লগ্নিকারীর বৈশিষ্ট্য যেমনই হোক না কেন, কিছু বৈশিষ্ট্য সকলের জন্যই উপকারী। যেমন কোর পোর্টফোলিও। প্রত্যেকেরই একটি কোর পোর্টফোলিও থাকা জরুরি। লগ্নিকারীদের উচিত সেই কথা মাথায় রেখেই কর্পাস গঠন করা। বিস্তারিত জানালেন ড. উৎপল মুখার্জি।
কয়েক বছর হল রিটায়ার করেছি। অনেক পেশাদার দায়দায়িত্ব সামলে, একাধিক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে, নিজের দেশে নতুন উদ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে ‘এনট্রেপ্রেনর’ আমি। টাকার মূল্য খুব ভালই বুঝি; যে কোনও মানুষের জন্য আর্থিক স্বাবলম্বন দরকার, এ কথা আমি অন্তর থেকে বিশ্বাস করি। কখনও লোন নিইনি, এবং আজও ধারকর্জ নেওয়ার বিরুদ্ধে আমি। এতদিন আস্থা রেখেছিলাম স্থায়ী আমানতে। ইদানীং মার্কেটের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছি অবশ্য, স্টকের মাধ্যমে নয়, মিউচুয়াল ফান্ডের উপর বিশ্বাস রেখে। আমার ধারণা বাজার মধ্য বা দীর্ঘ মেয়াদে যথাযথ রিটার্ন আনতে পারবে।
কী ধরনের ফান্ড আমার পছন্দ? সহজভাবে বলি, যথেষ্ট ডাইভারসিফায়েড না হলে আমার অসোয়াস্তি হয়। ভাবি, ইনভেস্টমেন্ট ইউনিভার্স যদি বড় মাপের না হয়, তাহলে স্টক সিলেকশন যথাযথভাবে নাও হতে পারে। অতএব সাধারণ ইনভেস্টর হিসাবে আমি চাই আমার ফান্ড ম্যানেজাররা ঠিকঠাক শেয়ারে আমার টাকা খাটান এবং সব সময়ই তা যেন ওপেন-এন্ড হয়। একদিনের জন্যও লক-ইন থাকে, এমন শর্ত আমার মানতে অসুবিধা হবে।
বুঝতেই পারছেন আমি সিনিয়র সিটিজেন। সিনিয়র বটে, তবে যথেষ্ট কর্মঠ এবং উদ্যমী। খরচাপাতি যা করতে হয় তা আমার কাজকর্ম বা ট্রাভেল, এর সঙ্গেই প্রধানত জড়িত। হঁ্যা, ওষুধের জোগান যেন সবসময় ঠিক থাকে, না হলে অসুবিধা হবে। এই রেগুলার, সাধারণ খরচ করার জন্য যাতে যথেষ্ট লিকু্যইডিটি না থাকলে চলবে না।
ডিপোজিট ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই আছে, তাতে ধারাবাহিক (এবং জানা) রিটার্ন পাওয়া যায়। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, এর জন্য যথেষ্ট সতর্ক থাকা উচিত, কারণ আমার কাছে স্টেবিলিট এবং সেই জনিত সুরক্ষা খুব জরুরি। মনে রাখতে হবে, কিছু “non-essential” খরচও মাসে মাসে হয়ে থাকে। সকলেরই কমবেশি এমন হতে পারে, অনেকেই লাইফস্টাইল সংক্রান্ত খরচ বহন করেন, তঁাদের উৎসাহ দিতে চাই আমি।
প্রয়োজনে পেশাদার পরামর্শদাতার সঙ্গে কথা বলতে ভুলবেন না আপনারা। তবে একই সঙ্গে আমার এই পয়েন্টগুলি মন দিয়ে পড়বেন –
আপনার সম্পদের একটা অংশ দীর্ঘস্থায়ী হলে ভাল। যদি রিটায়ারমেন্টের কাছাকাছি এসে বোঝেন, যথেষ্ট অর্থ হাতে থাকছে না, তাহলে তো বিপদ। তাই আগেভাগেই সতর্ক হোন, সঞ্চয় করা অভ্যাস করুন। তবে তা যেন লংটার্মের কথা ভেবে করা হয়।
শর্টটার্মের কোন পরিকল্পনা আছে? হয়তো এখনই (বা কয়েক বছরের মধে্য) কিছু খরচ করার দরকার পড়বে। সেই সংক্রান্ত পরিকল্পনা যেন আলাদা হয়, দীর্ঘমেয়াদী প্ল্যানের সঙ্গে একত্রে না হয়ে যায় তা দেখা দরকার।
কেউ কি আর্থিকভাবে নির্ভর করেন আপনার উপর? যদি তেমন কেউ থাকেন, তাহলে তঁার জন্য কী পরিকল্পনা করেছেন? আপনার কিছু হলে তঁার বিলক্ষণ অসুবিধা হবে, তাই আপনার নিজের প্ল্যানের সঙ্গে তঁাকেও জুড়ে দিতে হবে। বিমা সম্বন্ধে এই বিষয়টি বেশ প্রযোজ্য।
একটা 'কোর পোর্টফোলিও' থাকা বাঞ্ছনীয়। এই বিষয়টি অনেকে অনুধাবন করতে পারেন না, দেখতে পাই। এমন একটা কর্পাস তৈরি করার চেষ্টা করুন যেটা (এমার্জেন্সি ব্যতীত) অক্ষুণ্ণ থাকবে, হাত পড়বে না। এই কর্পাস মূলত আপনার পোর্টফোলিওটি শক্তপোক্ত করবে, তাতে আপনার আত্মবিশ্বাস অটুট থাকবে।
'কোর' যদি বাড়ে, তাহলে আশেপাশের বিনিয়োগগুলি সম্বন্ধে রিস্ক নিতে হয়তো অসুবিধা হবে না।
কোর পোর্টফোলিও
ক) বেশি রিস্ক নেওয়ার নয়
খ) ধীরে বাড়ুক, কিন্তু অক্ষুণ্ণ থাকুক
গ) এখানে যা উদ্বৃত্ত তৈরি হবে, তা
থেকে সহযোগী লগ্নি করা সম্ভব হবে
সহযোগী লগ্নি
ক) রিস্ক নিতে পারেন, তবে ক্ষমতা বুঝে
খ) দ্রুত বাড়তে পারে, এমন বিনিয়োগ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করুন
গ) শর্ট টার্ম (অথবা একটু বাড়িয়ে মধ্য মেয়াদী) প্রফিট যদি ঘরে তুলতে পারেন, তাহলে অাপনারই লাভ
(লেখক প্রাক্তন সিনিয়র এনভারনমেন্টাল রিসার্চার, মিনিস্ট্রি অফ এনভায়রনমেন্ট, কাতার গভর্নমেন্ট)
