সব নতুন এক সময় পুরাতন হয়ই। জায়গা করে দিতে হয় আরও ভরসাযোগ্য, আরও প্রতিশ্রুতিময় কাউকে। এমনটাই ঘটছে বাজার অর্থনীতিতেও। অতি-নির্ভরযোগ্য সিপ তথা সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান এবং এসটিপি অর্থাৎ সিস্টেম্যাটিক ট্রান্সফার প্ল্যানেরও বিকল্প খেলোয়াড়ের প্রবেশ ঘটে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। পরিচয় করিয়ে দিলেন নীলাঞ্জন দে
সিপ বা সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান এবং এসটিপি বা সিস্টেম্যাটিক ট্রান্সফার প্ল্যানের উপর ভরসা রাখেন বহু লগ্নিকারী। সনাতনী পদ্ধতি মেনে SIP/STP করার কোনও মার নেই, এই দুই কৌশলের উপযোগিতা নিয়ে সন্দেহ নেই কারও মনে। অন্তত থিয়োরি হিসাবে এগুলির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবেন না। তবে আজকের দুনিয়ায়, যেখানে ভোলাটিলিটি প্রচণ্ড রকমের, সেখানেও কি সাবেকি SIP/STP-র কৌশল একইভাবে প্রযোজ্য? সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, আজ আমি বলতে পারি, না-সাবেকি পন্থার বিকল্প সত্যিই আছে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার সময় এসেছে। তাই ভ্যালু-অ্যাডেড স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কথা বলছি।
তার আগে বলে রাখি ‘Margin of Safety’-র কথা যা মূলত স্টকের অন্তর্নিহিত বা intrinsic ভ্যালু এবং তার মার্কেট প্রাইসের তফাত বুঝিয়ে দেয়। এর উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার-সংখ্যাতত্ত্ব বা স্ট্যাটিসটিক্স ব্যবহার করে জানিয়ে দেওয়া ঠিক কখন আপনি কোন স্টকে লগ্নি করতে পারেন-আমাদের ক্ষেত্রে ফান্ডে লগ্নি করতে পারেন। বাজার যখন কেনার পক্ষে আকর্ষণীয়, তখন মার্জিন অফ সেফটি বেশি। আবার অন্য দিকে বাজার যখন তেমন আকর্ষণীয় নয়, স্টকের দাম বেশি, তখন মার্জিন অফ সেফটি কম। আমাদের বাজারে একাধিক পেশাদার ইনভেস্টর এই বিষয়ে আলোচনা করছেন। উদাহরণ হিসাবে আমি স্যামকো মিউচুয়াল ফান্ডের নাম উল্লেখ করতে পারি।
এই প্রসঙ্গে যা মনে রাখতে হবে, তা পয়েন্ট হিসাবে এখানে তুলে দিলাম।
ক্রিকেটে যেমন প্রতিটি বলে ব্যাটসম্যান হয়ে আপনি ছক্কা হাঁকাতে পারেন না, তেমনই প্রতিবার স্টকে লগ্নি করে বড় মাপের মুনাফা পাবেন না। হয়তো কখনও aggressive প্লেয়ার হিসাবে খেলতে হবে, আবার অন্য সময় conservative হয়ে মাঠে নামতে হবে। স্যামকো বা অনুরূপ কোনও পেশাদার সংস্থার নীতি মেনে যদি মার্জিন অফ সেফটি অনুসরণ করেন, তাহলে কিন্তু সুবিধা হবে। তখন intrinsic value দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হবে। Aggressive হবেন না conservative, তখন পরিষ্কার বুঝতে পারবেন।
থিওরি অনুযায়ী মার্জিন অফ সেফটি এক থেকে দু’শোর মধ্যে থাকে। মার্কেট ইনডেক্সের তুলনায় বিপরীত দিকে যায়।
অর্থাৎ–
ক) বাজার যখন আকর্ষণীয়, মার্জিন অফ সেফটি উঁচুর দিকে যাবে।
