বীকার করে লাভ নেই। এ দেশের অধিকাংশ মানুষই এখনও পেনশন সিস্টেমের বাইরে রয়েছেন। আবার এমন মানুষও বহুল সংখ্যায় আছেন, যাঁরা এই সিস্টেমে পা-ই রেখেছেন অনেকে দেরিতে। উভয় পক্ষের জন্যই বিবেচ্য–বর্তমান জীবনশৈলীতে বিলম্ব যত, ভোগান্তি তত। কাজেই সময় থাকতে থাকতে সঠিক প্ল্যানিংয়ে জোর দিন। প্রয়োজনে সাহায্য নিন বিশেষজ্ঞের। বোঝালেন অভিজিৎ কুমার পোদ্দার।
প্রত্যেক বছরের গোড়ায় নতুন ক্যালেন্ডার হাতে এলে আমরা সবাই প্রথমেই কী খুঁজে দেখি, জানেন? দেখি, ছুটির লাল দাগগুলি। ঠিক কবে কোন ছুটি পড়ছে, তা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি। বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা আগেভাগেই করে নেওয়ার তাড়া থাকে তো! যে আগ্রহ আর উদ্দীপনা নিয়ে সাধারণ মানুষ বেড়ানোর প্ল্যান করে, তার ভগ্নাংশও যদি রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিংয়ের (Retirement Planning) জন্য তুলে রাখে, তাহলে আমাদের অবসরের সার্বিক পরিস্থিতি আজ অন্যরকম হত। আর্থিকভাবে অনেক আনন্দময় জীবন কাটাতে পারতাম অবসর নেওয়ার পরেও। অথচ দেখুন, আমরা বাড়ি-ফ্ল্যাট কেনার সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে পিছপা হই না, সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য ভেবেচিন্তে অগ্রসর হই। এই আমরাই ভাবি না যে, রিটায়ারমেন্ট একদিন না একদিন আসবেই, আর তার জন্য যথাযথ প্ল্যান অবশ্যই করতে হবে। অবসর কাটানোর জন্য তো আর লোন পাওয়া যায় না! কথাটা ভাল করে ভেবে দেখুন।
[আরও পড়ুন: ওড়িশার হনুমান জয়ন্তীর মিছিলে অশান্তি, অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ সম্বলপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায়]
আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ পেনশন ব্যবস্থার বাইরে। যাঁরা ‘এমপ্লয়েড’, অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে কোনও না কোনওভাবে জড়িত, তাঁরাও অনেক সময় পেনশনের অন্তর্গত নন। সুতরাং, সব দিক মাথায় রেখে, অল্প বয়স থেকে রিটায়ারমেন্টের কথা ভাবা উচিত। পরিণত বয়সে শুরু করায় অনেক কিছু হারাতে হবে, যেমন অনেকেই হারিয়েছেন দেরিতে শুরু করে। জানেনই তো, ভারতীয়দের গড় আয়ু বাড়ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে, সব মিলিয়ে আমরা অনেক বেশি দিন বাঁচছি। স্বাধীনতা পাওয়ার সময় যা গড় আয়ু ছিল, আজ তা অনেকটাই বেশি। এদিকে জীবনযাত্রা এখন অন্যরকম, বাড়ছে মূল্যবৃদ্ধির হারও। এই সমস্ত কথা বলছি কারণ রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিংয়ের নেপথ্যে এই সমস্ত কিছুই কাজ করছে। জীবনের গোড়া থেকে, মানে চাকরি বা ব্যবসা, যাই-ই করুন, প্রথম থেকেই সঞ্চয়ী হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। আপনার সঞ্চয়ের কৌশলের একটি অংশ যেন রিটায়ারমেন্টের জন্য নির্দিষ্ট করা থাকে। এই প্রসঙ্গে মনে রাখুন যে, ভাল বিনিয়োগ পরামর্শদাতার সহযোগিতা পাওয়ার চেষ্টায় থাকুন। কেবলমাত্র সঞ্চয় করলেই চলবে না। সঠিকভাবে লগ্নির প্রয়োজন যে আছে, তা আর বুঝিয়ে বলতে হবে না। লগ্নির বিষয়ে আমার কয়েকটি নির্দিষ্ট বক্তব্য আছে, এক এক করে বলে রাখি।
[আরও পড়ুন: যুবকের গোপনাঙ্গে কামড়ের জের! ক্ষুব্ধ জনতার পিটুনিতে প্রাণ গেল পিটবুলের]
- নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিন। নিজের ‘ইনভেস্টমেন্ট গোল’ যেন ঠিক সময়ে আয়ত্তে আসে, লক্ষ্যপূরণ হয়। তা না হলে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তৈরি থাকুন।
- অবশ্যই ডাইভারসিফাই করুন নিজের সাধ্যমত। বিভিন্ন অ্যাসেট ক্লাসে নিজের সম্পদ ছড়িয়ে দিন, তাতে কিছুটা সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।
- ধীরে ধীরে বড় মাপের সম্পদ গড়ে তুলুন। হঠাৎ লটারি পাওয়া ব্যতিক্রমী মানুষ সচরাচর দেখা যায় না। আমরা সকলেই ধারাবাহিকভাবে টাকা জমিয়ে, লগ্নি করে বড় কর্পাস গড়ে তোলার চেষ্টা করি, তাতেই মঙ্গল।
- বিশেষভাবে যদি রিটায়ারমেন্টের কথা বলি, তাহলে জেনে রাখুন, অবসরের প্রাক্কালে কতটা সম্পদ থাকলে ভাল হয়, তা বোঝার চেষ্টা করুন। সেইমতো পরিকল্পনা করুন, বিনিয়োগের ধঁাচ ঠিক করুন।
- জানা কয়েকটি কৌশল মেনে চলুন। ‘সিপ’ করুন, দরকার হলে ‘এসডব্লুপি’ (সিস্টেম্যাটিক উইথড্রয়াল প্ল্যান) চালু করুন অবসর নেওয়ার পর। সব মিলিয়ে আপনার স্ট্র্যাটেজি যেন সহজ এবং সোজা হয়।