মাল্টি অ্যাসেট ফান্ড। নামেই স্পষ্ট, বহুমুখীতা। এই ধরনের ফান্ডে আসলে ইক্যুইটি, ডেট, গোল্ড-সহ আরও নানা কিছুর সমাহার হতে পারে। তবে যেটি পরীক্ষিত বৈশিষ্ট্য, তা হল–এই ধরনের ফান্ডে ডাইভারসিফিকেশন যথেষ্টই হয় আর ঝুঁকি থাকে কম। বিস্তারিত জানালেন ফিনান্সিয়াল প্ল্যানার তথা ওয়েলম্যাক্স ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠাতা সুজন দাস
পাঁচমেশালী সবজির পদ খেয়েছেন নিশ্চয়ই। ভালো রাঁধুনীর হাতে পড়লে তার স্বাদ হয় অপূর্ব, তাই না? মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ডের বিষয়টিও কিছুটা সেই রকম। ইক্যুইটি, ডেট, গোল্ড, রিয়েল এস্টেট সবই থাকা সম্ভব। আর এমন ফান্ড কার্যকরীও হয়। ইনভেস্টরদের ফিনান্সিয়াল গোলস অর্থাৎ আর্থিক লক্ষ্যপূরণ করতে সাহায্য করে, এবং ভোলাটিলিটি কাটিয়ে উঠতেও যথাযথ ভূমিকা পালন করে। এহেন মাল্টি অ্যাসেট গোত্রের ফান্ডের উপকারিতা সম্বন্ধে আলোচনার গোড়াতেই সংক্ষেপে কয়েকটি কথা বলে রাখি।
১.ডাইভারসিফিকেশন
২.রিস্ক ম্যানেজমেন্ট
৩.গ্রোথ
৪.ইনফ্লেশনের ‘হেজ’
বিশদে বলতে গেলে প্রথমেই যে প্রসঙ্গটি তুলে ধরতে হয়, তা হল মাল্টি অ্যাসেট ফান্ডের পোর্টফোলিওর বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্য আছে বলেই ডাইভারসিফিকেশন নিশ্চিত করা সম্ভব। ইক্যুইটি তো থাকেই, তারই সঙ্গে পাওয়া যায় ফিক্সড ইনকাম অর্থাৎ ঋণপত্র, গোল্ড এবং রিয়েল এস্টেট। বাজারে পাওয়া যায়, এমন যে কোনও মাল্টি অ্যাসেট ফান্ডের পোর্টফোলিও পরীক্ষা করুন, কী বলতে চাইছি-তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেয়ে যাবেন।
[আরও পড়ুন: ফ্লেক্সি ক্যাপ পোর্টফোলিওতে কেন লগ্নি করবেন? জানুন বিস্তারিত]
সোজা কথায়, ডাইভারসিফিকেশন হবে যথেষ্ট রকম এবং এই কারণেই মূলত রিস্কও কমবে। মনে রাখতে হবে, সংশ্লিষ্ট ফান্ড ম্যানেজার কেবল একটি বা দুটি অ্যাসেট ক্লাসের উপর নির্ভর করছেন না। তিনি একাধিক অ্যাসেট ক্লাসের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন টাকা কারণ তাঁর কৌশলের লক্ষ্যবস্তু হল সম্পদ বাড়ানো। এবং বড় রিটার্ন এনে দেওয়া। কোনও একটি অ্যাসেটের ভিত্তিতে তাঁর পোর্টফোলিও গঠিত নয়; ঝুঁকি তাই স্বাভাবিকভাবেই কম। যদি ইক্যুইটি মার্কেট হ্রাস পায়, তাহলে হয়তো গোল্ডের কারণে ফান্ডটি উন্নতি করবে। এখানে আমি সম্ভাবনার কথা বলছি, নির্দিষ্টভাবে কোনও বিশেষ অ্যাসেটের কথা হচ্ছে না।
খেয়াল রাখুন, রিস্ক থাকা নিয়ে ইনভেস্টররা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে, মাল্টি অ্যাসেট কৌশলের এক বিশেষ ভূমিকা থাকে। তুলনামূলক চর্চায় দেখা গেছে কোনও একটি অ্যাসেট যেখানে পিছিয়ে গিয়েছে, অন্য কোনও অ্যাসেটের দৌলতে ফান্ডটির বিশেষ ক্ষতি হয়নি। তার মানে এই স্ট্র্যাটেজি থাকার কারণে গ্রোথের সম্ভাবনা দেখা দেয়। ফান্ড ম্যানেজার ভাল ‘অপরচুনিটি’ খুঁজে নেন, নানা পরিস্থিতির মধ্যে গ্রোথের সুযোগ পাওয়া যায়। বিভিন্ন বাজারের টানাপোড়েনের মাঝে সেই সুযোগ চিহ্নিত করাই ফান্ডের পরিচালকদের লক্ষ্য। তাতেই বেশি রিটার্ন পাওয়া যেতে পারে। পরিচালকরা অবশ্যই দক্ষ প্রফেশনাল, তাঁরা নানা ‘অ্যাক্টিভ’ কৌশলের সাহায্য নেন। এভাবেই সময়োপযোগী অ্যাসেট অ্যালোকেশন এনে দেওয়া সম্ভবপর হয়। আর বিনিয়োগকারীরা নিজেদের রিস্ক-রিটার্ন প্রোফাইলের ভিত্তিতে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না, তারও পরীক্ষা হয়ে যায়।
