সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সরকারিভাবে ঘোষিত হয়ে গেল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিনক্ষণ। আগামী ২৪ জুলাই রাষ্ট্রপতি হিসাবে রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ (Ramnath Kovind) শেষ হচ্ছে। তার দিন তিনেক আগে ২১ জুলাই নতুন রাষ্ট্রপতি পেয়ে যাবে ভারত। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ১৮ জুলাই রাষ্ট্রপতি পদের জন্য নির্বাচন। ফলপ্রকাশ ২১ জুন।
যদিও নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে হবে নাকি শাসক ও বিরোধী শিবির সমঝোতার ভিত্তিতে কোনও একজনের নামে ঐক্যমতে পৌঁছবে, সেটা স্পষ্ট নয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে ভিতরে ভিতরে আলোচনা করলেও প্রকাশ্যে প্রার্থী নিয়ে রা কাটেনি শাসক বা বিরোধী কোনও শিবিরই। তবে শোনা যাচ্ছে রাষ্ট্রপতি পদে কাকে প্রার্থী করা হবে, সেটা মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছেন মোদি-শাহরা। অন্যদিকে বিরোধী শিবির এই মুহূর্তে পুরোপুরি ছন্নছাড়া। রাষ্ট্রপতি ভোট নিয়ে এখনও নিজেরাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। শেষপর্যন্ত যদি বিরোধীরা একজোট হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়, তাহলে অবশ্য লড়াইটা জমজমাট হতে পারে।
দেশের মোট ৪ হাজার ৮০৯ জনপ্রতিনিধি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেবেন। সাংসদ-বিধায়ক বা বিধান পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। একেক জন সাংসদ পিছু ধরা হয় ৭০৮ ভোট আর বিধায়কদের ভোটের সংখ্যাটা একেক রাজ্যে একেক রকম। বিধায়কদের ভোটের মূল্য সবচেয়ে বেশি উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh)। যোগী রাজ্যের একেক জন বিধায়কের ভোটসংখ্যা ২০৮। ঘটনা হল ২০১৭ বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপি জোটের বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৩২৫। পরে আরও কয়েকজন বিধায়ক বিভিন্ন দল থেকে যোগ দেন। একইভাবে উত্তরাখণ্ডেও বিজেপি জোটের বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৬০-এর কাছাকাছি। সেটা এবার নেমে এসেছে ৪৭-এ। নির্বাচনে যাওয়ার আগে গোয়াতেও বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৩০-এর বেশি, সেখানেও এবারে ২০জন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপির টিকিটে। একই ছবি পাঞ্জাবে। আগেরবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় অকালি দল বিজেপির সঙ্গে জোটে ছিল। তাঁরা বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছে। সেই সঙ্গে বিজেপির আসনও কমেছে। সব মিলিয়ে পাঞ্জাবেও কমেছে বিজেপি জোটের বিধায়ক সংখ্যা কমছে। মণিপুরে বিজেপির নির্বাচিত বিধায়ক সংখ্যা বাড়লেও NDA’র মোট বিধায়ক সংখ্যা কমেছে।
[আরও পড়ুন: শিশু পাচারে প্রথম তিনে দুই বিজেপি শাসিত রাজ্য, দিল্লির পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক]
মোট কথা, পাঁচ রাজ্যেই কমবেশি ক্ষতি হয়েছে বিজেপির। যার জেরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জটিলতা কিছুটা হলেও বেড়েছে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের আগে বিজেপি জোটের মোট ক্ষমতা ছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রয়োজনীয় সংখ্যার তুলনায় মাত্র ০.৫ শতাংশ কম। কিন্তু এখন সেটা কমবেশি ১.২ শতাংশ কম। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়তে পারে গেরুয়া শিবির।
[আরও পড়ুন: কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় নিহত শিক্ষককে শ্রদ্ধা, বদলাচ্ছে সরকারি স্কুলের নাম, ঘোষণা প্রশাসনের]
যদিও তাতে খুব একটা বেগ হয়তো পাবেন না মোদি-শাহরা (Amit Shah)। তার কারণ দুটি। এক, বিজেপি চাইলেই অন্ধ্রপ্রদেশের ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টি বা ওড়িশার বিজেডি তাঁদের সমর্থন করবে। তাছাড়া এবারের ভোটে হুইপ জারি করার অধিকার থাকছে না কোনও রাজনৈতিক দলের, সেক্ষেত্রে ক্রস ভোটিংয়ের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সেক্ষেত্রে তাঁদের শর্ত থাকতে পারে। দুই, বিরোধী শিবির এই মুহূর্তে একেবারেই ঐক্যবদ্ধ নয়। কংগ্রেসের যা অবস্থা তাতে তারা বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে বলেও বোধ হয় না। সুতরাং, একার দমে না হলেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে খুব একটা বেগ হয়তো পেতে হবে না মোদি-শাহকে।