সাধারণ মানুষ এই মুহূর্তে কীভাবে লগ্নি করবেন? শেয়ার মার্কেটে থাকতে চাইলে মোট অ্যালোকেশনের কতখানি স্টকে দেবেন? আর একইসঙ্গে যদি ফিক্সড ইনকামের কথা ভাবেন, সেখানে কত অংশ রাখবেন? প্রশ্নের উত্তর দিলেন দিলীপ দে, কর্ণধার, লক্ষী ফিনান্স। নীলাঞ্জন দে'র সঙ্গে আলোচনা
এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, অ্যালোকেশনের কৌশল কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
উঃ সাধারণত যা দেখতে পাচ্ছি তার ভিত্তিতে বলি। স্টক মার্কেটে যে নতুন গতি এসেছে তা বোঝা যাচ্ছে। বিভিন্ন সেক্টরে বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্টক, এর মধে্য মিড ক্যাপ চোখে পড়ার মতো, ইনভেস্টরের সামনে উপস্থিত। যাঁরা শেয়ারে লগ্নি করতে পিছপা নন, তাঁরা খতিয়ে দেখতে পারেন। সরাসরি না করতে চাইলে, ফান্ড ম্যানেজারদের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পরামর্শ দেব আমি। ঠিক কতখানি স্টকে রাখবেন, তা অবশ্য ইনভেস্টরের রিস্ক প্রোফাইল দেখে ধার্য করা উচিত। অন্তত পাঁচ-ছয় বছরের জন্য ফান্ডে লগ্নি করার কথা ভাবা দরকার। তবে কিছুটা ফিক্সড ইনকামের জন্য রেখে দিন, তাতে ব্যালেন্স থাকবে, আর কিছুটা নিশ্চিন্ত হতে পারবেন। ফিক্সড ডিপোজিট ছাড়াও বিভিন্ন ভাল ডেবেঞ্চারের বিনিয়োগ করার কথা ভাবুন – তবে হ্যাঁ, ক্রেডিট রেটিং ইত্যাদি পরখ করার কথা ভুলবেন না। রিস্ক নিতে যাঁরা সক্ষম, এবং যথেষ্ট সময় হাতে আছে, এমন ইনভেস্টর ৫০-৭৫% পর্যন্ত স্বচ্ছন্দে ইক্যুইটি ফান্ডে অ্যালোকেট করতে পারেন। এখানে বলে রাখি, আপনাদের পোর্টফোলিওয় যেন বিভিন্ন ধরনের ফান্ড থাকে, তাতে ডাইভারসিফিকেশন ভালমতো হবে। তাই কেবল দু-একটি নয়, কয়েকটি ক্যাটাগরির প্রকল্প বেছে নিতে হবে। তাতে সেক্টর বা থিম্যাটিক ফান্ডও থাকতে পারে যদি পরিস্থিতি অনুকূল হয়।
সেক্টর/থিম ভিত্তিক প্রকল্প তো ঝুঁকিপূর্ণ বলেই চিহ্নিত.....
উঃ হ্যাঁ, তার উত্তরটা নির্ভর করবে ইনভেস্টরের সার্বিক কৌশলের উপর। হেলথকেয়ারে সেক্টরের কথা ধরা যাক উদাহরণ হিসাবে। আপনি তো পুরো সারপ্লাস কেবল হেলথকেয়ারে রাখবেন না, একইসঙ্গে ইনফোটেক বা কনসাম্পশন জাতীয় সেক্টরের কথাও ভাববেন। আর বাজারের গতিপ্রকৃতি বদলালে, আপনার অ্যালোকেশনের স্ট্র্যাটেজিও বদলে দিতে হবে। জানেনই তো রিস্কের ধারণা একমাত্রিক বা স্থায়ী নয়। ইকু্যইটি মাত্রেই রিস্ক থাকবে তবে কৌশলী ইনভেস্টর জেনে বুঝেই তঁার সিদ্ধান্ত নেবেন, এমন আশা করা যায়। উপযুক্ত অ্যাডভাইজারের সাহায্য নেবেন, তাতে যথাযথ সম্পদ বন্টন হবে। এর সঙ্গে এ-ও জানিয়ে রাখি যে খুব স্বল্প দৈর্ঘে্যর জন্য সেক্টর ফান্ডে বিনিয়োগ করার কথা ভাববেন না। মনে করুন আপনি চলতি ট্রেন্ড দেখে কেবল সংকীর্ণ সেক্টর (‘narrow universe’) বেছে নিয়েছেন, একসঙ্গে অনেকটা, অ্যালোকেশন করেছেন। ট্রেন্ডের ধারা যখন বদলে যাবে, তখন বিপদে পড়তে পারেন। অতএব সাবধানে এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
এখন তো নানা ধরনের বিকল্প নিয়ে আসা হচ্ছে, ইনভেস্টরের হাতে বৈচিত্রে্যর অভাব নেই....
