আশিস গুপ্ত, দুবাই: দুবাইতে রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘কপ ২৮’-এর শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার বলেছেন, ভারত ২০২৮ সালে কপ ৩৩ আয়োজন করার প্রস্তাব দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমনে ভারত ৪ শতাংশের কম অবদান রাখে বলে উল্লেখ করে মোদি বলেছেন, বিশ্বের উন্নয়ন বাস্তুশাস্ত্র এবং অর্থনীতির মধ্যে দুর্দান্ত ভারসাম্য বজায় রেখে ভারত একটি মডেল উপস্থাপন করেছে।
বৃহস্পতিবার দুবাইয়ের এক্সপো সিটি ২০২০-তে শুরু হওয়া জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের ২৮তম সংস্করণটি ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। মোদির দুবাইয়ে প্রায় ২১ ঘণ্টা অবস্থানের সময় সাতটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে, চারটি বক্তৃতা দেবেন এবং জলবায়ু সংক্রান্ত দুটি বিশেষ উদ্যোগের অংশ হবেন। কপ ২৮ সভাপতি সুলতান আল জাবের এবং রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের সভাপতি সাইমন স্টিলের সঙ্গে মোদিই একমাত্র নেতা ছিলেন যিনি উদ্বোধনী প্লেনারিতে যোগদান করেছিলেন।
২০১৫ সালে প্যারিস এবং ২০২১ সালে গ্লাসগো সফরের পরে মোদি তৃতীয়বারের মতো বিশ্ব জলবায়ু অ্যাকশন সামিটে উপস্থিত হলেন। তাঁর ভাষণে তিনি গ্রিন ক্রেডিট ইনিশিয়েটিভের প্রস্তাব করেছেন, যা জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। কপ ২৮-এর শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে তাঁর ভাষণে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমনের তীব্রতা ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং অ-জীবাশ্ম জ্বালানির অংশ ৫০ শতাংশে বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের জন্য উচ্চস্তরের সেগমেন্টে ভাষণ দিতে গিয়ে মোদি বলেছেন যে ভারত বিশ্বের কাছে উন্নয়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার একটি দুর্দান্ত উদাহরণ উপস্থাপন করেছে। তিনি বলেন, ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সময়সীমার ১১ বছর আগে তার নির্গমন তীব্রতার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। তিনি আরও বলেন যে ভারত তার জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানের লক্ষ্য অর্জনের পথে রয়েছে। তিনি বলেন, “গত শতাব্দীর ভুল সংশোধন করার জন্য আমাদের কাছে বেশি সময় নেই।” মোদি তাঁর ভাষণে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন , “সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিশ্বাস বেড়েছে যে বিশ্বের কল্যাণের জন্য সকলের স্বার্থ রক্ষা করা প্রয়োজন। আপনারা আমার দ্বারা উত্থাপিত জলবায়ু ন্যায়বিচার, জলবায়ু অর্থায়ন এবং সবুজ ঋণের বিষয়গুলিকে ক্রমাগত সমর্থন করেছেন।”
[আরও পড়ুন: রেকর্ড ১ লক্ষ ৪০ হাজার ভারতীয় পড়ুয়াকে ভিসা আমেরিকার]
সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর প্রেসিডেন্ট শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন থেকে তৈরি হওয়া সমস্যা সমাধানের জন্য ৩০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করে আশা প্রকাশ করেছেন চলতি দশকের শেষ নাগাদ ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের দিকে নিয়ে যাবে।
শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিটেনের রাজা চার্লস বলেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্ব ‘ভয়াবহভাবে অনেক দূরে’ এবং পরিবেশ দ্রুত মেরামত না করা হলে বিশ্ব অর্থনীতি বিপদে পড়বে। তিনি বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ আর দূরের ঝুঁকি নয় এবং তাদের আরও বড় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হবে। পৃথিবী আমাদের নয়। আমরা পৃথিবীর অন্তর্গত।” রাজা, যাঁর ভূমিকা আনুষ্ঠানিক কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর আমন্ত্রণে। তার বক্তৃতায় কোনও গোষ্ঠীকে আলাদা করেননি, ব্রিটেনের রাজা হিসাবে তাঁর প্রথম প্রধান জলবায়ু ভাষণ। পরিবর্তে, তিনি বহুপাক্ষিক সংস্থা এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে, বিমা ক্ষেত্রের ভূমিকা এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে উদ্ভাবনের গতি বাড়ানোর বিষয়ে কথা বলেছেন।