‘ইকুয়াল ওয়েট’-এর ভিত ধরে তৈরি হয়েছে এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বশেষ এনএফও। বাজার বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনক সাব্যস্ত হবে এটি। বিশদ ব্যাখ্যায় টিম সঞ্চয়
এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বশেষ এনএফও, ইনডেক্স ফান্ডের ক্রমবর্ধমান পরিসরে এক ঝলক টাটকা বাতাস বয়ে আনবে। বিষয়ের মূলে আছে ‘ইকুয়াল ওয়েট’-এর ধারণাটি। অর্থাৎ নিফটির অন্তর্গত প্রতিটি কোম্পানির স্টকের জন্য সমান ওয়েটেজ দেওয়া হবে এই ফান্ডটির ক্ষেত্রে। প্রথমে সূচকটি নিয়ে দু-চার কথা।
- নিফটি ফিফটি ইকুয়াল ওয়েট ইনডেক্স কোনও মার্কেট ক্যাপ বা পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করে না যেখানে ওয়েটেজের প্রশ্ন ওঠে।
- সমান মাপের ওয়েটেজ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিফটির নিজের ডাইভারসিফিকেশন, দুই-ই বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনক হবে বলে বাজারের একটি বড় অংশ বিশ্বাস করে।
- সমান ওয়েটেজ যাতে নিশ্চিত থাকে, সেই জন্য সূচকটিকে প্রতি কোয়ার্টারে রি-ব্যালেন্স করা হয়। অতএব লগ্নিকারীরা সূচকটির প্রতি নিজেদের আস্থা অটুট রাখবেন, এমনই মনে করা হয়।
[আরও পড়ুন: কেমন পারফরম্যান্স, খতিয়ান দিল ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক]
এই মূহূর্তে নিফটি দেশের সবথেকে বড় (পড়ুন জনপ্রিয়) সূচক, ভারতীয় বাজারে সর্বাধিক প্রচলিত ইনডেক্স। পঞ্চাশটি স্টকের মধ্যে বেশ কিছু সেক্টর ‘কভার’ করা যাচ্ছে। তবে তিন প্রধান অর্থনৈতিক ক্ষেত্র–ব্যাঙ্কিং/ফিনান্স, ইনফরমেশন টেকনোলজি এবং এনার্জি–থেকে প্রথম সারির কোম্পানিগুলোই এই সূচকের বড় নির্ধারক হিসাবে গণ্য। State Bank of India, HDFC Bank, ICICI Bank, Reliance Industries, Infosys, Wipro ইত্যাদির নাম এই প্রসঙ্গে করা যেতে পারে। এছাড়াও আছে বড় মাপের অটোমোবাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কনজিউমার সংস্থা। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির একটি জরুরি অংশ সব মিলিয়ে এই সূচকের অন্তর্গত।
‘সঞ্চয়’-এর সংযোজন– খেয়াল রাখতে হবে যে এই ইনডেক্সে ডাইভারসিফিকেশন যথেষ্ট হলেও, প্রতিটি স্টকই এক রকম ভূমিকা পালন করবে কারণ সমান ওজন নির্দিষ্ট করা হয়েছে প্রতিটির জন্য। তাই কেবল একটি (বা কয়েকটির) দ্রুত বেড়ে/কমে যাওয়ার উপর খুব বেশি নির্ভর করবে না। এছাড়াও বলে রাখা উচিত যে, এই বিশেষ এনএফওটির ক্ষেত্রে লং টার্ম ক্যাপিটাল গ্রোথই মূল আকর্ষণ। দীর্ঘ মেয়াদের কথা মনে রেখে নতুন ইনভেস্টররা এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন, ফান্ড কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন। তবে একইসঙ্গে মনে রাখা উচিত যে, রিস্কের মাত্রা ‘ভেরি হাই’ শ্রেণীর। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে লগ্নিকারীরা যেন অবশ্যই নিজেদের উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা সেরে নেন।
[আরও পড়ুন: সরকারি ব্যাঙ্কের স্টকেই বাজারে বাজিমাত! কেবল জেনে রাখুন এই বিষয়গুলি]
আরও একটি জরুরি শর্ত। যেটি ইনডেক্স ফান্ডের ক্ষেত্রে একশো শতাংশ প্রযোজ্য। এই শ্রেণীর ফান্ড কখনও বেছে নেওয়া সূচকটি অতিক্রম করার চেষ্টা করে না। তার মানে সংশ্লিষ্ট ফান্ডটিও একেবারে যথাযথভাবে ইনডেক্সের অনুকরণ করবে। সেটির রিটার্ন কখনও ইনডেক্সের রিটার্নকে ছাপিয়ে যাবে না। অবশ্য ‘ট্র্যাকিং এরর’ হতেই পারে নানা কারণে। এই জন্য অনেক ক্ষেত্রে একেবারে পুরোপুরি ইনডেক্সের পারফরম্যান্সকে অনুকরণ করতে ব্যর্থ হয় ইনডেক্স ফান্ড। কিছুটা বিচ্যুতি বহু ক্ষেত্রে হয়ে যায়। যে ইনডেক্স ফান্ডের ‘ট্র্যাকিং এরর’ কম, সেই ফান্ডটি ভালভাবে পরিচালিত হয়েছে, এ কথাও জোর গলায় বলা চলে।
আগামিদিনে বাজারের একটি বড় অংশ মনে করে, লার্জ ক্যাপ তো ভালো ফল দেখাবে। নিফটি ফিফটির অন্তর্গত সংস্থাগুলোই লার্জ ক্যাপের মধ্যে অগ্রণী। প্রথম পঞ্চাশটি স্টক অনেক কিছুই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতে। যে ইনভেস্টর এই তত্ত্বে বিশ্বাস করেন (এবং ইনডেক্স ফান্ডের উপর ভরসা রাখেন), তিনি এই জাতীয় ফান্ডের কথা ভাবতে পারেন। তবে এই জাতীয় বিষয়ে ‘সঞ্চয়’ কখনওই পক্ষপাতদুষ্ট নয়। লগ্নির সিদ্ধান্ত ইনভেস্টরের রিস্ক প্রোফাইল মেনে নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।