সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জন্মের পর বাবা-মাকে দেখেনি। বাবা-মার পরিচয় আজও অজানা। যে ঘরে বড় হয়ে ওঠে তাদের দেওয়া নামেই এখন নিজের পরিচয়। রবি গুপ্তা। বিহারের পাটনার বেয়ুর জেলে বন্দি। এখন অবশ্য পুরুলিয়া জেলা পুলিশের সিটের হেফাজতে। গত ২৯ আগস্ট পুরুলিয়া ও রানাঘাটে স্বর্ণ বিপণিতে ডাকাতির ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড রবি গুপ্তার নাম এখন রাজ্যের তাবড় পুলিশকর্তাদের মুখে মুখে। আট-আটটা মামলায় সে যে জেল খাটছিল বেয়ুর সংশোধনাগারে। বলা ভালো জেলে থেকেই দেশজুড়ে সোনার দোকানে ডাকাতির অপারেশন চালাত।
২০০২ সাল থেকে পুরুলিয়া ও রানাঘাটের মতো কত যে সোনার দোকানের ডাকাতির অপারেশনের ব্লু প্রিন্ট নিজের হাতে তৈরি করেছিল তা জানতে খাতা-কলম নিয়ে বসতে হবে পুলিশকে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের সিট ওই ধৃত মাস্টারমাইন্ডকে জেরা করে এইসব তথ্যই জানার চেষ্টা করছে। কিন্তু সব তথ্য সহজে মিলছে না। ফি দিন পুলিশের দীর্ঘ প্রশ্নমালা থাকলেও তার উত্তর মিলছে অনেকটাই কম। ধৃত মাস্টারমাইন্ডকে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আগেই ওই জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসেছিলেনপুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
জেরায় পুলিশ জানতে পারে, একেবারে ছেলেবেলা থেকেই সে গ্যারেজে কাজ করতো। ওই গ্যারেজে কাজ করার সময়ই ‘বাবলু’ নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারপরেই তার অপরাধ জগতে হাতেখড়ি। প্রথমে সামান্য চুরি। তারপর ডাকাতিতে হাত পাকানো। আর এখন জেলে বসেই ‘ক্রিমিনাল গ্যাং’ খুলে ফেলেছে। যেখানে কাজ করে প্রায় ৭০০-র মতো যুবক। ধৃত রবির তত্ত্বাবধানেই এই গ্যাং সক্রিয় বিহারের বিভিন্ন শহরে। যারা বিভিন্ন দেশজুড়ে ডাকাতির মতো অপরাধ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
তবে এমন অপরাধে হাত পাকানোর পরেও ঘর-সংসার করেছে রবি। সন্তানও আছে। এই সমস্ত তথ্য পুরুলিয়া জেলা পুলিশের হাতে এলেও রবির বড় হয়ে ওঠা, গ্যারেজে কাজ করতে করতে ‘গ্যাং লিডার’ বনে যাওয়ার গল্প এখনও সবটা উদ্ধার করতে পারেনি পুরুলিয়া জেলা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। জেলে বসে অপরাধের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করা রবির সহযোগী কারা তা বিশদে জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। সরষের মধ্যেই কোন ভূত নেই তো? এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।
[আরও পড়ুন: যাদবপুর কাণ্ডে চার্জশিট পেশ, যৌন নির্যাতন থেকে বাঁচতে ছাদ থেকে ঝাঁপ ছাত্রের, দাবি পুলিশের]
কারণ, জেলের মধ্যে কোন যোগসাজশ না থাকলে একাধিক মামলায় বন্দি থাকা ৭০০ জনের ‘ক্রিমিনাল গ্যাং’ চালানো সহজ ছিল না। বিভিন্ন সোনার দোকানের ডাকাতির পর ভাগ-বাটোয়ারার টাকা কিভাবে রবির হাতে আসতো এটাও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। জেলে বসেই সেই টাকা রবি বিভিন্ন কাজে খরচ করত? নাকি অন্য কোন মাধ্যম ছিল এই বিষয়টিও জানার চেষ্টা হচ্ছে।
তার অধীনে থাকা ৭০০ জনের নাম, ঠিকানা, পরিচয় জেনে তারও তালিকা তৈরি করবে সিট। আসলে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ চাইছে, এই ‘ক্রিমিনাল গ্যাং’ কে সম্পূর্ণভাবে দমন করতে। তাই ধৃতের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পেয়ে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের টিম বুধবার আবার পাটনার বেয়ুর রওনা দিয়েছে।