স্টাফ রিপোর্টার: সোমবার রাষ্ট্রপতি পদে (Presidential Election) নির্বাচন। সকাল দশটা থেকে ভোট শুরু হবে। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোটপর্ব চলবে। আগামী ২১শে জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফল প্রকাশ করা হবে। ২৫শে জুলাই শপথ নেবেন নতুন রাষ্ট্রপতি। তার আগে রবিবার বিকেলে নিজের দলীয় বিধায়কদের নিউ টাউনের পাঁচতারা হোটেলে তুলে নিয়ে এসে নজরবন্দি করে রাখতে দেখা গেল রাজ্য বিজেপিকে। গোটা পরিস্থিতি দেখে টুইটে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
দলীয় সূত্রে খবর, ফোন করে বিধায়কদের একরকম সমন পাঠানো হয়েছে এদিন বিকেলের মধ্যে নিউ টাউনের এই হোটেলে পৌঁছে যাওয়ার জন্য। এমনকী রেহাই পাননি বালুরঘাটের অসুস্থ বিধায়ক অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ীও। একমাত্র বাদ পড়া নাম ভাটপাড়ার বিধায়ক পবন সিং। বাবা অর্জুন সিংয়ের দলত্যাগের পর পবনকে নিয়ে আশা ছেড়েছে বিজেপি। বাদ সে কারণেই। বাকি ৬৯ জন বিধায়ককে সন্ধের মধ্যেই হোটেলবন্দি করা হয়েছে। বাংলার রাজনীতিতে যা নজিরবিহীন ঘটনা।
অথচ ক’দিন আগেও অবশ্য ছবিটা ছিল অন্যরকম। রাষ্ট্রপতি পদে দ্রৌপদী মুর্মুর (Draupadi Murmu) নাম ঘোষণার পর থেকেই সজোরে বিপক্ষ শিবিরে ক্রস ভোটিংয়ের দাবি করতে শোনা গিয়েছিল শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারদের। বুক বাজিয়ে তাঁরা বলেছিলেন, হিসাবের থেকে অনেক বেশি ভোট পাবেন এনডিএ প্রার্থী। কিন্তু রবিবার শেষ লগ্নে যা ছবি, তাতে প্রশ্ন উঠছে যে, নিজের বিধায়কদের নিয়েই কী সংশয়ে শুভেন্দু-সুকান্তরা? কোনও কারণে কি চুপসে গিয়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের প্রবল আত্মবিশ্বাসের বেলুন? নিজেদের করা ‘ক্রস ভোটিং’-এর তত্ত্ব কি তাঁদের দিকেই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে বলে আশঙ্কা শুভেন্দু অধিকারীদের?
[আরও পড়ুন: অগ্নিগর্ভ শ্রীলঙ্কায় ভারতের হস্তক্ষেপ? আগামী সপ্তাহে সর্বদল বৈঠক ডাকলেন মোদি]
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের এই পদক্ষেপকে স্বভাবিকভাবেই খোঁচা দিতে ছাড়েনি শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এ প্রসঙ্গে এদিন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর কটাক্ষ, “নিজের দলের বিধায়কদের উপরই ভরসা নেই বিজেপি নেতৃত্বের। তাই রাষ্ট্রপতি ভোটের আগে বিধায়কদের বাইপাসের কাছে একটি হোটেলে এনে রেখেছে।” এদিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতিসভায় যোগ দিতে এসে তিনি বলেন, “আমাদের দলের বিধায়কদের উপর যথেষ্ট বিশ্বাস ও ভরসা আছে। আর তাই আমরা নির্দিষ্ট সময়ে বিধানসভায় উপস্থিত হব ভোট দিতে। বিধায়কদের ধরে নিয়ে যাব না। কারণ সকলেই দলীয় প্রার্থীদের ভোট দেবেন। ওঁদের বিধায়করা ক্রস ভোটিং করতে পারেন। সেই ভয়েই সব বিধায়ককে এক জায়গায় এনে রেখেছে।”
টুইট করে বিজেপিকে খোঁচা দিয়েছেন অভিষেক। তিনি লিখেছেন, “সাধারণ মানুষের কাছে মাথা নোয়াতেই হবে বিজেপিকে।” মহারাষ্ট্রের সরকার পতনের প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেছেন, ” গোটা ঘটনা দেখে হাসি পাচ্ছে। অন্য দলের বিধায়কদের হোটেলে আটকে রাখা হত। এবার সেই কৌশল ব্যুমেরাং হয়ে বিজেপির কাছেই ফিরে এসেছে।”
তৃণমূলের কটাক্ষের সামনে এদিন যথেষ্ট নড়বড়ে শুনিয়েছে বিজেপির যুক্তি। এ প্রসঙ্গে দলীয় বিধায়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি করেছেন তাঁরা। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এদিন বলেছেন, “হিসাব অনুযায়ী এ রাজ্য থেকে দ্রৌপদী মুর্মুর যত ভোট পাওয়ার কথা, তার থেকে অনেক বেশি ভোট পাবেন। তারপরও বিধায়কদের কেন হোটেলে রাখা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা এখনই করব না। শুধু এটুকই বলতে পারি, আমাদের দলের বিধায়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখা আমাদেরই কর্তব্য।”
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে তৃণমূল বিধায়ককে ফোন করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরও। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে প্রত্যেক ভোটারের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন বিরোধীদের প্রার্থী যশবন্ত সিনহা (Yashwant Sinha) । যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সংবিধান বাঁচাতে নিজেদের অন্তরাত্মার কথা শুনে তাঁকে ভোট দিতে বলা হয়েছে। দু’পাতার চিঠিটি টুইটও করেন নিজের হ্যান্ডেলে।