সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আমেরিকা (USA) সফরে ইতিহাস গড়লেন প্রধানমন্ত্রী মোদি (PM Modi)। মার্কিন কংগ্রেসে বক্তব্য রাখলেন তিনি। আজ পর্যন্ত কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মার্কিন কংগ্রেসে দু’বার বক্তব্য রাখার সুযোগ পাননি। সারা বিশ্বে এই নজির গড়েছেন নেলসন ম্যান্ডেলা, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, উইনস্টন চার্চিল। এদিন মোদি ক্যাপিটল হিলে প্রবেশ করতেই কার্যত ‘মোদি মোদি’ হর্ষধ্বনিতে ভরে ওঠে চারপাশ। স্ট্যান্ডিং ওভেশন দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীকে। এদিনের অধিবেশনের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। স্ট্যান্ডিং ওভেশনের সময় উঠে দাঁড়ান তাঁরাও।
এদিন মোদির ভাষণে গণতন্ত্র থেকে করোনা টিকা, মঙ্গল অভিযান থেকে অর্থনীতি— নানা বিষয়ই উঠে আসে। সরস ভঙ্গিতে এদিন তাঁর বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। শোনান নিজের লেখা কবিতাও। ‘সামোসা ককাস’ বলে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসের সঙ্গে রসিকতাও করেন। পাশাপাশি তুলে ধরেন ভারতের অগ্রগতির কথাও। তিনি বলেন, ‘‘ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। এবং আমরা শিগগিরি তৃতীয় বৃহত্তম হতে চলেছি।’’
[আরও পড়ুন: ‘মোদির কাছে মণিপুরের কোনও গুরুত্বই নেই’, সর্বদলীয় বৈঠক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খোঁচা রাহুলের]
দেশের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের কথা বলতে গিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ভারতে ২২টি সরকারি ভাষা রয়েছে। কিন্তু আমরা কথা বলি এক স্বরে।’’ তিনি জানান, ‘‘এদেশে আড়াই হাজার রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি দল বিভিন্ন রাজ্য শাসন করে। এটাই এদেশের গণতন্ত্র।’’ করোনা টিকার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন, দেশের ৫০ কোটি মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবার কথাও। মনে করিয়ে দেন, সংখ্যাটা দক্ষিণ আমেরিকার জনসংখ্যার থেকেও বেশি।
কেবল ভারত নয়, গোটা বিশ্বের ঐক্যের কথাও বলেন মোদি। মনে করিয়ে দেন, ‘বসুধৈব কুটুম্বকমে’র কথা। যার অর্থ ‘এই বিশ্ব এক পরিবার।’ বলেন, ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার এক ভবিষ্যৎ।’ পরিবেশরক্ষার বার্তাও দেন। দূষণরোধে ‘গ্রিন এনার্জি’র গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেন।
এরই পাশাপাশি আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন মোদি। জানিয়ে দেন, ওয়াশিংটন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। আমেরিকার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার পাশাপাশি ভারতে লগ্নির আহ্বানও জানান মার্কিন ব্যবসায়ীদের। ভারত যে আমেরিকার সঙ্গে মহাকাশ, বিজ্ঞান, সমুদ্র নানা বিষয়েই একসঙ্গে কাজ করে চলেছে সেকথাও তুলে ধরেন।
নাম না করেই চিনকেও আক্রমণ করেন মোদি। মনে করিয়ে দেন, ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বেজিংকে বার্তা দেন তিনি। তাঁর কথা থেকে স্পষ্ট করে দেন, আন্তর্জাতিক আইন মানতে হবে। কারও অকারণ একাধিপত্য চলবে না। প্রধানমন্ত্রী খোঁচা দেন পাকিস্তানকেও। ৯/১১’র দু’দশকের কথা বলতে গিয়ে মুম্বই হামলার উল্লেখ করে ইসলামাবাদকে কাঠগড়ায় তোলেন তিনি। এরই পাশাপাশি রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের আহ্বানও জানান তিনি।
চারদিনের ঐতিহাসিক মার্কিন সফরে গিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi in US)। ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) জমানার ‘হাউডি মোদি’র পর এবার জো বাইডেন (Joe Biden) সাক্ষাতে গিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এই নেতা। বিশ্বের কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর এই সফরকে। সব মিলিয়ে বলাই যায় ‘মোদি-জ্বরে’ ভুগছে আমেরিকা।