বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ এবং কর্পোরেট ট্রেনার জয়দীপ সেন ‘সঞ্চয়’-এর আমন্ত্রণে লিখেছেন এই বিশেষ প্রতিবেদন। ইটিএফ অর্থাৎ এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের উপর দুই কিস্তির প্রথমটি রইল এবারের সংখ্যায়। মিউচুয়াল ফান্ড এবং স্টক, দুই ধরনের লগ্নির বৈশিষ্ট্যই পাবেন ইটিএফ-এ। কী কী ধরনের এই ফান্ড হতে পারে, রইল তারই বিশদ ব্যাখ্যা
এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড, সংক্ষেপে ইটিএফ, এক কথায় বলতে গেলে প্রথমেই জানাতে হয় যে, একটি ‘আন্ডারলাইং ইনডেক্স’ অনুসরণ করছে নির্দিষ্ট কিছু ‘মার্কেটেবল সিকুইরিটিজ’–এমনই ভাবতে পারেন লগ্নিকারীরা। দুই ভিন্ন লগ্নির ধরন, মিউচুয়াল ফান্ড এবং স্টক, ইটিএফে প্রতিফলিত হয়, দুটিরই বৈশিষ্ট্য এখানে মজুদ। প্রথমেই যে আন্ডারলাইং ইনডেক্সের কথা বললাম, সেই সূচকটির অন্তর্গত অ্যাসেটগুলির ভিত্তিতেই ইটিএফ গঠিত হয়। অ্যাসেটগুলোকে স্টক বা বন্ড বা অন্য কিছুও হতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালিত ইনডেক্স ফান্ডের কথা চিন্তা করুন। এবার মনে করুন এমন ইনডেক্স ফান্ড আর পাঁচটা লিস্টেড স্টকের মতোই এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত। এবং লিস্টেড স্টকের আদলেই বেচা-কেনা করা যায় সেই এক্সচেঞ্জেই।
অন্য মিউচুয়াল ফান্ডের মতো ফান্ড হাউসের কাছে পারচেজ বা রিডেম্পশনের প্রশ্ন এখানে উঠছে না। আপনি যেভাবে লগ্নিকারী হিসাবে স্টক কিনতে বা বেচতে পারেন এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে, ঠিক সেভাবেই ইটিএফ কিনতে বা বেচতে পারেন। এর জন্য অবশ্য আপনার লাগবে একটি ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট এবং ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট। এগুলোকে খুলতে হবে আপনাকেই, প্রয়োজনে এক্সচেঞ্জের কোনও সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। অর্থাৎ আপনাকে সাহায্য করবেন কোনও ব্রোকার। মনে রাখুন, ইটিএফ-এর বেচা-কেনা চলতে পারে যে কোনও ওয়ার্কিং ডের কাজের সময়ের মধ্যে।
[আরও পড়ুন: খাটলে টাকা বাড়বে বেশি, শুধু খেয়াল রাখুন এই বিষয়গুলোর উপর]
আবার বলে রাখি, ইটিএফ এক ধরনের হয় না। বস্তুত, অনেক বৈচিত্র্য পাবেন ইটিএফের জগতে। সুবিধার জন্য আমি পাঁচ ভাগে ভাগ করেছি এগুলোকে।
১. ইক্যুইটি ইটিএফ
২. ডেট ইটিএফ
৩. কমোডিটি ইটিএফ
৪. লিকুইড ইটিএফ
৫. গ্লোবাল ইটিএফ
ইক্যুইটি ইটিএফ
এগুলো ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ, দুই জায়গাতেই ট্রেডিং করার জন্য পাওয়া সম্ভব। ইনভেস্টর হিসাবে আপনি কিনতে পারেন এবং বেচতেও পারেন ফান্ডের ইউনিট। ‘রিয়েল টাইম বেসিস’ এখানে জরুরি, খেয়াল রাখবেন। ইউনিটের চলতি মার্কেট প্রাইস এক্ষেত্রে ধার্য হবে। নূন্যতম পরিমাণ এক ইউনিট। অতএব নূন্যতম বিনিয়োগের পরিমাণও এই এক ইউনিটের দামের সমান। এই জাতীয় ইটিএফ-এর মাধ্যমে একত্রে একগুচ্ছ কোম্পানির স্টক পাবেন আপনি। আন্ডারলাইং ইনডেক্স যে সমস্ত স্টক দিয়ে গঠিত, সংশ্লিষ্ট ইটিএফেও সেই সব স্টক একইভাবে, একই অনুপাতে বিন্যস্ত হবে। তাই ডাইভারসিফিকেশনের সুযোগ পাবেন আপনি। সঙ্গে তো প্যাসিভ লগ্নির সুবিধা থাকছেই।
ডেট ইটিএফ
এই ফান্ডের মাধ্যমে আপনি নানা রকম ফিক্সড ইনকাম সিকুইরিটিজে লগ্নি করতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে থাকতে পারে বিভিন্ন গর্ভমেন্ট সিকুইরিটিজ (গিল্টসও বলা হয় এগুলোকে)। এছাড়াও পেতে পারেন কর্পোরেট বন্ড বা ডেবেঞ্চার। এখানেও সরাসরি এক্সচেঞ্জে, ব্রোকারের সাহায্যে কেনা-বেচা চলতে পারে নির্দিষ্ট ইনডেক্সের ভিত্তিতে।
কমোডিটি ইটিএফ
মনে করুন, গোল্ড বা সিলভারে আপনি বিনিয়োগ করতে পছন্দ করেন। সহজেই হবে যদি ইটিএফটি কমোডিটি-নির্ভর হয়। একইভাবে হতে পারে কমোডিটি এক্সচেঞ্জে। উদাহরণের মধ্যে আছে ক্রুড অয়েল, জিরে, তুলো ইত্যাদি। তবে জানিয়ে রাখি, এই মুহূর্তে ইটিএফ সীমিত আছে দুই প্রেশাস মেটাল, অর্থাৎ সোনা এবং রূপোয়।
[আরও পড়ুন: আগ্রহ বাড়ছে ক্যাপেক্স নিয়ে, কীভাবে পাবেন ভালো রিটার্ন? জানুন বিস্তারিত]
লিকুইড ইটিএফ
এগুলির উদ্দেশ্য মানি মার্কেট রিটার্ন এনে দেওয়া। লগ্নি করা হয় কল মানি এবং সমগোত্রের সিকুইরিটিজে। স্বল্পমেয়াদী সরকারি সিকুইরিটিজও পাবেন। মনে রাখতে হবে, এখন T+1 ভিত্তিতে সেটলমেন্ট হচ্ছে স্টক এক্সচেঞ্জে। যে কোনও কাজের দিনে খুব সহজভাবে কিনতে-বেচতে পারেন ইনভেস্টররা।
গ্লোবাল ইটিএফ
দেশের লগ্নিকারী যদি বিদেশি ইনডেক্সে বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে গ্লোবাল ইটিএফ তাঁর সহায় হতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল ইনডেক্সের কথা বলছি। কিছুটা বিদেশি ফান্ডে লগ্নির মতো বিষয়টি। তবে জেনে রাখা উচিত যে বিভিন্ন শর্ত ইদানিং আরোপিত হয়েছে গ্লোবাল ইনভেস্টিংয়ের ব্যাপারে। নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে রাখা আছে। এই নিয়ে সম্প্রতি অনেক লেখা হয়েছে মিডিয়ায়, উৎসাহী পাঠক যেন তা পড়ে নেন।