পোষ্য বিমা করিয়েছেন কি? যদি উত্তর ‘না’ হয়, অবশ্যই করিয়ে নিন। কোন পথে, কীভাবে এগোবেন, কী কী করবেন আর কী কী করবেন না, তথ্য সাজালেন কোয়েল মুখোপাধ্যায়
নামেই পোষ্য। আসলে তো পরিবারেরই সদস্য। তাহলে বিমার আওতা থেকে আপনার আদরের পোষ্যটিই বা বাদ যায় কেন? আচমকা অসুস্থ তো সে-ও হতে পারে! বা পড়তে পারে হঠাৎই কোনও দুর্ঘটনার কবলে! তখন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে, চড়া ভেট-বিল মেটাতে আপনার রক্ষাকর্তা হতে পারে পেট ইনসিওরেন্স তথা পোষ্য বিমাই। আশার কথা, এ দেশে পোষ্য বিমার অস্তিত্ব নতুন নয়। প্রাথমিকভাবে তা কুকুর, বিড়ালেই (কিছু ক্ষেত্রে ঘোড়া) সীমাবদ্ধ। তবে এখন ছবিটা আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে।
পোষ্য বিমা কেন করবেন?
সংক্ষেপে বলতে গেলে, পোষ্যকে যে কোনও রকম অনিশ্চিত ঘটনার প্রভাব থেকে বাঁচানোই এই বিমা করানোর উদ্দেশ্য। তা সে তার অসুস্থতার চড়া মেডিক্যাল বিল মেটানোই হোক বা কোনও দুর্ঘটনার প্রভাব থেকে পোষ্যকে রক্ষা করাই হোক। পেট ইনসিওরেন্স পলিসির মাধ্যমে একক কোনও ব্যক্তি যিনি একাধিক পোষ্যর মালিক, পোষ্য সংক্রান্ত সুরক্ষা পাবেন।
কী কী সুবিধা পাবেন?
সাধারণভাবে এক একটি সংস্থার বিমার সুবিধার তালিকা একেক রকম। তবে প্রাথমিকভাবে যে যে বিষয়গুলোর উল্লেখ থাকে, তা হল–
- সার্জারি এক্সপেন্সেস/অ্যানিমিয়া
- হসপিটালাইজেশন কভার
- মর্টালিটি বেনিফিট
- টার্মিনাল ডিজিজেস কভার
- লং টার্ম কেয়ার কভার
- ওপিডি কভার
- থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি কভার
- থেফ্ট/লস্ট/স্ট্রেয়িং কভার
বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পোষ্যদের ব্যবহারের জন্য কি কোনও কভার আছে?
অ্যাডিশনাল প্রিমিয়ামের পেমেন্টে পোষ্য বিমা কভারেজে পোষ্যদের বাণিজ্যিক কিংবা পেশাদারি উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য সুবিধা মেলে। তবে সেই উদ্দেশ্যের তালিকায় কোনও বিপজ্জনক খেলা বা শিকার বা প্রাণঘাতী, ঝুঁকিপূর্ণ কার্যকলাপ পড়ে না।
ভারতে পোষ্যর বিমা করাতে গেলে কী কী নথি জমা দিতে হবে?
- ইনসিওরেন্স প্রপোজাল ফর্ম যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে।
- যদি গ্রাহক পিন কভার নির্বাচন করেন, তাহলে ডায়াগনস্টিক টেস্টের রেজাল্ট সংক্রান্ত নথি দিতে হবে।
- পোষ্যকে যাতে সহজেই চিহ্নিত করা যায়, সেই সমস্ত বৈশিষ্ট্য বিশদে জানাতে হবে।
- নির্দিষ্ট সময়ে পোষ্যর টিকাকরণ হয়েছে কি না, তা জানিয়ে ‘সেলফ-ডিক্লেরেশন’ নথি।
- যদি প্রাইসিং মেট্রিক্স মেনে ম্যাক্সিমাম প্রাইসের ঊর্ধ্বে হয় ইনসিওর্ড টাকার অঙ্ক, তাহলে ‘পারচেজ প্রুফ’ নথি লাগবে।
যদি গ্রাহক ‘পেট অফ পেডিগ্রি লিনেজ’ বেছে নেন, তাহলে ‘পেডিগ্রি সার্টিফিকেট’ প্রয়োজন হবে।
পেট ইনসিওরেন্স কভার কেনার খরচ কত?
