সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রায় ৪০ বছর পর গ্রিসে পা পড়ল কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর। শেষবার, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ১৯৮৩ সালে এজিয়ান সাগর তীরে দেখা গিয়েছিল ইন্দিরা গান্ধী। তারপর থেকেই ভারতীয় নীতি নির্ধারকদের মানচিত্রে কার্যত কৌলিন্য হারায় এথেন্স। এই প্রেক্ষাপটে মোদির গ্রিস সফরের নেপথ্য কাহিনি নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, তুরস্কের উপর চাপ বাড়াতেই এই চাল।
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে বারবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে খোঁচা দিয়েছে তুরস্ক। ২০২২ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় কাশ্মীর প্রসঙ্গ তোলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়েপ এরদোগান। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তার আগেই উজবেকিস্তানে এসসিও সম্মেলন চলাকালীন এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দু’জনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। শুধু কাশ্মীর প্রসঙ্গে নয়, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও বারবার পাকিস্তানের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে তুরস্ক। হামলাকারী ড্রোন বিক্রির প্রসঙ্গে এরদোগান সরকারের বক্তব্য , ভবিষ্যতে কোনও দিনই নয়াদিল্লিকে হামলাকারী ড্রোন বিক্রি করবে না আঙ্কারা। প্রসঙ্গত, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের ড্রোনের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, তুরস্কের ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েই রুশ বাহিনীকে রুখে দিয়েছে ইউক্রেনের সেনা।
[আরও পড়ুন: ‘বিশ্বের প্রাচীনতম দুই সভ্যতার মিলন মহান’, সক্রেটিসের দেশে বার্তা মোদির]
এই প্রেক্ষাপটে সমরনীতির সূত্র মেনেই আঙ্কারার দুর্বল জায়গায় আঘাত হানতে সচেষ্ট হয়েছে নয়াদিল্লি। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, সাইপ্রাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাদ চলছে গ্রিস ও তুরস্কের। অতীতে তা যুদ্ধে গড়িয়েছে। তাই ‘শত্রুর শত্রু বন্ধু’ নীতি মেনেই গ্রিসের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক মজবুত করতে চাইছেন মোদি। শুক্রবার, গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিসের সঙ্গে যৌথভাষণে তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “প্রায় চল্লিশ বছর পর কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এখানে পা রেখেছেন, কিন্তু সম্পর্কের উষ্ণতা বিন্দুমাত্র কমেনি। আমরা কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়িয়ে তোলা হবে।”
উল্লেখ্য, ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত সাইপ্রাস একটি দ্বীপরাষ্ট্র। ভৌগলিক অবস্থানের জন্যই রাষ্ট্রটির কৌশলগত গুরুত্ব অনেক। সেদেশে গ্রিক, রোমান, আরব, ফরাসি ও তুরস্কের হানাদাররা বিভিন্ন সময় এই দ্বীপের দখল নেয় ও শাসন করে। ১৯৭৪ সালে সাইপ্রাস আক্রমণ করে তুরস্ক। পালটা যুদ্ধে মানে গ্রিস। ফলে দ্বীপটি রাজনৈতিক, সামরিক ও গোষ্ঠীগতভাবে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে সাইপ্রাস। বর্তমানে, নর্থ সাইপ্রাস বা ‘টার্কিশ রিপাবলিক অফ নর্দান সাইপ্রাস’ – সাইপ্রাসের উত্তরাঞ্চলের নাম৷ বর্তমানে শুধু তুরস্ক এই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র মনে করে৷ বাকি অংশের নিয়ন্ত্রণ পরোক্ষে গ্রিসের হাতেই। ফলে আঙ্কারা কাশ্মীর নিয়ে খোঁচা দিলে পালটা সাইপ্রাস প্রসঙ্গ তুলবে ভারত। মোদির সফর এই ইঙ্গিতই দিল।