এবার বলি আরও একটি প্রাসঙ্গিক কথা। অ্যাসেট অ্যালোকেশনের উপর নির্ভর করে ইনকাম জেনেরেশনের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। মাল্টি অ্যাসেট পোর্টফোলিওতে থাকে ফিক্সড ইনকাম সিকুইরিটিজ, আগেই বলেছি। ইন্টারেস্টজনিত উপার্জন তাই হওয়া সম্ভব, এবং কার্যক্ষেত্রে তাই হয়েও থাকে। লগ্নিকারী হিসাবে যদি আপনি ইনকাম চান, তাহলে এমন ফান্ডের হদিশ রাখবেন। এছাড়াও, মুদ্রাস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে এই জাতীয় পোর্টফোলিও থাকা বাঞ্ছনীয়, কারণ এখানে ‘হেজ এগেন্টস্ট ইনফ্লেশন’ প্রসঙ্গটি খুব জরুরি হয়ে ওঠে।
দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা যদি ঘরে তুলতে চান, তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য এমন পোর্টফোলিও যথাযথ বলে গণ্য হতে পারে। এই কারণেই অনেক ইনভেস্টর এগুলো পছন্দ করেন, নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝতে পারছি। আমি এ-ও দেখেছি যে, বহু সংখ্যক রক্ষণশীল তথা অবসরপ্রাপ্ত লগ্নিকারী এখানে বিনিয়োগ করেন। এঁদের ক্ষেত্রে তো বটেই, প্রায় প্রতিটি ইনভেস্টরের জন্য ট্যাক্সেশন একটি ভীষণ জরুরি প্রসঙ্গ। মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশনের ক্ষেত্রে ইক্যুইটি ট্যাক্সেশন সংক্রান্ত নীতি জেনে রাখা দরকার। এর মানে শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেনসের জন্য ১৫% আয়কর ধার্য হবে। এখানে শর্ট টার্ম মানে এক বছরের কম। আর লং টার্ম, এক বছরের বেশি হলে, ক্যাপিটাল গেনসের ক্ষেত্রে ১০% আয়কর ধার্য হবে।
[আরও পড়ুন: অসুখের যম, লাভেরও সুলুক-সন্ধান! বিনিয়োগ করুন হসপিটাল স্টকসে]
এই যে বিষয়গুলো আলোচনা করলাম, তার সঙ্গে আরও কিছু পয়েন্ট যোগ করতে চাই। আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেন, কেন আদৌ মাল্টি অ্যাসেট ধরনের বিকল্পে লগ্নি করবেন তাঁরা। কীভাবে এই ব্যাপারে এগিয়ে যাবেন, তারও পরামর্শ চান। সহজ ভাষায় উত্তর দিলাম।
১.মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদের কথা ভাবুন। অতি স্বল্প কাল লগ্নি করে হঠাৎ অনেক বড় সম্পদ গঠন, মাল্টি ক্যাপের খতিয়ে তা হওয়া কার্যত অসম্ভব। তাই মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন এমন চিন্তা।
২. এককালীন লগ্নি করতে চাইলে, করুন। সঙ্গে থাকুক ‘সিপ’ নামক অস্ত্র। সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্টের সহায়তায় মোট তহবিল বানানো দুস্কর নয় যদি যথেষ্ট সময় হাতে থাকে। সিপ করলে ‘রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং’ হওয়ার সুবিধা পাবেন, এ কথা নিশ্চয় জানেন।
৩.পুরনো দিনের রিটার্ন দেখে উদ্বেলিত হবেন না, ভবিষ্যতে পারফর্ম্যান্সের নিশ্চয়তা তা দিতে পারে না কখনওই।
৪. অন্য পাঁচরকম পোর্টফোলিওর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এই কথাটি, মাল্টি অ্যাসেটও ব্যাতিক্রমী নয়। অতীত পারফর্ম্যান্সের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করার বিপদ ভুলে যাবেন না।
৫.তার চেয়ে নিজের উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে এমন ফান্ডের পোর্টফোলিও নিয়ে আলোচনা করুন।
দেখে নিন কত অংশ আছে ইক্যুইটির ভাগে, আর অন্য অ্যাসেট ক্লাসগুলোর ভাগেই বা কত দেওয়া আছে। ইদানীং গোল্ড নিয়ে কৌতুহলী ইনভেস্টরদের সংখ্যা কম নয়। সোনায় লগ্নি নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। আর এর জন্যও মাল্টি অ্যাসেটের কার্যকারিতা নিঃসন্দেহে আছে। সোনা (এবং রুপো) নিয়ে আপনার ফান্ড ম্যানেজার কী ভেবেছেন, তা জানা যাবে তাঁর অ্যাসেটের বিন্যাস দেখলেই।