বিনিয়োগের লক্ষ্যে পৌঁছনোর প্রথম ধাপ হল নিজের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা। এমনটাই মনে করেন রাঘব আয়েঙ্গার, চিফ বিজনেস অফিসার, এক্সিস মিউচুয়াল ফান্ড। মূলত কী ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে হয় লগ্নিকারীদের, ‘সঞ্চয়’-এর জন্য তাঁর বিশেষ এই লেখায় রইল তারই সূত্র।
২০২৩ সালে ইক্যুইটি মার্কেটের চলন যে একটি বিষয়ের উপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছে তা হল, সর্বদা সমস্ত ধরনের ফান্ডে, মার্কেট ক্যাপ নির্বিশেষে, বিনিয়োগের মধ্যে থাকা। বাজার সর্বদা উপরের দিকে নাও থাকতে পারে। কিন্তু বাজারের পতনকে এক নতুন সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত। দেশের কাঠামোগত পরিবর্তন এবং উৎপাদনে সরকারের বিশেষ নজর দেওয়ার ফলে, মধ্যম এবং দীর্ঘ মেয়াদে ভারতবর্ষ এখন অধিকতর বৃদ্ধির গতিপথে রয়েছে। এমতাবস্থায়, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, যদি সমস্ত বিনোয়োগকারীরা কোনও একটি বিষয়ে সহমত হন, তা হল বিনিয়োগের বিষয়ে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতার এক বিশাল অবদান বা প্রভাব আছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিনিয়োগকারীরা ‘রিস্ক’ তথা ঝঁুকি সম্বন্ধে একটি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। যদিও দীর্ঘদিনের বিনিয়োগকারীরা জানেন ‘রিস্ক’ এবং ‘প্রাপ্তি’ একই মুদ্রার দুই পিঠ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, রিস্ক প্রশমিত করা বা সামলানোর দক্ষতা। সহজ ভাষায়, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট হল বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিশ্চয়তাগুলির চিহ্নিতকরণ, তার ব্যাখ্যা এবং তা প্রশমিত করার এক বিশেষ প্রক্রিয়া।
একটু বিস্তারে বোঝার চেষ্টা করা যাক। ‘রিস্ক’কে দু’ভাগে ভাগ করা যায়–
সিস্টেমেটিক ‘রিস্ক’ : এই ধরনের ‘রিস্ক’ এমন কারণগুলির কারণে ঘটে যা একটি নির্দিষ্ট কোম্পানি বা ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিওতে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। অনেক ধরনের অর্থনৈতিক কারণ এখানে কাজ করে, যার ফলে পুরো বাজারের প্রত্যাশিত রিটার্ন পরিবর্তন হয়। সিস্টেমেটিক ‘রিস্ক’ প্রশমিত করা খুব মুশকিল কারণ, শুধুমাত্র বিনিয়োগের বৈচিত্র্য নিয়ে এসে এর সমাধান সম্ভব নাও হতে পারে। কিছু সিস্টেমেটিক ‘রিস্ক’ হল–মার্কেট ‘রিস্ক’, ইন্টারেস্ট রেট ‘রিস্ক’, এবং মূল্যবৃদ্ধি ‘রিস্ক’। বিনিয়োগকারীদের একটি মৌলিক সম্পত্তি বরাদ্দ এবং বিভিন্ন সম্পত্তির বিভিন্নভাবে বিন্যাস করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে যাতে এই ‘রিস্ক’গুলি কিছু কমানো যায়।
[আরও পড়ুন: রাম-দিনে উত্তরপ্রদেশে সাড়ম্বরে পূজিত রাবণও, বসবে দশাননের মূর্তিও]
