দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: দিল্লিতে লিভ ইন পার্টনারকে খুনের পর দেহাংশ ৩৫ টুকরো করার ঘটনা নিয়ে জোর শোরগোল। সময় যত গড়াচ্ছে ততই সামনে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেই ঘটনা থেকেই কিনা ‘অনুপ্রাণিত’ হয়ে বারুইপুরে প্রাক্তন নৌসেনাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। বিস্ফোরক দাবি নিহতের ছেলের। অভিযুক্তকে সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে স্থানীয় এলাকা থেকে উদ্ধার নৌসেনার দেহের নিম্নাংশ।
নিহত প্রাক্তন নৌসেনা কর্মীর স্ত্রী ও ছেলেকে জেরা করে নানা তথ্য হাতে আসছে পুলিশের। খুনের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ঠিক কী পরিকল্পনা করেছিল মা ও ছেলে, তা জেরায় স্বীকার করেছে তারা। প্লট সাজাতে ঊজ্জ্বল চক্রবর্তীর নিত্যদিনের অভ্যাসকেই মূলত হাতিয়ার করেছিল দু’জনে। প্রাক্তন নৌসেনা কর্মী ঊজ্জ্বল চক্রবর্তী বর্তমানে একটি সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। ধৃতেরা জানায়, গত ১৪ নভেম্বর রাত থেকে ঊজ্জ্বলবাবু ‘নিখোঁজ’ হয়ে গিয়েছেন বলেই এলাকায় রটিয়ে দেয় তারা। প্রতিবেশীদের তারা জানান, মদ্যপান করতে বেরনোর পর আর বাড়ি ফেরেননি ঊজ্জ্বলবাবু। এমনকী বারুইপুর থানায় ‘ভুয়ো’ নিখোঁজ ডায়েরি করে। তারপর বৃহস্পতিবার রাতে উদ্ধার হয় দেহাংশ। ওই দেহাংশ হাতে পাওয়ার পর থেকে গোটা ঘটনা প্রায় জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায় তদন্তকারীদের হাতে।
[আরও পড়ুন: সব লড়াই শেষ, না ফেরার দেশে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা]
নিহত প্রাক্তন নৌসেনা কর্মীর স্ত্রীর দাবি, ঊজ্জ্বল প্রতিদিন নেশা করতেন। মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে নিত্যদিন স্ত্রী ও ছেলের উপর নির্যাতন করতেন তিনি। পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র ঊজ্জ্বলের খুনের ঘটনায় ধৃত ছেলে। তাকে পড়াশোনার খরচও দিতে চাইতেন না প্রাক্তন নৌসেনা কর্মী। তা নিয়ে প্রায়শয়ই ঝামেলা হত। ঘটনার রাতেও তাই হয়। রাগের বশে বাবাকে জোরা ধাক্কা দেয়। তাতে তিনি পড়ে যান। এরপর শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় প্রাক্তন নৌসেনা কর্মীকে। এরপর শৌচাগারে নিয়ে গিয়ে রাত সাড়ে ৯টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টে পর্যন্ত দেহ করাত দিয়ে কাটা হয়। বাবার দেহ মোট ৬টি টুকরো করে। শ্বাসরোধ করে খুন, দেহ খণ্ডবিখণ্ড করা এবং দেহ লোপাটের ক্ষেত্রে ছেলেকে সবরকম সাহায্য করে মা।
ধৃত যুবকের দাবি, এরপর প্লাস্টিকে মুড়ে বাবার দেহাংশ নিয়ে সাইকেলে চড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় মা ও ছেলে। সেই সময় নিজের কোলে স্বামীর ধড় বসিয়ে যায় প্রাক্তন নৌসেনা কর্মীর স্ত্রী। বারুইপুর-মল্লিকপুর রোডের ডিহি এলাকার একটি পুকুর থেকে ঊজ্জ্বল চক্রবর্তীর অর্ধেক দেহ ফেলা হয়। তার আশপাশের জঙ্গলে কোমর এবং কাটা পা ফেলে দেওয়া হয়। নিহতের ছেলের দাবি, দিল্লিতে খুনের পর লিভ ইন পার্টনারের দেহ ৩৫ টুকরো করার ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে একাজ করেছে সে।
রবিবার সকালে নিহতের ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ওই এলাকায় যায় বিশাল পুলিশবাহিনী। বারুইপুর থানার আইসির নির্দেশে পুকুরটিতে ডুবুরি নামিয়ে চলে জোর তল্লাশি। তবে সেখান থেকে কিছুই পাওয়া যায়। তবে পুকুর থেকে কিছুটা দূরে জঙ্গল থেকে প্রাক্তন নৌসেনা কর্মীর দেহের নিম্নাংশ উদ্ধার করা হয়। সেগুলি পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে।