Advertisement
উত্তরের পাহাড়েও রয়্যাল গর্জন! দু'বছর পর নেওড়াভ্যালিতেও বাঘ গুনবে বনদপ্তর
নেওড়া ভ্যালির পাশাপাশি গরুমারা, চাপরামারির জঙ্গলেও বাঘ গণনার কাজ চলবে।
কথায় আছে মাঘের শীতে নাকি বাঘ পালায়! কিন্তু প্রচলিত এই প্রবাদ যেন পাল্টে দিয়েছে নেওড়া ভ্যালির প্রকৃতি। ২০১৭ সাল থেকে একাধিক সময় পাহাড়ি এই বনাঞ্চলে দেখা দিয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ রেচিলা, রুকা, ঋষিতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে দক্ষিণা রায়কে! সেই ছবিও ধরা পড়েছে বনদপ্তরের বসানো ট্র্যাপ ক্যামেরাতেও। আর তা দেখে আধিকারিকরা মনে করছেন, একটি দুটি নয়, একাধিক সংখ্যায় বাঘ রয়েছে দুর্গম পাহাড়ি এই জঙ্গলে। কিন্তু সংখ্যায় কত? তা নিশ্চিত হতেই দু'বছর পর ফের শুরু হতে চলেছে বাঘ গণনার কাজ।
নেওড়া ভ্যালির পাশাপাশি গণনা চলবে গরুমারা, চাপরামারির জঙ্গলেও। রয়্যাল বেঙ্গলের পাশাপাশি চিতাবাঘ-সহ ক্যাট প্রজাতির প্রতিটি প্রাণীই এই গণনার আওতায় থাকছে বলে জানা গিয়েছে। গণনা কর্মীদের কথা চিন্তা করে সুমারীর সময় জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহকে ভাবা হয়েছে। এই সময় শীতের তীব্রতা কমবে। কুয়াশাও দৃশ্যমানতায় ব্যাঘাত ঘটাবে না। এই সব দিক চিন্তা করেই জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহকে গণনার জন্য ভাবা হয়েছে বলে খবর। তবে এক, দুই সপ্তাহ নয়! অন্তত দেড় মাস ধরে এই গণনা প্রক্রিয়া চলবে বলে গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের বনাধিকারিক দ্বিজো প্রতিম সেন জানিয়েছেন।
সমতল থেকে ১১ হাজার ফুট উচুতে, ১৫৯.৮৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের অন্তর্গত এই নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান। ১৯৯৮ সালে প্রথম বাঘের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় নেওড়ার জঙ্গলে। পায়ের ছাপ। খাবারের উচ্ছিষ্ট। নখের দাগ সহ একাধিক প্রমান মিললেও প্রত্যক্ষ দর্শন বলতে ২০১৭ সাল। ওই বছর ১৯ জানুয়ারি ভোরে লাভা থেকে সামান্য দূরে পেদং যাবার রাস্তায় নিজের মোবাইল ক্যামেরায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি বন্দি করে বনমহলে চাঞ্চল্য ফেলে দেন আনমোল ছেত্রী নামে স্থানীয় এক যুবক।
এরপর বাঘের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে পাহাড়ি এই জঙ্গলের নানান জায়গায় ট্যাপ ক্যামেরা বন দপ্তরের তরফে লাগানো হয়। তাতে ওই বছর ২৩ জানুয়ারি প্রথম সরকারিভাবে একটি বাঘ নজরবন্দি হয়। যদিও মাঝে একটা বছর আর কোনও বাঘ দেখা যায়নি। যদিও ২০২২ সাল এবং ২০২৩ সালে ফের বাঘের ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়। যা নিয়ে বনকর্মীদের মধ্যে আশার আলো তৈরি হয়।
আরও বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর মধ্যে আবারও অর্থাৎ ২০২৪ সালে ফের ক্যামেরাবন্দি হয় একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। তবে গত বছর একাধিকবার বাঘের ছবি ধরা পড়ে। যদিও এই বছর এখনও পরজান্ত বাঘের দেখা পাওয়া যায়নি। তবে একাধিক প্রাণীর দেখা মিলেছে দপ্তরের বসানো ক্যামেরায়।
তবে আধিকারিকদের কথায়, ট্র্যাপ ক্যামেরায় বাঘ ধরা না পড়লেও জঙ্গলে প্রায় দিনই রয়্যাল বেঙ্গলের গতিবিধি আঁচ পাওয়া যায়। এই অবস্থায় পার্বত্য এই বন ভূমিতে জানুয়ারির এই সুমারীকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে বন দপ্তর।
বনাধিকারিক দ্বিজো প্রতিম সেন জানান, প্রত্যক্ষ ও পরক্ষ দুটো পদ্ধতিই প্রয়োগ করা হবে গননায়। থাকবে ট্র্যাপ ক্যামেরা। শতাধিক ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে। পায়ের ছাপ সহ একাধিক নমুনা সংগ্রহ করা হবে। যা পরীক্ষা করে একটি না একাধিক সংখ্যায় বাঘ রয়েছে তা বিশ্লেষন করে দেখা হবে। একই পদ্ধতি কাজে লাগানো হবে গরুমারা ও চাপরামারির জঙ্গলে। পরিবেশ কর্মী সংগঠনের সদস্যদেরকেও এই গণনায় নেওয়া হবে। আর সেজন্য বনকর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
Published By: Kousik SinhaPosted: 03:25 PM Dec 14, 2025Updated: 04:05 PM Dec 14, 2025
Sangbad Pratidin News App
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
