তথ্যেরও রকমফের আছে। কোনও তথ্য আপনার জন্য জরুরি, কোনওটি নয়। কিন্তু সাধারণ গ্রাহক অনেক সময় তথ্যের স্তূপের সামনে দোটানায় পড়ে যান। কোন তথ্য তাঁর কাজে লাগবে, আর কোনটা নয়, বুঝতে না পেরে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। এমন অবাঞ্ছিত ঘটনা যাতে না ঘটে, সতর্ক করলেন জয়দীপ সেন
তথ্যের পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে সাধারণ ইনভেস্টর অনেক সময় অসহায় বোধ করেন। প্রাসঙ্গিক তথ্য কোনটি, আর কোনটিকে মান্যতা এখনই না দিলেও চলবে, এই প্রশ্ন মনের মধ্যে আসাটাই স্বাভাবিক। আমাদের প্রত্যেকেরই নিজেদের ইনভেস্টমেন্টগুলো ছাড়াও রয়েছে আরও পাঁচ রকম চিন্তা। তাই ইনফর্মেশনের জোয়ার আমাদের শুধু সুবিধাই এনে দেয় না, মাঝে মাঝে অসুবিধারও সৃষ্টি করে। জনপ্রিয় সংবাদপত্র-টেলিভিশন চ্যানেল ছাড়া এ যুগের সোশাল মিডিয়ার এই বাড়-বাড়ন্তের বাজারে এমন তো হতেই পারে, তাই না? টেকনোলজি এখন তথ্য খুব সহজলভ্য করে তুলেছে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। তবে কোথাও একটা ‘ফিল্টার’লাগিয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য ছেঁকে তুলতে হবে, এ কথাও আজ অজানা নয়।
কীভাবে এমন ‘ফিল্টার’ লাগানো সম্ভব? বিশেষত যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রচুর নতুন সুযোগসুবিধা সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতের কাছে এনে দিয়েছে? ছেঁকে নেওয়া তথ্য–জরুরি ডেটা পয়েন্টস বলতে পারেন–ভালো করে ব্যবহার করাও আমাজের দায়দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সাধারণ মানুষ তো সারা দিন নানা রকম কাজকর্মের মধ্যে থাকেন। তাঁদের সময় কোথায় এই দায় পালন করা? ফান্ড ম্যানেজার বা অ্যানালিস্ট বা অন্য লগ্নি পেশাদাররা যা সহজে করেন, তাঁরা তো সেভাবে করতে অপারগ।
[আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যবিমায় ‘ক্লেম’ বাতিল হয় কেন? শর্তাবলীর জটিলতাই কি প্রধান কারণ]
এত সত্ত্বেও গড়পড়তা বিনিয়োগকারীর জন্য কিছু টিপস দিতে চাই আমার এই লেখায়।
- ভালো করে ভেবে দেখুন, কোন ধরনের ডেটা আপনার জন্য প্রয়োজনীয়। অনেক তথ্যের ভাণ্ডার ভরিয়ে লাভ নেই। যা জরুরি, তার দিকে নজর দিন।
- ডেটা তখনই ইনফর্মেশন স্তরে উন্নীত হয়, যখন তা সত্যিকারের প্রাসঙ্গিক কিছু নির্মাণের কাজে লাগে। সূচকের বাড়া-কমার খবর তো রোজই দেখছেন, তার ভিত্তিতে সঠিক কিছু গঠন করার চেষ্টা করেছেন কি? ভেবে দেখুন।
- কত ধরনের ‘ইভেন্ট’ বা ঘটনা তো ঘটেই চলেছে অর্থনীতিতে। সরকারি নীতি থেকে কর্পোরেট ঘোষণা, শেষ নেই। বেছে নিন সেই সব ঘোষণা যা আপনার জন্য কার্যকরী, যেখানে আপনার পোর্টফোলিওর উপর ঘাত-প্রতিঘাত আসার সম্ভাবনা থাকে।
- ধরা যাক, আপনি উপরোক্ত কাজটি সুষ্ঠুভাবে করলেন, এবার কি নিজেই তথ্যের ভিত্তিতে ট্র্যানজ্যাকশন করবেন? না কি পেশাদার কোনও উপদেষ্টার পরামর্শমতো চলবেন, তাঁরই তত্ত্বাবধানে?
নিজে যদি করার চেষ্টা করেন, দেখে নিন, আপনার যথেষ্ট সময় হাতে আছে কি না! ডেটা পয়েন্টস যা আপনার সামনে আছে, তা কিন্তু যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, সূক্ষ্মভাবে বিচার করতে হবে। সময়ের অভাব থাকলে তো মুশকিলে পড়বেন আপনিই।
[আরও পড়ুন: শুধু SIP নয়, SWP-ও করুন, রইল বিনিয়োগের বিস্তারিত পরিকল্পনা]
এবার একটি সারসত্য বলি। দেখুন, আমাদের আশেপাশে এত কিছু ঘটে চলেছে। কিন্তু সেই সবের উপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। আমাদের নিয়ন্ত্রণ যদি সত্যিই কোথাও থাকে, তা আছে পোর্টফোলিওর গঠনে। চারপাশে প্রতিনিয়ত ভেসে আসা খবরাখবর এবং সমাজমাধ্যমে নজরকাড়া ভাইরাল হওয়া ট্রেন্ড–তার কতটুকু অংশ ব্যবহার করা যেতে পারে পোর্টফোলিওর জন্য? নির্দিষ্ট কোনও তথ্যের কারণে কি তাতে পরিবর্তন আনা দরকার? পেশাদার ম্যানেজার এই বিষয়ে বেশি সজাগ থাকবেন, সেখানে সাধারণ লগ্নিকারী ভালো সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম হবেন।
তাহলে পরিশেষে জানাই, যে ফিল্টারের কথা আগেই বলেছি তা ভুলবেন না। কোনও বিশেষ তথ্য হাতে পেলে বুঝে নিন, তা আপনার ক্ষেত্রে কতখানি প্রাসঙ্গিক। এবার উপদেষ্টার কাছে যান। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে জেনে নিন কী করণীয়? যদি অদলবদল করার পরামর্শ দেন তিনি, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার সময় হয়েছে। যেখানে লং টার্মের জন্য ইনভেস্টমেন্ট করেছেন, সেখানে প্রাত্যহিক নিয়মিত ঘটনা তেমন কিছু প্রভাব ফেলবে না। যা-ই করবেন, বুঝেশুনে করবেন। তাতেই মঙ্গল।