সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রেল শহর আদ্রার তৃণমূল নেতাকে খুন করতে গত জানুয়ারি মাসেই টার্গেট নিয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। ‘স্থানীয় শুটার’ দিয়ে ওই হত্যাকাণ্ড করতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। আদ্রা শহর তৃণমূল সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবে খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারী ধৃত আরজু মালিককে জেরা করে এই তথ্য পেয়েছে এই খুনের ঘটনার তদন্তে গঠিত হওয়া পুরুলিয়া জেলা পুলিশের স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা ‘সিট’। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ” জানুয়ারি মাসেও টার্গেট নিয়েছিল মূল ষড়যন্ত্রকারীরা। সেই সময় ‘স্থানীয় শুটার’ ছিল।” এদিকে নিহত তৃণমূল নেতার শরীর থেকে ও দলীয় কার্যালয়ের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া গুলি ধৃত আরজু মালিকের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র থেকেই চালানো হয়েছিল কিনা তা জানতে ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠাচ্ছে পুলিশ।
আদ্রা ডিভিশনের রেলের সিন্ডিকেট নিয়ে বিবাদের জেরে নিহত তৃণমূল নেতা ধনঞ্জয় চৌবেকে আগে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সেই বিষয়ে সতর্ক ছিলেন তিনি। ফলে বুঝে শুনে চলাফেরা করতেন। বেশ কিছুদিন আগে পর্যন্ত তিনি নিয়মিতভাবে দলীয় কার্যালয়ে রাতের বেলায় বসতেন না। কিন্তু ধীরে ধীরে ওই তৃণমূল নেতা আবার স্বাভাবিক চলাফেরা করতেই এই ঘটনা ঘটে যায়। এই ঘটনায় ধৃতদের জেরা করে এইসব তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: খুন নাকি আত্মহত্যা? ভোটের আগে BJP বুথ সভাপতির রহস্যমৃত্যুতে সবংয়ে চাঞ্চল্য]
ধৃত আরজু মালিকের সঙ্গে এই ঘটনায় আগেই গ্রেপ্তার হওয়া কুখ্যাত দুষ্কৃতী মহম্মদ জামালের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে বুধবার দীর্ঘক্ষণ জেরা চলে। ওই জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব থেকে বেশ কিছু তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে। ভাড়াটিয়া খুনিরা যে মোটর বাইক নিয়ে এসেছিল তা ছিল চুরি করা। সেই বাইকের মালিকের নাম পাওয়া গেলেও সেটা তারই কিনা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গত ২২ জুন সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ পুরুলিয়ার রেলশহর আদ্রার পুরাতন বাজারে তৃণমূল কার্যালয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান আদ্রা শহর তৃণমূল সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত আরজু তার স্ত্রীকে গণধর্ষণের মামলায় ঝাড়খন্ড পুলিশের খাতায় ‘ওয়ান্টেড’ হওয়ার পরেই আদ্রা ডিভিশনের এই রেলের সিন্ডিকেটে তার ক্ষমতা খর্ব হতে শুরু করে। ফলত ‘বখরা’র পরিমাণ কমতে থাকে। সে তার আদি বাড়ি বিহারের জামুইতে ঘাঁটি গেড়ে সেখান থেকেই সিন্ডিকেটরাজ চালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সম্প্রতি এই কাজে তাকে ধাক্কা খেতে হয়। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এই নিহত তৃণমূল নেতা ধনঞ্জয় চৌবে। সেই কারণেই গত জানুয়ারি মাসেই খুনের টার্গেট নেয় ষড়যন্ত্রকারীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বিতীয় দফায় এই অপারেশন করতে তারা একাধিকবার রেইকি করে। ভাড়াটিয়া খুনিরা ট্রেনে করেই এসেছিল। অপারেশনের সময় মোটরবাইক ব্যবহার করে। পরে সেই বাইক ফেলে দিয়ে ট্রেনেই ফিরে যায়, তদন্তে এমন তথ্যই উঠে আসছে।