‘আনসিস্টেম্যাটিক রিস্ক’-কে নূন্যতম করতেই ডাইভারসিফিকেশনের পথে হাঁটেন ইনভেস্টররা। ট্রেড পণ্ডিতরাই বলেন এই কথা। আর তাঁদেরই একাংশের দাবি, ফার্মা সেক্টরের মাধ্যমে ডাইভারসিফাই করতে পারবেন তাঁরা। কীভাবে? উত্তর সাজিয়ে দিলেন পেরেন্টস ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর পার্থপ্রতীম চট্টোপাধ্যায়।
বিনিয়োগকারীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ডাইভারসিফিকেশন। এর মাধ্যমে ঝুঁকি কমানোর পক্ষপাতী সাধারণ লগ্নিকারীরা। বিভিন্ন সেক্টরে তিনি তাঁর বিনিয়োগকে ছড়িয়ে দেন। বিনিয়োগের ভাষায় ‘আনসিস্টেম্যাটিক রিস্ক’-কে নূন্যতম করতেই বিনিয়োগকারী ডাইভারসিফিকেশনের পথে হাঁটেন। বিনিয়োগের বিভিন্ন সেক্টরের মধ্যে বিনিয়োগকারীর কাছে মি. ডিপেন্ডেবল হল ফার্মা সেক্টর। অতীতের বিনিয়োগের ইতিহাস এবং বর্তমানের বিনিয়োগ পরিস্থিতির ময়নাতদন্ত করলে দেখা যাবে, ফার্মা সেক্টর হল এমন একটি সেক্টর, যা আগামিদিনে বিনিয়োগকারীর কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এবার চলুন, দেখে নেওয়া যাক, কেন ফার্মা সেক্টর বিনিয়োগকারীর কাছে হয়ে উঠেছে বিনিয়োগের ‘মহাকুম্ভ’?
প্রথমত, আজকের দিনে অত্যন্ত পরিচিত একটি শব্দ হল ‘মেডিক্যাল ট্যুরিজম’। বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ থেকে রোগীরা ভারতে আসছেন সুচিকিৎসার জন্য। শুধু উন্নয়নশীল দেশ থেকেই নয়, অনেক উন্নত দেশের রোগীদেরও লক্ষ্য হল ভারতবর্ষ। স্বল্প ব্যয়ে সুচিকিৎসার জন্য আজ এই দেশ বিশ্ব চিকিৎসার মানচিত্রে অনেক উপরের দিকে উঠে এসেছে এবং এই ব্যাপারে সহযোগী হয়েছে ভারত সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নীতি। এই ‘মেডিক্যাল ট্যুরিজম’ আগামিদিনে আরও জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। এবং তা কেবল সময়ের অপেক্ষা।
[আরও পড়ুন: লগ্নির সুযোগের জন্য আর অপেক্ষা নয়, নিজেই তৈরি করুন নতুন সুযোগ]
ভারতবর্ষে অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধির হার ফার্মা সেক্টরে ৭% থেকে ৯%, যা বিশ্বব্যাপী গ্রোথ রেটের থেকে অনেক এগিয়ে। এই পরিসংখ্যানই যথেষ্ট বিশ্বের তাবড় তাবড় ফার্মা কোম্পানির কাছে তাদের উৎপাদন ক্ষেত্রে ভারতে গড়ে তোলার জন্য। এর সঙ্গে রয়েছে অনুকূল সরকারি নীতি এবং ফার্মা এফডিআই-তে বিভিন্ন ছাড়ের সুযোগ।
ভারতবর্ষের ফার্মা এবং হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রিজের পরিকাঠামো আজ যে কোনও দেশকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। অত্যন্ত আধুনিক চিকিৎসা কম খরচে আপনার হাতের মুঠোয় আনতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি এআই তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে হেলথকেয়ারের মেলবন্ধন এই পরিষেবাকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে আশা করা যায়।
ভ্যালুয়েশেনর দিক থেকে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সেক্টর এখনও আন্ডার-ভ্যালুড। তাই বিনিয়োগকারীরা এই সেক্টরে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ বাড়াবেন এবং মুনাফা ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করা যায়। এছাড়াও টেকনিক্যাল অ্যানালিস্টদের মতে ফার্মা সেক্টরে আগামিদিনে তেজী ভাব আসতে চলেছে। দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে ছোট ছোট করে ফার্মা সেক্টরে বিনিয়োগ আপনাকে ভবিষ্যতে ভালো লাভের মুখ দেখাতে পারবে।
এখন প্রশ্ন, কীভাবে আপনিও অংশগ্রহণ করবেন এই বিনিয়োগ যজ্ঞে? ফার্মা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার থেকেও আপনার কাছে সহজ হবে ইটিএফ-এর মাধ্যমে বিনিয়োগের রাস্তা অবলম্বন করা। আপনি আপনার পছন্দমতো ফার্মা ইটিএফ বাজার থেকে কিনতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন ফার্মা সেক্টরের মিউচুয়াল ফান্ডে আপনি বিনিয়োগ করতে পারেন।
সিপ-এর মাধ্যমে বিনিয়োগ যেমন আপনাকে ভালো মুনাফার সন্ধান দেবে, তেমনি আপনার বিনিয়োগের ঝুঁকির মাত্রাকে অনেকটা কমিয়ে দেবে। এছাড়াও আপনি সরাসরি ফার্মা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারেন। এ ব্যাপারে অবশ্যই আপনি কোনও বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞর সাহায্য নিতে পারেন। যাই হোক, আপনার মোট বিনিয়োগের একটি অংশ (৫% থেকে ১০%) অবশ্যই রাখবেন ফার্মা এবং হেলথকেয়ার সেক্টরে। কোভিড পরবর্তী যুগে এই সেক্টরে বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগের প্রবণতা অনেক বেড়েছে এবং ফার্মা সেক্টর হয়ে উঠেছে আপনার বিনিয়োগের মহৌষধি।