ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: তৃণমূলের ভোট কৌশলী হিসাবে বেশ কয়েকমাস হল রাজ্যে কাজ শুরু করেছেন প্রশান্ত কিশোর। কিন্তু দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অভিমান, পিকে’র সঙ্গে এখনও দূরত্ব কমেনি। সেই দূরত্ব কমাতে এবার তাঁকে তৃণমূল স্তরে পাঠানোর পরিকল্পনা দলের। নানা কর্মসূচিতে পিকে’র কাছে পরামর্শ চেয়ে নিচ্ছে শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই পর্বেই এবার দলীয় ছোট বৈঠকে প্রশান্তকে সামনে এগিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্বের মত, প্রশান্ত কিশোরকে সব বৈঠকে সামনে রাখা হবে। তিনি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন, তথ্য আদানপ্রদান করবেন। প্রয়োজনে একাধিক পরামর্শ দেবেন। গোটা প্রক্রিয়ায় পাশে থাকবে দলীয় নেতৃত্ব।
সদ্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসি নিয়ে সরাসরি ময়দানে নেমেছেন প্রশান্ত কিশোর। নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসকেও ছাড়েননি জেডিইউ-এর এই নেতা। এই ইস্যুতে পাঞ্জাব, কেরল, দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গ সরাসরি সরকারিভাবে বিরোধিতায় নামলেও আর কোনও রাজ্য পরিষ্কার বিরোধিতার কথা বলছে না। এমন একটা ইস্যুতে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে যেমন তৃণমূল পথে নেমেছে, তেমনই তাদের নির্বাচনী কৌশলীও পৃথকভাবে প্রকাশ্যে এসেছেন। নিজের মত প্রকাশ করছেন। এমনকী, দলগত কৌশলও নেওয়া হয়েছে। সংগঠনে প্রত্যেক সপ্তাহে জেলাওয়াড়ি বৈঠক হচ্ছে। সেই বৈঠকে এতদিন দেখা গিয়েছে প্রশান্ত নিরপেক্ষ ভূমিকায় ছিলেন। কখনও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে তিনি নানা কথাবার্তা শুনেছেন মন দিয়ে। পরিস্থিতি বুঝে সেখান থেকে বিদায় নিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: নারী সুরক্ষায় নামছে কলকাতা পুলিশের নয়া মহিলা ব়্যাফ ব্যাটালিয়ন, প্রস্তুতি জোর কদমে ]
তাতে দলের নিচু স্তরের কর্মীদের মধ্যে তাঁকে ঘিরে নানা প্রশ্ন জেগেছে। নানাভাবে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অভিমানের কথাও এসে পৌঁছেছে যে, প্রশান্ত তাঁর দলের পরামর্শদাতা। অথচ, তিনি সরাসরি কারও সঙ্গেই কথা বলছেন না সেভাবে। নিদেনপক্ষে কিছু প্রশ্নও করছেন না। একাধিক জেলা নেতৃত্ব একযোগে জানিয়েছে, তৃণমূল স্তরে তথ্য পাওয়া যাবে তৃণমূল স্তরে মেলামেশা করলেই। সেই কাজটাও প্রশান্ত কিশোর করছেন তাঁর টিম নামিয়ে। শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে যেভাবে তিনি দলকে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন, সেভাবেই নিচু স্তরের নেতা-কর্মীরাও চান যে তাঁদের থেকে তিনি তথ্য নিন।”
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানাচ্ছে কর্মীদের মনোভাবের কথা দল বোঝে। সেই কারণেই এমন সিদ্ধান্ত। এক শীর্ষনেতার কথায়, “আমরা ইতিমধ্যে প্রশান্তকে সামনে এগিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছি। দলীয় বৈঠকে প্রশান্ত সকলের সঙ্গে কথা বলছেন। প্রয়োজনীয় তথ্য নিচ্ছেন। দরকারমতো পরামর্শ দিচ্ছেন।” সদ্য এমনই কয়েকটি বৈঠকে পিকেও একই কথা বলছেন। নেতৃত্বের কথায়, “তাতে বেশ লাভই হচ্ছে। সকলে বাড়তি আগ্রহ নিয়ে প্রশান্তর সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। তাঁকে তথ্য দিতে চাইছে। সরাসরি দলকে কোনও গোপন তথ্য দিতে অনেকেরই অনেক সময় সমস্যা থাকে। অনেকে সংশয়েও থাকেন। সেক্ষেত্রে অনেক জায়গায় বাড়তি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে পি কে—কে সেই কথা বলার ক্ষেত্রে।”
[আরও পড়ুন: সিদ্দিকুল্লা চৌধুরিকে ভিসা দিল না বাংলাদেশ সরকার, ক্ষুব্ধ মন্ত্রী]
এ প্রসঙ্গে দলের এক রাজ্য নেতার প্রতিক্রিয়া, এতে দলেরই লাভ হয়েছে। সামনে পুরভোট রয়েছে। তার পরের বছর বিধানসভা ভোট। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কোনও কারণে নিচুস্তরের দূরত্ব তৈরি হলে এই পথে সহজেই তা মিটবে বলে মত ওই নেতার।
The post প্রত্যক্ষ সংযোগের মাধ্যমে আরও কাছের হোন পিকে, চান তৃণমূল স্তরের নেতা-কর্মীরা appeared first on Sangbad Pratidin.