এক গুচ্ছ কোনও কিছুর মধ্যে থেকে নিজের জন্য সঠিকটি বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া সব সময়ই সময়সাপেক্ষ এবং কঠিন। ফান্ডও তার ব্যতিক্রম নয়। কোন কোন দিক দেখে নির্বাচন করবেন, তার তালিকা দীর্ঘ। তবে যাই হোক না কেন, আগের ইতিহাস বা পারফরম্যান্স দেখে যেন কোনওভাবেই প্রভাবিত হবেন না। পাস্ট পারফরম্যান্স কখনওই একমাত্র নির্ধারক নয়। পরামর্শ দিলেন শৈবাল ব্যানার্জি।
ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চাই। কিন্তু এই এত ফান্ডের মধ্যে থেকে কোনগুলি বেছে নেব? কীভাবেই বা ঝাড়াই-বাছাই করা উচিত?
প্রায় সিকি শতাব্দী ধরে মিউচুয়াল ফান্ডই আমার পেশা এবং নেশা। আর এত বছরের মধ্যে যে প্রশ্নটি সব থেকে বেশি বার আমার সামনে বিভিন্ন মানুষ রেখেছেন, তা হল ফান্ড নির্বাচন সংক্রান্ত। তঁাদের প্রতে্যকের জন্য যে কথাটি অামি বার বার বলি, এবারও তাই-ই বলব। আরও একবার। কোনও একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রতিটি মানুষের জন্য খাটে না। তাই ‘ইউনিভার্সাল’ কোনও সুরাহা, বা সর্বজনগ্রাহ্য একমাত্রিক কোনও ধারণা এখানে খাটবে না।
মূল প্রসঙ্গে আসি। আমাদের প্রতে্যকের চাহিদা আলাদা। যা আমার জন্য ভাল, তা অাপনার জন্য যে সঠিক হবে তার স্থিরতা নেই। অবশ্যই নিজের রিস্ক প্রোফাইল-মাফিক লগ্নি করতে হবে, নচেৎ রিটার্ন কমবে। ‘টাইম হরাইজন’ বুঝে, ফান্ড ম্যানেজারের রেকর্ড দেখে (যদিও ‘পাস্ট পারফর্ম্যান্স’ অনেক সময়ই ভুল পথে নিয়ে যায় অামাদের), নির্দিষ্ট ফান্ডগুলির পোর্টফোলিও পরীক্ষা করে লগ্নির সিদ্ধান্ত নেওয়াই ঠিক হবে বলে আমি মনে করি।
এই প্রসঙ্গে কয়েকটি বিশেষ পয়েন্ট তুলে ধরছি।
[আরও পড়ুন: বগটুইয়ের ভাদু শেখ খুনে অভিযুক্ত ছোট লালনের মৃত্যু]
(ক) অাপনার হাতে ৭-১০ বছর সময় অাছে কি? থাকলে নির্দ্বিধায় ইকু্যইটি ফান্ড বেছে নিন। শর্ট টার্মে ‘ভোলাটাইল’ থাকবে বটে, তবে লং টার্মে অাপনাকে ভাল রিটার্ন এনে দিতে পারবে।
(খ) পঁাচ বছরের কম সময় আছে? তাহলে হাইব্রিড ফান্ড পরখ করুন, এতে ইকু্যইটি ও ডেট, দুই-ই পাবেন। বা শর্ট টার্ম ডেট ফান্ডও বেছে নিতে পারবেন।
(গ) ফান্ড ম্যানেজমেন্ট টিম নিয়ে খেঁাজ করুন। এই শর্তটি বেশ জরুরি। প্রতিটি ম্যানেজার নিজের স্টাইল মেনে চলেন, তঁার বিশেষ শৈলী অনুযায়ী ‘স্টক সিলেকশন’ করা হয়। কিন্তু অন্তত ৫-৭ বছর যদি না ম্যানেজ করেন, তাহলে আমরা বুঝব কী করে যে, তঁার নিজস্বতা কতটুকু প্রাসঙ্গিক?
