সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফিলিপিন্সের একটি গির্জায় জেহাদি হামলায় কমপক্ষে ২৭ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৭ জন সেনা, ২০ জন সাধারণ মানুষ। জখম হয়েছেন ১৪ জন সেনা জওয়ান, ২ পুলিশকর্মী ও ৬১ জন নগরিক। পুলিশের সন্দেহ, হামলা চালিয়েছে ইসলামিক স্টেট অথবা ইসলামিক স্টেটের প্রতি অনুগত আবু সয়াফ গোষ্ঠী। যদিও প্রতিবারের মতো এবারও হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীই।
দক্ষিণ ফিলিপন্সের ছোট্ট দ্বীপ সুলু রাজ্যের রাজধানী শহর জোলো। এখানে আছে সবচেয়ে বড় রোমান ক্যাথলিক গির্জা। গির্জাটির নাম ‘ক্যাথিড্রাল অফ আওয়ার লেডি অফ মাউন্ট কারমেল’। গোটা রাজ্যটি সন্ত্রাসবাদী অধ্যুষিত। উপদ্রুত এই এলাকায় গত পাঁচ দশকে বহুবার ইসলামিক জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে খ্রিস্টানদের জীবন ও সম্পত্তির উপর। অপহরণ, পণবন্দি করে অর্থ আদায়, খুন, বিস্ফোরণ, মুণ্ডচ্ছেদের জন্য কুখ্যাত আবু সয়াফ গোষ্ঠী।
[ছবিতেই গল্প বলা, ক্যামেরায় কীর্তিমান ‘ক্রোকোডাইল হান্টার’এর উত্তরসূরি]
১৯৯৭ সালে জোলো এলাকায় ওই চার্চেরই ক্যাথলিক বিশপ বেঞ্জামিন ডি জেসাসকে গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। এবারও তারাই হামলা চালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, রবিবার সকালেই গির্জার সেন্ট্রাল হলে জোরালো বিস্ফোরণ হয়। রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ঘটনাস্থলেই হতাহত হন প্রার্থনাকারীরা। কাছের সেনা শিবির থেকে সেনা ও পুলিশ ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হতেই গির্জার মাঠের মূল প্রবেশদ্বারের সামনে পার্কিং লটে আরেকটি বড় বিস্ফোরণ ঘটে। একটি বাইকের মধ্যে লুকানো ছিল টিএনটি জাতীয় শক্তিশালী বিস্ফোরক। সেখানে ভিড় ছিল বেশি। সেনা জওয়ানরা সাঁজোয়া গাড়ি চেপে ঘটনাস্থলে পৌঁছনো মাত্র দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটে। দ্বিতীয় বিস্ফোরণেই ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। দুটি বিস্ফোরণ মিলে নিহত হন ২৭ জন। জখমদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যা।
ফিলিপিন্স পুলিশের দাবি, এই সংগঠন প্রায়ই অপহরণ, বিস্ফোরণ ঘটায় এই দ্বীপে। জোলো দ্বীপটি মূলত মুসলিম অধ্যুষিত। কিন্তু ফিলিপিন্সে রোমান ক্যাথলিকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিচ্ছিন্নতাবাদী মুসলিম জনতা চায় আলাদ রাষ্ট্র। স্বশাসিত অঞ্চল গঠনের লক্ষ্যে এবারে তাদের ভোট ব্যাংকেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। যে কারণে অশান্তি তৈরির লক্ষ্যেই এই হামলা হল বলে মনে করছে ফিলিপিন্স সরকার। আলাদা রাষ্ট্র ও স্বশাসনের দাবিকে জোরদার করতেই গির্জায় এই হামলা চালিয়েছে ইসলামিক জঙ্গিরা।
[কাটল অচলাবস্থা, ৩৬ দিন পর খুলছে মার্কিন কোষাগার]
গত পাঁচ দশকে মুসলিম গেরিলাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী হামলায় এবং সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষে ফিলিপিন্সে দেড় লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জোড়া বিস্ফোরণের ধাক্কায় কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আগুন ধরে যায় গির্জায়। কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠতে থাকে কালো ধোঁয়া। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে দমকল। বিস্ফোরণের জেরে প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে গির্জার একটি বড় অংশ। ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে দেহগুলি বের করতে সময় লেগেছে। ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতের্তের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা করে জানানো হয়েছে, জঙ্গি হামলার মূল চক্রীদের চরম শাস্তি দেওয়া হবে। হামলায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার সবরকম ব্যবস্থা নেবে।