অভিরূপ দাস: ছাদে গেলেই গজাবে নতুন চুল। কাটবে অনিদ্রা রোগ। শয়ে শয়ে আয়ুর্বেদিক (Ayurvedic) ওষুধ মাথা দোলাচ্ছে সেখানে। এই প্রথম। রাজ্য সরকারি সহযোগিতায় বাড়ির মাথার চার দেওয়ালে মাথা তুলছে ভেষজ উদ্যান। যেখানে পাতায় পাতায় ব্রাহ্মী, কুলেখারা, জাতমানসি, অশ্বগন্ধা।
বছর দেড়েক আগের কথা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ওষুধ—বাগান করার পরিকল্পনা নেন ডাক্তার বাসব কান্তি দিন্দা। কোচবিহারে তাঁর ‘ভেষজ সুরক্ষা’ প্রকল্পের মাধ্যমে ছাদের উপর বাগান গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। বাগান যাঁরা করেছিলেন তাঁরা বাগানের ভেষজ গাছকে খাদ্য ও ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করে দারুন উপকার পেয়েছিলেন। এই প্রকল্প এবার বাড়িতে বাড়িতে ছড়িয়ে দিতে চায় রাজ্য সরকার। বাড়ির ছাদে গাছ লাগানোর অভ্যেস আখছাড় দেখা যায়। কিন্তু সেই গাছ যদি পাঁচটা অসুখ সাড়ায়? তা মাথায় রেখেই প্রতিটি বাড়ির ছাদের উপর ভেষজ বাগান গড়ার জন্য কোচবিহারের রাজবাড়ী পার্কে আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ অনুষ্ঠানের। যে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন জেলার উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শচীন্দ্রনাথ সরকার, সিনিয়র আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার বাসব কান্তি দিন্দা প্রমুখ। এই অনুষ্ঠানে ছাদের উপর ভেষজ বাগানের সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রায় ৪০ জন শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেককে ভেষজ গাছের চারা বিতরণ করা হয়।
[আরও পড়ুন: ইউরিক অ্যাসিড হলে কি টমেটো, পিঁয়াজ একেবারেই খাবেন না? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?]
নাটাবাড়ি ২—র স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা এই ‘ভেষজ সুরক্ষা’ প্রকল্পের মাধ্যমে ভেষজ বাগান করেছেন। ঔষধি গাছের উপকারিতা সমন্ধে মানুষকে অবহিত করে তাঁরা চারাগাছও বিক্রি করেছেন। এ’বছরেরই জানুয়ারি মাস থেকে প্রচুর মানুষ থেকে তাঁদের থেকে চারাগাছ কিনে নিয়েছেন। ছোট সেই গাছ বড় হতে হতে আস্ত ডাক্তারবাবু। বাড়ির ছাদের বনধনে গাছে পেটের ব্যথা ও ডায়রিয়া কমছে। পাথরকুচিতে ভাঙছে কিডনির পাথর। ইতিমধ্যেই যাঁরা ছাদে ভেষজ বাগান করেছেন এমনই চমকপ্রদ গল্প তাঁরা শুনিয়েছেন অনুষ্ঠানে এসে। বাড়ির ছাদে এমন বাগান করতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাঁদের বলা হয়েছে গাছের বরাত দিতে। চাহিদা অনুযায়ী চারা পৌঁছে দেবে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।
এদিকে, কোচবিহার রাজবাড়ী পার্কে জেলা আয়ুষ দপ্তর ভেষজ বাগানের উদ্বোধন করেছে। জেলার উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, এ বাগানে রয়েছে ১২ ধরনের ঔষধি গাছ। ব্রাহ্মী, কুলেখাড়া, স্টিভিয়া, জাতমানসি , ভৃঙ্গরাজের ছায়া পেতে ভিড় উপচে পড়বে আগামীতে। প্রতিটি গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম এবং কোন গাছের কি উপকারিতা তা গাছের পাশেই থাকবে প্লেটে লেখা। জেলা উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী এই বাগানে এসে অনেক কিছু জানতে পারবে। ঔষধি গাছের গুনাগুন মুখে মুখে ছড়িয়ে পরবে। বাংলার প্রতিটি বাড়ির ছাদই হয়ে উঠবে সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল।