বয়স যা-ই হোক, পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সঞ্চয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হওয়া জরুরি। কারণ এই সু-অভ্যাসটি কেবলমাত্র ব্যক্তিগত স্বপ্নপূরণ নয়, পরিবারের নিরাপত্তা-রক্ষার জন্যও আবশ্যিক। ছোট থেকেই কীভাবে সঞ্চয়ের পাঠ নেওয়া যায়, এই লেখায় জানাচ্ছেন এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এজিএম পরিমল চন্দ্র দাস।
আজকের লেখা তরুণদের জন্য। গোড়াতেই সংক্ষেপে বলি, যদি সময় থাকতে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের গুরুত্ব বোঝেন তাঁরা, তবে তাঁদের ভবিষ্যৎ হবে নিরাপদ, আত্মনির্ভরশীল ও সমৃদ্ধ। তরুণ বয়সে মানুষের সহনশীলতা ও ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। এ কথা কম বেশি সকলেই মানবেন। এই কারণে স্বল্প পরিমাণ অর্থ দিয়েও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ শুরু করলে, সময়ের সাথে সাথে তা চক্রবৃদ্ধি হারে অনেক বড় সম্পদে পরিণত হতে পারে।
আমার নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জানাই, “বিনিয়োগ মানেই বড় অঙ্কের টাকার দরকার হয়" — এটা একটা ভুল ধারণা। মাসে ১০০০ টাকাও নিয়মিতভাবে সঞ্চয় ও (এসআইপি-তে) বিনিয়োগ শুরু করে ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।
তরুণদের অনেকেই তাৎক্ষণিক ভোগ-বিলাসে অভ্যস্ত, দেখতে পাই। নতুন ফোন, ফ্যাশন, আড্ডা, ঘোরাফেরা ইত্যাদি চলতেই থাকে। এসব একেবারেই খারাপ, তা কিন্তু বলছি না। তবে চাইলে চলতি মাসে যে টাকায় নতুন মডেলের ফোন কেনা যায়, তার সামান্য অংশ দিয়েই ভবিষ্যতের জন্য একটি ‘সেফটি নেট’ তৈরি করা সম্ভব।
আমার মনে হয়, প্রথম মাসিক আয় থেকেই সঞ্চয় শুরু করা দরকার। তিনটে সূত্র দিচ্ছি, পড়ে দেখুন।
* একটি বাজেট তৈরি করুন, খরচ ও আয়ের হিসাব রাখুন।
* নিয়ম করে প্রতি মাসে টাকা জমান, আর সঞ্চয় করা রীতিমতো অভ্যাস করুন।
* প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট অর্থ সংক্রান্ত কিছু পড়ুন বা জানুন।
এছাড়াও আমি মনে করি, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আর্থিক সচেতনতা দেওয়া আজকের চরম প্রয়োজন। বাবা-মা ও শিক্ষকদের বলছি, এই বিশেষ কথাটা খেয়াল করুন। মনে রাখবেন, ১৮ বছর পূর্ণ হলেই ছোটরা বিভিন্ন ঋণপণ্য কিনতে চায়। আর তখনই তারা ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রবেশ করে, যেখানে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে সহজেই ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে। সঞ্চয় শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য নয়, পরিবারের স্বপ্নপূরণেও সহায়ক। মেয়ের পড়াশোনা, মায়ের চিকিৎসা কিংবা নিজের উদ্যোগ শুরু–সব কিছুতেই প্রয়োজন একটি শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তি। বিনিয়োগ শুধু টাকাই নয়, ভবিষ্যতের স্বাধীনতার বীজ বপন করা। এই শেষ কথাটা মনে রাখবেন সব সময়। তাই আজ থেকেই শুরু করুন, যত ছোটই হোক। কারণ সময়ই এখানে আপনাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
অনুলিখন: গার্গী গৌতম