খ) বাজার যখন উঁচু, তখন মার্জিন অফ সেফটি নিচে নেমে আসে।
এবার আসুন আমাদের মূল প্রসঙ্গে।
#সাবেকি পদ্ধতিতে লগ্নি করে প্রতি বার বড় রিটার্ন আশা করবেন না, কারণ বাজার খুব অনিশ্চিত।
#তার মানে SIP/STP যদি আগের স্টাইলেই করেন, তাহলে ‘Alpha’ (ইনডেক্সকে হারিয়ে রিটার্ন) যথাযথ হাতে পাবেন না।
#এখনকার পরিস্থিতিতে চাই ‘ভ্যালু-অ্যাডেড’ কৌশল-কারণ প্রতিবার একই সময়, একই দিনে, একই পরিমাণ টাকা বাজারে আনা আর তেমন কার্যকরী হবে না।
#তার বদলে আনুন ‘ভেরিয়েবল অ্যামাউন্ট (নট ফিক্সড)’-পরিস্থিতি বুঝে এই ভেরিয়েশন হওয়া উচিত। ন্যূনতম লগ্নি ০.০১ গুণ থেকে শুরু করে ৬ গুণ পর্যন্ত বলে মনে করা হচ্ছে।
#এই প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে TimerSTP। তার মূল ভাবনাটি এই রকম-সাবধানে লগ্নি করুন যখন রিস্ক বেশি, মানে বাজার চড়া, তখন কম টাকা আনুন। আর হাত খুলে বিনিয়োগ করুন যখন বাজার নেমে এসেছে, ৬ গুণ পর্যন্ত তা করতে পারেন, কারণ তখন ঝুঁকি কমেছে। পুরো পদ্ধতিটি এই TimerSTP ব্যবহার করে সরল, সহজ করে দেওয়া সম্ভব।
[আরও পড়ুন: লগ্নির দুনিয়ায় সুযোগের সম্ভার, বাজাজ ফিনান্স দেখাচ্ছে দিশা]
সংক্ষেপে বলতে পারি, পুরো পদ্ধতিটি বেশ ডায়নামিক, আর একই সঙ্গে সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য উপযোগী। শেয়ারের ভ্যালুয়েশন যখন আকর্ষণীয়, তখন বেশি ইউনিট কিনতে পারেন তিনি। আর বাজার বেড়ে গেলে ইউনিটের সংখ্যা কম পান। প্রত্যেক বার ‘মার্কেট টাইমিং’ করতে হবে না তাঁকে।
‘সঞ্চয়’-এর সংযোজন-তথাকথিত স্মার্ট সিপ বা স্মার্ট এসটিপি এই যুগের ইনভেস্টরদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বার বার একই পরিমাণের টাকা লগ্নি না করে অবস্থা অনুযায়ী লগ্নির বহর পরিবর্তন করা কৌশলী ইনভেস্টরের লক্ষণ। তবে তা করার জন্য চাই অনুসন্ধিৎসু মন এবং এই বিশেষ স্ট্র্যাটেজি প্রয়োগ করার চেষ্টা। স্যামকোর নিজস্ব বক্তব্য অনুযায়ী, ‘TimerSTP’-র কারণে রিটার্ন বেশি পাওয়া সম্ভব। সাধারণ একপেশে সিপ যেখানে ১২% রিটার্ন এনেছে, সেখানে TimerSTP-র খাতিরে রিটার্ন ১৬% হয়েছে। এখানে ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু করার দিন হিসাবে ধার্য হয়েছে। আর একই বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত এই পরীক্ষা করা হয়েছে, স্যামকোর মতে। ‘সঞ্চয়’-এর পক্ষ থেকে আমরা পাঠকদের এই কৌশল হাতে-কলমে করে দেখতে বলছি। আগামিদিনেও যে এমন পরীক্ষা ফলপ্রসূ হবেই, তা বলা না গেলেও, এক উন্নত বিকল্প হিসাবে এই ধরনের স্মার্ট স্ট্র্যাটেজির বিষয়ে চিন্তাভাবনার প্রয়োজন আছে। তবে তা যেন সংশ্লিষ্ট লগ্নিকারীর রিস্ক নেওয়ার ক্ষমতা বুঝে করা হয়। পুরোনো পারফরম্যান্স যে ভবিষ্যতে আবার দেখা যাবে তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না।
(লেখক লগ্নি পরামর্শদাতা)