বাজারে সবজি-ডিম-মাছ-মাংস অগ্নিমূল্য। এদিকে কেন্দ্রের দাবি, মূল্যবৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে। উপহাস বই আর কী!
আচমকা বাজারে আনাজের দাম আকাশছোঁয়া! দেশজুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে টমেটোর দাম নিয়ে। দু’-তিন মাস আগে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ইত্যাদি রাজ্যে কৃষকরা দাম না পেয়ে রাস্তায় টমেটো ফেলে দিচ্ছিলেন। হঠাৎ করে সেই টমেটো দেশের অধিকাংশ খুচরো বাজারে সেঞ্চুরি পার করেছে। কেন্দ্রের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রকের তথ্যানুযায়ী, ২৯ মে দেশে টমেটোর কেজি প্রতি গড় মূল্য ছিল ২৪.৩৭ টাকা। ঠিক একমাস বাদে ২৯ জুন তা এসে দাঁড়িয়েছে ৫৩.৫৯ টাকায়। মেট্রো শহরগুলিতে টমেটো এখন কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। মণিপুর সংকটের জন্য গত দু’মাস ধরে আদার দামও গোটা দেশে চড়া। বেড়েছে রসুনের দাম।
প্রতি বছর এই সময় ঝিঙে, পটল, ঢেঁড়শ সস্তা হয়। এবার সেসবের দামও বেশি। কলকাতার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত গরমের জন্য বহু আনাজ খেতে নষ্ট হয়েছে। বর্ষা দেরিতে আসায় উৎপাদন এখনও কম। জুনের শেষে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে স্বাভাবিকের থেকে ৩০% কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এই মুহূর্তে গ্রামাঞ্চলে মানুষ পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ব্যস্ত। আনাজ উৎপাদন ও বাজারে জোগান আসার ক্ষেত্রে তারও একটা প্রভাব রয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের মত। পঞ্চায়েত ভোটের জের জুলাইয়ের মধ্যভাগ পর্যন্ত চলবে। তার আগে বাজারে আনাজের জোগান স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আলু-পিঁয়াজের দাম বছরের গোড়া থেকে কিছুটা স্থিতিশীল ছিল। দু’-একদিন ধরে আলুর দামও ঊর্ধ্বমুখী। পুজোর আগে প্রতি বছর পিঁয়াজের দাম বাড়ে। সেই মোতাবেক খুব শীঘ্রই যে কোনও দিন পিঁয়াজের দাম আকাশ ছুঁতে পারে।
[আরও পড়ুন: শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার কি ডেকে আনবে বিপদ? ]
বৃদ্ধি পাচ্ছে ডালের দামও। ভোজ্য তেলের দাম নিয়মিত ওঠানামা করছে। এই সময় ডিমের দাম কম থাকার কথা। কিন্তু এই বছর তা-ও ঊর্ধ্বমুখী। রাজে্যর অধিকাংশ খোলা বাজারে এই মুহূর্তে পোলট্রির ডিম সাড়ে ৬ টাকা করে। একমাস আগেই ৫ টাকা ছিল। পাবদা, ট্যাংরা, পারসে ইত্যাদি মাছ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। পোনা মাছের দামও অত্যন্ত বেশি। ব্রয়লার মুরগির দাম ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি।
পাঁঠার মাংস ছোট মাছের মতোই ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের তরফে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলির মূল্যবৃদ্ধির হারের তথ্য দিয়ে দাবি, ভারতে জিনিসপত্রের দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। গত মে মাসে কেন্দ্র খুচরো বাজারের মুদ্রাস্ফীতির যে-হার ঘোষণা করেছে, তা নাকি ২৫ মাসের মধ্যে নিম্নতম! এই সমস্ত দাবি উপহাস ছাড়া কিছু নয়। মূল্যবৃদ্ধির হার বুঝতে দেশবাসীর কাছে তথ্য পরিসংখ্যান জরুরি নয়। রোজ সকালে বাজারে গিয়ে মানুষ মূল্যবৃদ্ধির ছ্যাঁকা খাচ্ছে।
‘রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া’ মূল্যব়ৃদ্ধির তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে তাদের আর্থিক নীতি রচনা করে। তাদের হতে হবে বাস্তবমুখী। আর্থিক নীতি রচনা করার সময় বাজারের ‘প্রকৃত অবস্থা’ খেয়াল রাখতে হবে।