বদলে যাওয়া আজকের এই ভারতবর্ষের উত্থানের পিছনে রয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের অগ্রগতি। বিশেষ করে বিনিয়োগকারীদের কাছে উৎপাদন ক্ষেত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু যাঁরা নবীন ইনভেস্টর, সদ্য পা রাখতে চলেছেন লগ্নির দুনিয়ায়, তাঁরা কীভাবে এগোলে সর্বোচ্চ লাভবান হতে পারেন এই ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে? লিখলেন পার্থপ্রতীম চট্টোপাধ্যায়।
‘ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া’–আজকের দিনে সবচেয়ে বড় আলোচ্য বিষয়। বিশ্ব মানচিত্রে ভারতবর্ষ পেয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। বিশ্বের তাবড় তাবড় বিনিয়োগকারীদের চোখ এখন ভারতবর্ষ। আর তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর’। এখন সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক কেন, এখন এই ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর হয়ে উঠেছে বিনিয়োগকারীদের ‘মি. ডিপেন্ডেবল’।
জিডিপি-র মধ্যে ‘ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর’ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভারতবর্ষ বিভিন্ন পণ্যের জন্য আমদানি-র উপর নির্ভরশীল। নিত্য প্রয়োজনীয় থেকে বিলাসবহুল, সব ধরনের পণ্যের জন্য বিদেশই ছিল আমাদের ভরসা। ১৯৯১ সালের খোলা অর্থনীতির হাওয়া লাগে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের নৌকার পালে। তারপর নৌকা এগিয়ে চলে ধীর লয়ে, নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে। এই দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন সরকার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছে নৌকাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। নৌকার পালে দমকা হাওয়া লাগে ২০১৭ সালের পর। সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ পলিসির গতিকে আরও দ্রুতগামী করে তোলে। আজকের দিনে ‘শেয়ার অফ ম্যানুফ্যাকচারিং ভ্যালু অ্যাডেড (এমএভি) ইন জিডিপি’ প্রায় ১৫%।
[আরও পড়ুন: শুধু মন্দিরই দেবে কর! কংগ্রেসের কর্নাটকে ‘হিন্দু বিরোধী’ বিল আটকে দিল বিজেপি]
এখানে আমরা পিছনে ফেলেছি রাশিয়া, ব্রাজিল, আমেরিকার মতো দেশকে। ভারতবর্ষের বর্তমান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বিচার করলে এই রেশিও আগামিতে আরও ত্বরান্বিত হবে। এক্ষেত্রে সহায়ক হতে হবে সরকারের বিভিন্ন নীতি। করছাড়, এসইজেড–এই সমস্ত ক্ষেত্রের সিদ্ধান্ত ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ হতে হবে। এছাড়া সারা বিশ্বের ‘চায়না প্লাস ওয়ান স্ট্র্যাটেজি’ ভারতবর্ষে উৎপাদন শিল্পকে আরও উজ্জীবিত করবে।
এটা অনস্বীকার্য যে উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগ আমাদের কাছে এখন অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীর প্রশ্ন, কীভাবে ভারতবর্ষের এই অন্যতম প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন সেক্টরে অংশগ্রহণ করবেন? এ ব্যাপারে আপনি পছন্দ করতে পারেন বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানির ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের বিভিন্ন স্কিমে। বিনিয়োগ করবেন একেবারে নয়, অল্প অল্প করে। বাজারের সাময়িক পতন এই সেক্টরের বিনিয়োগের ভাবনাকে আরও উজ্জীবিত করবে। বাজারের পতনে বিনিয়োগকারী হিসাবে আপনি সুযোগ গ্রহণ করবেন। আর ডিরেক্ট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের জন্য ১০-১২টি বিভিন্ন ধরনের শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারেন। লক্ষ্য রাখবেন, পোর্টফোলিও যেন ডাইভারসিফায়েড হয়। স্টক এবং ফান্ড সিলেকশনের ব্যাপারে আপনি আপনার বিনিয়োগ পরামর্শদাতার সহায়তা নিতে পারেন। সাধারণ বিনিয়োগকারী হিসাবে আপনার পোর্টফোলিওতে ৫% থেকে ১০%-এর একটি অংশ দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে উৎপাদন শিল্পের উপর বিনিয়োগ করতে পারেন।
[আরও পড়ুন: ‘ডার্ক ওয়েবে অবৈধ লীলা খেলা চালায় সুপারস্টাররা! কেন্দ্র পদক্ষেপ করুক’, কঙ্গনার নিশানায় কারা?]
ওরা কাজ করবে আপনার জন্য, ভারতবর্ষের জন্য। লাভবান হবে দেশ আর বিনিয়োগকারী হিসাবে আপনিও। দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট এই সেক্টরে আলফা জেনারেট করবে, সেটা আশা করা যেতে পারে। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হবে সব কিছুর, উৎপাদন শিল্প পরিবর্তিত হবে নতুন রূপে। আর এই শিল্পের বিশ্বকর্মারা ভারতবর্ষে উৎপাদন শিল্পকে করবে বিশ্বজনীন।
লেখক ডিরেক্টর, পেরেন্টস ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড
ইমেল : mail4parthapc@gmail.com