shono
Advertisement

পড়া যাচ্ছে না চিকিৎসকদের হাতের লেখা, অপাঠ্য প্রেসক্রিপশনে প্রাণ সংকটে রোগীরা

দেশে প্রেসক্রিপশনের ত্রুটি নিয়ে সমীক্ষা রয়েছে। যার ফলাফল মারাত্মক!
Posted: 01:12 PM Mar 07, 2022Updated: 01:12 PM Mar 07, 2022

অভিরূপ দাস: লেখা ছিল ‘duodil’। আনা হল ‘daonil’। খিঁচুনির বদলে মধুমেহর ওষুধ। যা খেয়ে রোগী কাহিল। মারাত্মক এ ভুলের নেপথ্যে চিকিৎসকের হাতের লেখা। যা উদ্ধার করতে পারেনি ওষুধের দোকান।

Advertisement

এ ঘটনা গল্প নয়। দিনের আলোর মতো সত্যি। অসমের এক প্রখ্যাত সাংবাদিকের পুত্রবধূর সঙ্গে এমনটা ঘটার পর শিউরে উঠেছিল রোগীর পরিবার। বঙ্গের একাধিক চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন উদ্ধার করতে গিয়ে কালঘাম ছোটে দোকানিদের। অগুনতি রোগী তাই ডাক্তার দেখিয়ে তৎসংলগ্ন ওষুধের দোকান থেকেই দাওয়াই কেনেন। কারণ? “পাড়ার দোকান ওই নাম পড়তে পারবে না।” জানিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা দেবাদৃতা হাজরা।

প্রেসক্রিপশন লেখা নিয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার গাইডলাইন রয়েছে। এ গাইডলাইনের নেপথ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের চিলুকুরি পরমাথমা। “পরিষ্কার হাতের লেখার প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে।” এমন দাবি নিয়ে যিনি হায়দরাবাদ হাইকোর্টে মামলা ঠুকেছিলেন। এরপরই মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার ২১১ (২) ২০১৬ এথিক্স/১৩১১৮। যেখানে স্পষ্ট বলা রয়েছে চিকিৎসককে প্রেসক্রিপশনে পরিষ্কার ভাবে লিখতে হবে। জড়িয়েপেঁচিয়ে নয়, লিখতে হবে বড় হাতের লেখায়। প্রেসক্রিপশন লেখার কালি হতে হবে চিরস্থায়ী। জলে ধুয়ে তা যেন উঠে না যায়। বাস্তব ক্ষেত্রে যা মানেন না অনেক চিকিৎসকই। যার ফলে অগুনতি রোগীর মৃত্যু। আমেরিকার ইনস্টিটিউট অফ মেডিসিনের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ফি বছর সে দেশে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৪৪ হাজার মানুষের। যার মধ্যে ৭ হাজার রোগীর মৃত্যু হয় স্রেফ প্রেসক্রিপশন পড়তে না পারার কারণে। বাংলা নিয়ে আলাদা সমীক্ষা না হলেও দেশে প্রেসক্রিপশনের ত্রুটি নিয়ে সমীক্ষা রয়েছে।

[আরও পড়ুন: ‘বিধানসভায় ভাষণের সরাসরি সম্প্রচার হোক’, রাজভবনের বৈঠকে স্পিকারকে বললেন রাজ্যপাল]

প্রেসক্রিপশনে ভুল হাতের লেখা ‘চিকিৎসায় অবহেলা’—র মধ্যেই পড়ে। ২০১৭ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এ দেশে এক সমীক্ষা চালিয়ে বলে, এ দেশে ৫০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় চিকিৎসা সংক্রান্ত অবহেলায়। প্রেসক্রিপশন বোধগম্য না হওয়ায় ভুল ওষুধ খেয়ে মৃত্যু হয় প্রায় ১ লক্ষ মানুষের। জড়ানোপেঁচানো হাতের লেখা উদ্ধার করতে পারেন না ওষুধের দোকানিও। ভাল হাতের লেখা সম্পদের মতো। মহাত্মা গান্ধীর এ বাণী সবচেয়ে বেশি দরকার চিকিৎসা পেশায়। জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি নির্মল মাজি।
ডা. সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের কথায়, অনেক চিকিৎসকই ব্যস্ত। চেম্বারের বাইরে অগুনতি রোগীর ভিড় থাকলে আস্তে আস্তে লেখা সম্ভব হয় না। তবে সেক্ষেত্রে রোগীদেরও দোষ দেখছেন না তিনি। প্রবীণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, এই সমস্যা তখনই মিটবে, যখন সমস্ত প্রেসক্রিপশন ডিজিটাল ফর্মে লেখা হবে। কম্পিউটারে প্রিন্ট হয়ে বেরোলে দূর হবে হাতের লেখা না বোঝার সমস্যা। শহরে হাতেগোনা কিছু বড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কম্পিউটারে লিখে ছাপানো প্রেসক্রিপশন দিলেও, সিঙ্গল চেম্বারে, মফস্বলের অগুনতি চিকিৎসক এখনও হাতে লেখা প্রেসক্রিপশনই দেন। যার লেখা উদ্ধার করতে হিমশিম খান অনেকেই। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, রোগীর কথা ভেবে ক্যাপিটাল লেটারে লিখতেই হবে। একই সঙ্গে প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করতে হবে ওষুধের জেনেরিক নাম।

[আরও পড়ুন: অন্যের নাম ভাঁড়িয়ে নার্সিংহোম তৈরির তোড়জোড়! ফের কলকাতায় গ্রেপ্তার ২ ভুয়ো ডাক্তার]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement