স্মল ক্যাপে লগ্নি কি সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে? বিশেষ করে ঝুঁকি নিতে পিছপা হন না যাঁরা, তাঁদের জন্য? উত্তরের খোঁজ দিচ্ছেন ওয়েলম্যাক্স ক্যাপিটালের কর্ণধার সুজন দাস। প্রশ্ন করেছিলেন নীলাঞ্জন দে।
প্রথমেই জিজ্ঞাসা করি, কেন স্মল ক্যাপে আগ্রহী হবেন লগ্নিকারীরা? ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক, এমন লগ্নিকারীরা প্রধানত স্মল ক্যাপে কি লগ্নি করতে পারেন? উদাহরণ দিয়ে বলতে গেলে তাঁরা কি এই ধরনের স্টক দিয়ে তাঁদের পোর্টফোলিওর ৫০ শতাংশ গড়তে পারেন?
গোড়াতেই সেবির সংজ্ঞা মনে করিয়ে দিই। ‘স্মল ক্যাপ’ হল টপ ২৫০-র পরে থাকা যে কোনো কোম্পানি, মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন অনুসারে। ভারতে স্মল ক্যাপের গড় মার্কেট ক্যাপ (২০২৪ সালের আনুমানিক হিসাব) ৫,০০০-১৫,০০০ কোটি টাকার মধ্যে। অনেক স্মল ক্যাপ পোর্টফোলিওতে এমন কোম্পানি থাকে যাদের মার্কেট ক্যাপ ৩,০০০ কোটি টাকারও কম, আবার কোথাও ১০,০০০ কোটির কাছাকাছিও হয়।
ধরুন, যদি কোনো স্মল ক্যাপ ফান্ডে ৫০টি স্টক থাকে, এবং তাদের মার্কেট ক্যাপ গড়ে হয় ৭,০০০ কোটি টাকা, তাহলে সেই ফান্ডের গড় মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন হবে ৭,০০০ কোটি টাকা। সোজা অঙ্ক। স্টক ক্যাটাগরি ভিত্তিক গড় মার্কেট ক্যাপ দেখুন। একটি সূত্র বলছে, ছয় মাস (যৌথ) হিসাব করলে, ২৫১-তম স্টকের গড় বাজার মূল্য ছিল ২৭,৪৮০ কোটি টাকা। তার তুলনায় ছোট ক্যাপ সেক্টরের ৫০০-তম কোম্পানির গড় মাপ ছিল ৯,১৮৮ কোটি টাকা। এই সংখ্যা সময়ের সঙ্গে বদলাবে, বাজার ওঠানামা করলে কোম্পানির ভ্যালু কমে বা বাড়ে। দেখবেন, স্মল ক্যাপ ফান্ডগুলোর গড় মার্কেট ক্যাপ মিডক্যাপ বা লার্জ ক্যাপ ফান্ডের চেয়ে অনেকটাই কম হয়। এত কিছু বলার কারণ, স্মল ক্যাপে গ্রোথ পাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট।
কিন্ত সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দেখুন। স্মল ক্যাপ ইনডেক্স গত এক বছরে নেগেটিভ রিটার্ন এনেছে...
ঠিক। তবে এও বলতে হয়, সেই একই ইনডেক্স পাঁচ বছরে ৩০% দিতে সক্ষম হয়েছে। গত এক বছরে রিটার্ন নেগেটিভ হলেও, এর মানে এই নয় যে এখন বিনিয়োগ করা খারাপ সিদ্ধান্ত হবে। বরং এখনই হতে পারে বিনিয়োগের জন্য একটা ভালো সুযোগ। নিচে কারণগুলো দিচ্ছি:
১. কম দামে কেনার সুযোগ
২. লং টার্মে ভালো রিটার্ন
৩. ইকোনমির পুনরুদ্ধারের সঙ্গে জড়িত
৪. ডাইভারসিফিকেশন ও এক্সপার্ট ম্যানেজমেন্ট
এর সঙ্গে জানিয়ে রাখি যে অধিকাংশ স্মল ক্যাপ ফান্ড তাদের বিনিয়োগকে এমন কোম্পানির দিকে টেনে নিয়ে যায় যেগুলোর মার্কেট ক্যাপ উপরের সীমার কাছাকাছি (তাহলে লিকুইডিটির সুবিধা থাকে)। মনে রাখবেন, স্মল ক্যাপ সেক্টরের সমগ্র মার্কেট ক্যাপ ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বেড়েছে, ১৭ লক্ষ কোটি থেকে ৯২ লক্ষ কোটি হয়েছে। মানে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি দেখেছি আমরা।
অনেক স্মল ক্যাপ ফান্ডের পোর্টফোলিওর গড় বাজার মূল্য (market cap) হতে পারে কেবল কয়েক হাজার কোটি টাকার দিকে, যেমন ৫,০০০-২০,০০০ কোটি টাকা। যেহেতু অনেক ফান্ড ২৫১–৫০০ র্যাঙ্কের কোম্পানিগুলিতেই বেশি অ্যালোকেশন করে, তাই গড় ক্যাপ এই রেঞ্জের কাছাকাছি হতে পারে।
রিস্কের প্রসঙ্গে আসি। স্মল ক্যাপ ফান্ডে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কেন বিনিয়োগ করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
খুব জরুরি কথা। সংক্ষেপে কারণগুলি জানাই।
- উচ্চ বৃদ্ধির সম্ভাবনা - ছোট কোম্পানিগুলো সাধারণত উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে। তাদের সামনে বড় হওয়ার জায়গা অনেক বেশি, তাই যখন ব্যবসা সফল হয়, তখন লাভের হারও বড় কোম্পানির তুলনায় অনেক দ্রুত বাড়ে।
- বাজারে ‘আন্ডার-ভ্যালুয়েশন’ নতুন সুযোগ দিতে পারে - অনেক ছোট কোম্পানি এখনো বাজারে সম্পূর্ণভাবে চিহ্নিত বা মূল্যায়িত হয়নি, তাই কম দামে ভাল কোয়ালিটির শেয়ার পাওয়া যায়। যখন এগুলোতে ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা পরে ঢোকে, তখন দাম দ্রুত বাড়ে।
- ডাইভারসিফিকেশনের সুবিধা - পোর্টফোলিওর একটা অংশ ছোট ক্যাপে রাখলে, তা বিভিন্ন মার্কেট সেগমেন্টে ছড়িয়ে ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। সব সম্পদই বড় কোম্পানিতে রাখা ঠিক নয়।
- দীর্ঘমেয়াদে ভাল রিটার্নের সম্ভাবনা - ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, ছোট ক্যাপ ফান্ডগুলি ৭–১০ বছরের সময়সীমায় লার্জ ক্যাপ ও মিড ক্যাপ ফান্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে এই রিটার্ন আসে যদি যথেষ্ট সময় দিতে পারেন। কোনও প্রতিশ্রুতি নেই কিন্ত।
ডিসক্লেমার: অতীতের পারফরম্যান্স ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেবে না। পরিচালনার খরচ ও স্ট্র্যাটেজি দেখে নেওয়া জরুরি। খুব ছোট আকারের ফান্ড বেশি অস্থিতিশীল হতে পারে। কেবল একটা ফান্ডে সব টাকা না দেওয়া ভালো, একাধিক ভাল ফান্ডে ভাগ করে রাখা উচিত। নিয়মিত রিভিউ ও রি-ব্যালেন্স দরকার।
