পঞ্চাশ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেল মিউচুয়াল ফান্ডের মোট অ্যাসেটের পরিমাণ। এই উপলক্ষে কলম ধরলেন গৌতম কর্মকার, কর্ণধার, Independent Consultants and Advisors Association। একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি–প্রযুক্তি যত এগোচ্ছে, সাইবার ফ্রড ততই বাড়ছে। তাই দরকার বিশ্বস্ত, অনুমোদিত সহায়ক, যাঁরা লগ্নিকারীর স্বার্থ বুঝবেন।
এক ঝলকে একটি সংবাদ শিরোনাম আপনাদের জন্য তুলে ধরি। মিউচুয়াল ফান্ডের মোট অ্যাসেটের পরিমাণ পঞ্চাশ লক্ষ কোটি টাকা হল। আর ঘটনাচক্রে নভেম্বর মাসে শুধুমাত্র সিপের মাধ্যমে সতেরো হাজার কোটি টাকা এসেছে বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডের ঘরে। এখানে টাকার অঙ্কটিই একমাত্র কথা নয়, বিষয়টি অনেক গভীরে নিয়ে যায় আমাদের। কী হারে আমাদের দেশে ফিনান্সিয়ালাইজেশন হচ্ছে, কেমনভাবে রিটেল ইনভেস্টররা (হ্যাঁ, তাঁদের কথাই বিশেষভাবে বলছি) এই মহাযজ্ঞে সামিল হচ্ছেন, তা এই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট।
এখানে এত দূর এসে, যে ব্যাপারটি উহ্য থেকে যায়, তা হল আপনার-আমার মতো সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খা। ভারতবর্ষে এই মুহূর্তে যে কয়েকটি বড় মাপের ট্রেন্ড রয়েছে, তার মধ্যে ক্যাপিটাল মার্কেট সংক্রান্ত ধারাটিই এখানে উল্লেখ করছি। অগণিত মানুষ এই ট্রেন্ডের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন প্রত্যেক মাসে, নতুন-পুরনো মিলিয়ে সিপের সংখ্যা বৃদ্ধি কেবল তারই প্রতিফলন। বলাই বাহুল্য, মার্কেটে গতি এসেছে যথেষ্ট, তার জন্য উৎসাহও বাড়ছে বোঝা যাচ্ছে। তবে এরই সঙ্গে বলা উচিত যে মানসিকতার পরিবর্তনও হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই। মার্কেটের কাছাকাছি থাকতে চাইছেন অনেকে। তাঁদের একটি বড় অংশ নতুন প্রজন্মের ইনভেস্টর হলেও তুলনায় মধ্যবয়সিরাও এই ব্যাপারে পিছিয়ে থাকতে চাইছেন না।
আইকা বা ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসালট্যান্টস অ্যান্ড অ্যাডভাইসরস অ্যাসোসিয়েশন (ICAA) এই ট্রেন্ডের দিকে নজর রাখছে তো বটেই, আমাদের প্রচেষ্টা এই ধারাটি আরও উন্নতমানের করা। এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভবিষ্যতে আমরা তা করতেও পারব। ‘আইকা’র কর্ণধার হিসাবে যে দায়িত্ব নিয়েছি, তার ভিত্তিতে বলছি-নানাভাবে ইনভেস্টরদের কাছে পৌঁছতে চেষ্টা করেছেন আমাদের সদস্যরা। ক্যাপিটাল মার্কেটে ইন্টারমিডিয়ারিদের যে ভূমিকায় দেখছি আমরা, তা আরও মান্যতা পাবে আগামি দিনেও, এই আশা আমি রাখি। ইনভেস্টরদের সহায়তা করার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি বিশেষ কথা বার বার বলছি আমরা। আজ এই লেখায় ‘সঞ্চয়’-এর পাঠকদের জানাচ্ছি সেগুলোই।
কখনও ‘আনরেজিস্টার্ড এন্টিটি’-র সাহায্য নেবেন না, কারণ ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখবেন তাতে বিপদ বাড়ে বই কমে না। ক্যাপিটাল মার্কেট রেগুলেটর সেবি যা বলে থাকেন, তার সারমর্মই হল এটি। পেশাদার উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলুন সর্বাগ্রে। তাঁদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রকের অনুমোদনপ্রাপ্ত, মনে রাখুন। ঘটনাচক্রে, খুব সম্প্রতি পর পর কয়েকবার আমাদের নিয়ন্ত্রকরা একাধিক ‘আনরেজিস্টার্ড এনটিটি’ চিহ্নিত করেছেন। সেই সব খবর যে প্রচার পায়নি, তা বলা যাবে না। আজ ‘আইকা’র তরফ থেকে সে কথা আরও একবার আপনাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি।
[আরও পড়ুন: বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সিপের গুরুত্ব বিপুল, কেবল নজর রাখুন কয়েকটি দিকে]
এরই সঙ্গে অন্য একটি প্রসঙ্গ টেনে আনতেই হয়। প্রযুক্তির অপব্যবহার আজ এক ভিন্ন মাত্রায়, তার প্রতিফলন আমাদের ইনভেস্টররা ইতিমধ্যে টের পাচ্ছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে। মনে রাখুন, ‘ডিপ ফেক’ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই বেশ উদ্বিগ্ন। সমাজ মাধ্যমে কিছু দেখেই লগ্নির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তলিয়ে দেখুন। টেকনোলজির কৌশলী ব্যবহার যাঁরা করেন এবং যাঁরা সাধারণ মানুষকে (পড়ুন বিনিয়োগকারীকে) ঠকাতে চান, তাঁদের হাত ভবিষ্যতে যেন আরও লম্বা না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করা দরকার।
সাধারণ রিটেল লগ্নিকারী, আমরা সকলেই জানি, বাজারের মেরুদণ্ড। আজ এঁদের জন্যই লগ্নির জগত এগিয়ে গিয়েছে। এঁরাই কিন্তু এক অর্থে অসহায় হয়ে পড়েন প্রযুক্তি অপব্যবহারকারীদের জন্য। যাতে তাঁরা আগামিদিনের ‘ভিকটিম’ না হয়ে যান, তা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সকলেরই। দরকার কঠোর নিয়মকানুন, পালনের সদিচ্ছা এবং নিজস্ব পরিসরে সতর্কতা। এই তিন শর্ত যদি একত্রে নিয়ে আসা যায়, পুরোপুরি মানা যায়, তাহলে সকলেই উপকৃত হবেন। বাজারের পরিকাঠামো আজ উন্নত হয়েছে, নিয়ন্ত্রকরা বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা বলছেন। ভবিষ্যতে যে ভালো হবেই, সে বিষয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। ‘সঞ্চয়’-এর পাঠকদের জন্য এই বার্তা দিতে পেরে ‘আইকা’র তরফ থেকে আমারও ভালো লাগছে।
[আরও পড়ুন: রুপোয় বিনিয়োগে আসে ভালো রিটার্ন! জেনে নিন হাল হকিকত]