উঃ ঠিকই। যেমন ধরুন SIF (স্পেশালাইজড ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড) চলে এসেছে। একাধিক সংস্থা ইতিমধে্য ঘোষণা করেছে এই প্রসঙ্গে। আগামিদিনে বিকল্পের সংখ্যা যে বাড়বে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। নতুন প্রজন্মের পোর্টফোলিও ম্যানেজাররা আসছেন, এ-ও দেখতে পাচ্ছি। সাধারণ মানুষের সামনে অবশ্য মূল প্রশ্নটা থেকেই গেছে – এত বৈচিত্রে্যর মধে্য যথাযথ প্রকল্পগুলো কীভাবে চিহ্নিত করবেন তাঁরা? এই ব্যাপারে আমার বিশেষ কিছু পয়েন্ট আছে, একে একে বলি।
- প্রকল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো ভাল করে বুঝুন। আপনার টাকা কোথায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে – এই বিষয়টি যেন আপনার নজরে থাকে।
- ট্যাক্স নিয়ে সাধারণ নিয়মগুলি জানুন। ক্যাপিটাল গেনস কমবেশি হবেই, সে দিকে আপনার যেন যথেষ্ট খেয়াল থাকে।
- ফিক্সড ইনকাম প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব জরুরি প্রসঙ্গে বুঝেছেন তো? মেয়াদ কত? টার্মের আগে কি প্রিম্যাচিওর এক্সিট করা সম্ভব? তার শর্তগুলি কী? শুধু সুদের হারের উপর নজর রাখবেন না, এটাই আমি বলতে চাইছি।
- প্ল্যান-মাফিক সিপ করতে থাকুন। মাঝে মাঝে রিভিউ করুন আপনার হোল্ডিংসগুলির পারফর্ম্যান্স। যদি প্রফিট বুকিংয়ের সুযোগ নিতে চান, তার জন্য যা দরকার তা করুন। প্রতে্যক দিন ন্যাভ দেখবেন না, তাতে কোনও বিশেষ উদ্দেশ্য সাধিত হবে বলে আমি মনে করি না।
- আপনার রিস্কি অ্যাসেট কী ধরনের? যদি ইকু্যইটি থাকে, তাতে কীভাবে ভাগাভাগি করেছেন? মনে রাখুন, ডাইভারসিফায়েড ইকু্যইটি ফান্ডের বিকল্প নেই। সেই জন্য ফ্লেক্সি ক্যাপ, মাল্টি ক্যাপ জাতীয় শ্রেণীগুলির কথা ভাবুন।
- ইদানিং মাল্টি অ্যাসেট কৌশল জনপ্রিয় হচ্ছে। আমি মনে করি বিভিন্ন অ্যাসেট ক্লাসের সমন্বয় থাকা উচিত। স্টক বা বন্ড ছাড়াও প্রেশাস মেটালস বা অন্য কমোডিটি যদি আপনার পোর্টফোলিওয় থাকে, তাতে অাখেরে ভালই হবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে অনেক কিছু নির্ভর করবে মার্কেটের পরিস্থিতির উপর। এবং আপনার নিজের অ্যালোকেশনর পদ্ধতির উপরও।
লেখক পার্টনার, উইশলিস্ট ক্যাপিটাল