আনসিস্টেমেটিক ‘রিস্ক’: আনসিস্টেমেটিক ‘রিস্ক’ হল, কোনও এক বিশেষ কারণে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হওয়ার ফলাফল। বিভিন্ন পরিস্থিতি যেমন, সরকারি নিয়মের পরিবর্তন, প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, ক্রেতার পছন্দ বা চাহিদার পরিবর্তন, ইত্যাদি কোনও কোম্পানির কর্মক্ষতায় সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। এই ঝুঁকিগুলি প্রশমিত করা সম্ভব, বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগের মেয়াদ, মোট মূল্য এবং ‘রিস্ক’ প্রোফাইলের বিবেচনা করে পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য নিয়ে এসে। আনসিস্টেমেটিক ‘রিস্ক’-এর কিছু প্রকারের মধ্যে রয়েছে বিজনেস ‘রিস্ক’ বা ব্যবসায়িক ঝুঁকি, ক্রেডিট ‘রিস্ক’ বা ধার সংক্রান্ত ঝুঁকি, এবং সুনাম সম্পর্কিত ঝুঁকি/‘রিস্ক’।
ব্যক্তিগত ‘রিস্ক’ নেওয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে জ্ঞান
বিনিয়োগকারী হিসাবে, চারপাশে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রচুর তথ্যের মাঝে, নিজের ‘রিস্ক’ নেওয়ার ক্ষমতা বিবেচনা না করে, গণ্ডগোলের শিকার হওয়া সহজ। সহজ ভাষায়, একজন বিনিয়োগকারীর ব্যক্তিগত ‘রিস্ক’ নেওয়ার দক্ষতা আসলে তার পোর্টফোলিওতে ‘রিস্ক’ বহন করার ক্ষমতা। প্রতিটি বিনিয়োগে কিছু মাত্রার ‘রিস্ক’ থাকে যা পরম বা আপেক্ষিক শর্তে পরিমাপ করা যেতে পারে। ফান্ড ম্যানেজাররা বিভিন্ন মৌলিক এবং প্রযুক্তিগত পদ্ধতির মাধ্যমে ‘রিস্ক’ পরিমাপ করেন। একইভাবে, বিনিয়োগকারীরাও একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের জন্য তাঁদের ব্যক্তিগত রিস্ক নেওয়ার ক্ষমতা বুঝতে এবং সেই অনুযায়ী তঁাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা করতে ‘রিস্ক প্রোফাইলারদের’ সুবিধা নিতে পারেন।
[আরও পড়ুন: অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনে মোদি, আরেক মন্দিরে ঢুকতে না পেরে রাস্তায় বসে রাহুল]
অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা মনে করেন যে, বড় ঝুঁকি নিলে তাদের বেশি লাভ হতে পারে। কিন্তু এটি সবসময় সঠিক দৃষ্টিকোণ নয়। সম্ভাব্য ‘রিস্ক’গুলি বিবেচনা না করে লাভ আশা করা উচিত নয়। সেহেতু, ‘রিস্ক’ প্রয়োজনীয় এবং কাঙ্ক্ষিত লাভের থেকে অবিচ্ছেদ্য। ‘রিস্ক’ সম্বন্ধে সম্যক ধারণা বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন বিনিয়োগ পদ্ধতির সাথে জড়িত সুযোগ, ট্রেড-অফ এবং খরচগুলি আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে। সম্প্রতি, অ্যাক্সিস মিউচুয়াল ফান্ড #SochaSamjhaRisk নামে একটি সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালিয়েছে যাতে বিনিয়োগকারীদের তাদের ঝুঁকির নেওয়ার ক্ষমতা বুঝে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করা যায়।
বিনিয়োগকারীর দৃষ্টিকোণ থেকে
সমস্ত ধরনের ‘রিস্ক’ কমানোর জন্য পরিকল্পনা করা সহজ নয় কারণ এখানে বিভিন্ন বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ের প্রভাব থাকে। যাই হোক, বিনিয়োগ সংক্রান্ত ‘রিস্ক’ এবং ব্যক্তিগত ‘রিস্ক’ নেওয়ার ক্ষমতার বিষয়ে সম্যক ধারণা, হেজিং, সম্পত্তির সঠিক বিন্যাস, বৈচিত্র্যমূলক পোর্টফোলিও তৈরি ইত্যাদি উপায়ে ‘রিস্ক’ কমানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এছাড়াও, ‘রিস্ক এডজাস্টেড রিটার্ন ড্রডাউন’ পরিমাপ করে এটা নিশ্চিত করে যে ‘রিস্ক’ যেন ‘বিটা-এডজাস্টেড রিটার্নের’ সমান হয়। এই নতুন বছরে আমরা বিনিয়োগকারীদের ব্যক্তিগত ‘রিস্ক’ নেওয়ার ক্ষমতা বুঝে বিনিয়োগ করতে অনুরোধ করছি।