খরচ অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। যেমন পলিসি টার্ম, পেট ব্রিড, পোষ্যর বয়স, পলিসি টেনিওর প্রভৃতি। বুদ্ধিমান গ্রাহক সবসময় পোষ্যর মেডিক্যাল বিলের অ্যাভারেজ কস্টের সঙ্গে যে পেট ইনসিওরেন্স কভার কিনতে চান, তার প্রিমিয়ামের অঙ্কের তুলনা করে, তারপরই এগোন।
মনে রাখবেন, সাধারণত পেট ইনসিওরেন্স কভারে, মালিকের ‘থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি’ আওতাভুক্ত থাকে। মোটামুটি ১৫ লক্ষ টাকার সাম ইনসিওর্ড অপশন রয়েছে বাজাজ আলিয়াঞ্জ পেট ইনসিওরেন্স পলিসির ক্ষেত্রে। তবে সব সংস্থা এই সুবিধা দেয় না।
কিছু কিছু বিমা পলিসিতে পোষ্যর টীকাকরণের খরচ কভার করা হয়। পলিসি বেছে নেওয়ার সময় এই বিষয়টি ভালো করে দেখে নেবেন।
[আরও পড়ুন: মিস্টার ফিটনেস, মিস স্ট্যামিনা স্বাস্থ্য-সচেতন গ্রাহকের চয়েস আদিত্য বিড়লা অ্যাক্টিভ ওয়ান]
বাজাজ আলিয়াঞ্জ পেট ইনসিওরেন্স পলিসি পোষ্য বিমার জগতে অনেকেরই প্রথম পছন্দ। এই বিমায় অজস্র সুবিধা পাবেন গ্রাহক। যেমন–
- প্রিমিয়ামের অঙ্ক সাশ্রয়ী।
- ইনডিভিজুয়াল এবং গ্রুপ ভিত্তিক কভার বেছে নিতে পারেন।
- অ্যানুয়াল/শর্ট/লং টার্ম পলিসি পিরিয়ড অপশন বেছে নিতে পারেন।
- পোষ্যর জন্য আরএফআইডি ট্যাগিং বেছে নেওয়ার সুবিধা আছে।
- সার্জারি খরচ, হসপিটালাইজেশন খরচ পলিসি কভারের আওতাভুক্ত।
- পোষ্যর টিকাকরণ সময়ে না হলে, পরে তা করানো যাবে।
- ইনসিওর্ড পোষ্য চুরি হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে বিজ্ঞাপন দেওয়ার খরচ পলিসি কভারের অন্তর্ভুক্ত।
- টার্মিনাল ডিজিজের ক্ষেত্রে ৩০ দিনের সারভাইভাল পিরিয়ড।
- পোষ্য হারিয়ে বা চুরি গেলে সন্ধানদাতাকে পুরস্কার দেওয়া হবে।
- পোষ্যর মালিকের থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি কভার পলিসি-ভুক্ত। এই মর্মে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মিলতে পারে।
পোষ্য বিমার ক্লেম প্রসেসও সহজ, ঝামেলাহীন। পলিসির নথিতে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে, প্রয়োজনে সাইটও দেখতে পারেন। নিজের ক্লেম রেজিস্টার করতে bagichelp@bajajallianz.co.in এ মেল করুন। বা টোল ফ্রি নাম্বার ১৮০০ ২০২ ৫৮৫৮ এ ফোন করুন।
মনে রাখবেন, পোষ্য বিমার বাজার এদেশে এখনও সেভাবে জাঁকিয়ে বসেনি। তবে তার অর্থ এই নয় যে, বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই বা ক্ষীণ। ধীর লয়ে হলেও এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে। ক্রমশ বদল হচ্ছে ‘পেট ওনারশিপ প্যাটার্ন’-এর। বিশেষ করে ‘পেট পেরেন্টিং’ ধারণা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যেই আগের তুলনায় এখন পোষ্য বিমার গুরুত্ব মানুষ বেশি উপলব্ধি করছেন, তাই কেনার চলও বাড়ছে। আরও একটি বিষয় হল, আগের মতো এখন পোষ্যর তালিকা কেবলমাত্র কুকুর আর বিড়ালের মধ্যেই সীমিত নেই। নানা ধরনের অন্য প্রাণীও বিমা পলিসির আওতাভুক্ত হচ্ছে। তবে ভুলবেন না, যে কোনও পদক্ষেপ করার আগে সমস্ত নিয়ম-কানুন খুঁটিয়ে পড়বেন। প্রয়োজনে পেশাদার বিশেষজ্ঞের সাহায্যও নেবেন। যাতে পরে কোনও আইনি ঝঞ্ঝাটে জড়িয়ে পড়তে না হয়।