[আরও পড়ুন: মশারি খাটিয়ে ভোরের ট্রেনে যাত্রা! কড়া ব্যবস্থা নেবে রেল]
(ঘ) মনে করুন, ফান্ড ম্যানেজার কেবল ‘মোমেনটাম স্টক’ নিয়ে ব্যস্ত। তাই তঁার ধরন-ধারণ বেশ ব্যতিক্রমী। অন্যান্যদের তুলনায় তিনি শর্ট টার্মে, চলতি স্টকে বড় রিটার্ন খুঁজছেন। সেখানে সাবেকি লগ্নিকারী একটু হলেও সতর্ক থাকবেন।
(ঙ) অাবার মনে করুন আপনি ধীরে সুস্থে বড় ইনিংস খেলার পক্ষপাতী। সেখানে স্টাইল অন্য রকম হবে, সেই বুঝে ফান্ড নির্বাচন করা দরকার।
এবার পুরনো রেকর্ড নিয়ে আলাদাভাবে কিছু বলি। দেখুন, রেকর্ড দেখেই অভিভূত হবেন না। পুরনো অভিজ্ঞতার দাম নেই, তা বলছি না কিন্তু, তবে বহুবার দেখেছি স্রেফ ৩-৫ বছরের পারফর্ম্যান্স দেখেই ইনভেস্টররা ফান্ড কিনে নিয়েছেন। সর্বদাই যে তঁারা ঠিক করেছেন, তা নয়। এই প্রসঙ্গে বলা উচিত যে মার্কেট নিয়ন্ত্রক সেবিও জানাচ্ছেন যে পাস্ট পারফর্ম্যান্সই একমাত্র নির্ধারক নয়–আর লগ্নিকারী যেন সর্বদা এই বিষয়টি মনে রাখেন।
ফান্ড ম্যানেজারদের বিভিন্ন মার্কেট সাইকেলের মধে্য দিয়ে যেতে হয়। তঁারা সর্বশক্তিমান নন, ভুলভ্রান্তি হয়েই থাকে। স্টক বেছে নেওয়া খুব সোজা কাজও নয়, ভুলবেন না। তবে পুরনো রেকর্ড দেখে ভবিষ্যতের ‘উইনার’ বেছে নেওয়ার মধে্য এক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা লুকিয়ে অাছে। তার শিকার হবেন না, এমনই অাশা করি আমরা।
একটি প্র্যাকটিক্যাল ক্যাল পরামর্শ দিই। ‘রোলিং রিটার্নস’ খুঁজে দেখুন, সহজেই এই সম্বন্ধে তথ্যাবলী পেয়ে যাবেন। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট পারফর্ম্যান্স দেখার থেকে রোলিং রিটার্নসের হিসাব অনেক বেশি উপকারী, বা প্রাসঙ্গিক হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য। বিভিন্ন মার্কেট সাইকেলে কেমন করেছে অাপনার ফান্ড, কীভাবে বেঞ্চমার্কের তুলনায় সেটি রিটার্ন অানার চেষ্টা করেছে, তা বুঝতে পারবেন।
সহজ কথা সহজভাবে বলতেই পছন্দ করি অামি। সব সময় নিজে নিজেই সব কিছু করার চেষ্টা করবেন না, এ যুগে তা হয় না। সাধারণভাবে বললে অাপনার দরকার ভাল পরামর্শ দেওয়ার, সাহায্যকারী কোনও উপদেষ্টা। টাকাপয়সা নিয়ে অালোচনা সকলের সঙ্গে করা যায় না, এ কথা নিশ্চয় মানবেন। তাই উপদেষ্টার খেঁাজ করুন, তিনি আপনার পাশে থাকলে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হবে না। অন্যভাবে বললে, ভাল পরামর্শদাতাই অাপনার জন্য ‘behaviour modifier’ হিসাবে অাবির্ভূত হতে পারেন। স্পষ্টভাবে বললে, তঁার কথাতেই সঠিক পথে চালিত হবেন অাপনি। মার্কেটের উপর আপনার বিশ্বাস বাড়বে। এই কঠিন পৃথিবীতে তার দাম অনেক।