সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান তথা সিপের কার্যকারিতা আজ সর্বজনবিদিত। বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা হামেশাই সিপ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে সিপ করতে গেলেও আনুষঙ্গিক কয়েক দিকে নজর দিতেই হয়। যেমন পরিকল্পনা করে এগনো, পেশাদার পরামর্শদাতা খুঁজে নিয়ে তাঁর পরামর্শমতো চলা, ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত থাকা প্রভৃতি। বিস্তারিত বিপ্লব আচার্যর কলমে।
বিনিয়োগ করা কি অভ্যাসে পরিণত করতে পেরেছেন? এই যে প্রশ্নটি দিয়ে আমার লেখা শুরু করলাম, তা আবার পড়ুন। উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে অভিনন্দন জানাচ্ছি, কারণ ইনভেস্টমেন্ট করা অন্যতম ভাল অভ্যাস বলে আজ সকলেই মনে করেন। তবে উত্তর যদি ‘না’ হয়, তাহলে বলব–আজ শুরু করুন, দ্বিধা করবেন না। নিজের সঙ্গতি যদি কম হয়, তা-ও নয়। স্বল্প পরিমাণ দিয়ে শুরু করে তো বড় তহবিল গড়ার উদাহরণ স্থাপন করা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়।
এত পর্যন্ত এসে আরও একটি কথা বলি। লগ্নি করা অভ্যাস করুন ঠিকই, তবে কিছু নিয়ম মেনে তা করবেন। নিয়মিত লগ্নি (যেমন মিউচুয়াল ফান্ডে সিপ করা), ঠিক সময়ে প্রিমিয়াম জমা দেওয়া বিমার খাতে, পোর্টফোলিও সামগ্রিকভাবে কেমন রিটার্ন দিচ্ছে তা পরীক্ষা করা–এই জাতীয় কার্যকলাপ করতে ভুলবেন না। শুধুমাত্র বিনিয়োগই করে গেলেন, তার ফল কী দঁাড়াল, তা পরখ করলেন না–এমন যেন না হয়। পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলি নিয়ে সজাগ-সতর্ক থাকতে হবে, এ কথা বলাই বাহুল্য।
[আরও পড়ুন: রামমন্দির উদ্বোধনে থাকবেন আডবাণী, দায়িত্ব নিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ]
একটু আগে সিপ নিয়ে যা লিখলাম, দেখুন। এই ব্যাপারে ইদানীং অনেকেই উৎসাহী। প্রতি মাসে প্রায় সতেরো হাজার কোটি টাকা সিপের মারফত মিউচুয়াল ফান্ডে ঢুকছে বলে খবরে প্রকাশ। টাকার অঙ্কটি কম নয়, তবে আমি বিশ্বাস করি যে এটি হিমবাহের চূড়া। আরও বহু কিছু দেখতে পারব আমরা আগামি দিনে। কারণও তো পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে–ইনভেস্টররা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছেন সিপের উপযোগিতা ঠিক কোথায়। আর কী করলে মিউচুয়াল ফান্ডের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পেতে পারেন তঁারা, তাও বেশ বুঝে গিয়েছেন সকলে।
বাস্তবিক, নিয়মিত লগ্নি যদি করতে হয়, তাহলে ভাল ফান্ড ম্যানেজার খঁুজে নিয়ে, নিজের প্ল্যানমাফিক বিনিয়োগ করতে থাকুন। ভারতীয় সিকিউরিটিজ মার্কেটে যে প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তাকে মান্যতা দিন। রিটেল লগ্নিকারীর কাছে সিপ তাই অব্যর্থ এক অস্ত্র।
আমি এরই সঙ্গে আলাদা করে জানাতে চাই স্বাস্থ্য বিমার কথা। বোঝাই যাচ্ছে, হেলথ ইনসিওরেন্স আজকের দিনে অপরিহার্য। তাই স্বাস্থে্যর জন্য আলাদা চিন্তাভাবনা করা দরকার। নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্য বিমার খাতে কভারেজ যেন যথেষ্ট থাকে, মনে রাখবেন। ‘যথেষ্ট’ ঠিক কী? আপনি জিজ্ঞাসা করতেই পারেন। কতখানি কভারেজ পেল তা যথাযথ হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে? এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে গেলে আপনাকে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের খরচাপাতির দিকে নজর দিতে হবে। সাধারণ মানের চিকিৎসাই বলুন বা স্পেশালিটি হাসপাতালের জটিল অপারেশন, রোগ-ব্যধির ট্রিটমেন্ট আজকাল বেশ খরচসাপেক্ষ। অনেকের কাছে তা শুধুমাত্র ব্যয়বহুল নয়, বহন করাও দুঃসাধ্য। এই সমস্ত ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিমা খুব জরুরি, বিকল্পহীন বলা যেতে পারে।
[আরও পড়ুন: বিলকিস কাণ্ডে ৯ অভিযুক্ত নিখোঁজ! তালা ঝুলছে গুজরাটের গ্রামের বাড়িতে!]
সব শেষে বলি, পরিকল্পিত উপায়গুলি মেনে চলুন, প্ল্যানমাফিক চললে আপনারই সুবিধা হবে। তবে জীবনযাত্রায় হঠাৎ পরিবর্তন এলে, পুরোনো প্ল্যান বদলে নতুন উদ্ভাবন করতে ভুলবেন না। আজকের দুনিয়ায় কত রকম আপদ-বিপদ হঠাৎ করে চলে আসতে পারে, পরিকল্পিত বিনিয়োগগুলি ভেস্তে দিতে পারে। যেমন ধরুন, হঠাৎ অবসর নিতে বাধ্য হওয়া। এই সব পরিস্থিতি যদি সতি্যই চলে আসে, তাহলে পুরোনো ধঁাচের লগ্নি আর কার্যকরী হবে না। হয়তো তখন ফিক্সড ইনকাম জাতীয় ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে।
তখন মার্কেট-সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা থেকে দূরে থাকতে চাইবেন। যাঁরা তুলনায় অল্পবয়সি, তঁারা রিস্ক নিতে পিছপা হবেন না, এ তো বোঝাই যাচ্ছে। আর তেমন কম বয়সি যদি আপনি না হন, আর প্রধানত ভোলাটিলিটি এড়িয়ে যেতে চান, তাহলে আপনার কৌশল অন্য ধরনের হবে। কীভাবে অ্যাসেট অ্যালোকেশন করবেন, তা ঠিক করুন পেশাদার পরামর্শদাতার সহায়তায়। ঠিক সময়ে ঠিক অ্যাসেটের মিশ্রণ দরকার। না হলে রিটার্নে তার প্রতিফলন দেখতে পাবেন, নিজের প্ল্যান পুরোদস্তুর ফলপ্রসূ হবে না। দিনের শেষে সাধারণ মানুষের চাই ভাল রিটার্ন, যথাযথ উপার্জনের সুযোগ। এর সঙ্গে দরকার মেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োগ। এই সবই পেতে পারেন যদি বিনিয়োগের অভ্যাসগুলি রপ্ত করে নেন।