দেবব্রত দাস, জয়পুর: মালদহের বামনগোলার পর বাঁকুড়ার জয়পুর! ফের মাঝরাস্তায় কার্যত বিনা চিকিৎসায় প্রাণ গেল প্রসূতির! পরিবারের দাবি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গেটের সামনে তোরণ তৈরির জন্য রাস্তা কাটা ছিল। তাই অনেকটা পথ ঘুরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে হয় তাঁদের। আর তাতেই নাকি মৃত্যু হয় প্রসূতির। এই অভিযোগে শনিবার বাঁকুড়ার জয়পুরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। তাঁর দাবি, রাস্তা কাটা থাকলেও পাশের রাস্তা দিয়ে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা যেত। বাড়িতেই প্রসূতির শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়েছিল। অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম তাপসী মণ্ডল (৩৩)। বাড়ি হুগলির গোঘাট থানার হরিসভা গ্রামে। বাপের বাড়ি কোতুলপুর থানার দান্ডে গ্রামে। তিনি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাত থেকে তাপসীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পরিবারের অভিযোগ, জয়পুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গেটের সামনে তোরণ তৈরির জন্য রাস্তা কাটা হয়েছিল পঞ্চায়েত সমিতির তরফে। তাই প্রসূতিকে সেই পথে আর নিয়ে যাওয়া যায়নি। যদিও পঞ্চায়েত সমিতির তরফে দাবি করা হয়েছে, তোরণ তৈরির জন্য রাস্তা কাটা থাকলেও পাশেই একটা রাস্তা ছিল।
[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে ভারতের হারে সেলিব্রেশনের জের! দার্জিলিংয়ে ‘নিষিদ্ধ’ বাংলাদেশি পর্যটকরা]
মৃতার আত্মীয় প্রভাত মণ্ডলের অভিযোগ, “চিকিৎসার জন্য ওকে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। গ্রাম থেকে গাড়িতে আসার সময়ে জয়পুরে তোরণ তৈরির জন্য রাস্তা কাটা ছিল। তাই গাড়ি ওই রাস্তায় যেতে পারেনি। প্রায় ৩ কিলোমিটার ঘুরপথে গিয়ে রাস্তা পেয়েছিলাম। তখন প্রসূতির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন ছিল না। জয়পুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে জানিয়ে দেন। রাস্তা কাটা না থাকলে সময় মতো আমরা হাসপাতালে পৌঁছাতে পারতাম। রোগী অক্সিজেন পেত। হয়তো বেঁচে যেত।”
জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শেখ জাকির অভিযোগ মানতে রাজি নন। তিনি বলেন, “তোরণ তৈরির জন্য রাস্তা কাটা হয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু পাশেই তো আর একটা রাস্তা রয়েছে। সেই রাস্তায় সহজেই ছোট গাড়ি যেতে পারত। চালক ঘুরপথে গিয়েছে। তাই সামান্য দেরি হয়েছে। তবে আমরা জেনেছি ওই প্রসূতির শারীরিক অবস্থা তাঁর বাড়িতেই শুক্রবার রাত থেকে আশঙ্কাজনক হয়ে পড়েছিল। তাঁর পরিবারের লোকজন চিকিৎসায় দেরি করায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এর জন্য রাস্তা কাটা থাকা দায়ী নয়।” জয়পুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তরফেও জানানো হয়েছে, ওই প্রসূতির শারীরিক অবস্থা শুক্রবার রাত থেকেই খারাপ ছিল। তাঁর পরিবারের লোকজন অনেক দেরি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। আসার সময়ে রাস্তায় গাড়িতেই ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়।