শম্পালী মৌলিক: নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য তাঁর খিদে যে অফুরান প্রত্যেকটি পদক্ষেপ প্রমাণ করে দেয়। প্রতিবার নিজেকে ভেঙেচুরে নতুনভাবে দেখাতে চান প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee)। জন্ম নেয় নতুন চরিত্র। নয়া অবতার। এবারে তিনি চিকিৎসকের ভূমিকায় বড় পর্দায় আসবেন প্রসেনজিৎ। ছবির নাম ‘ডাক্তারকাকু’। পাভেলের পরিচালনায় ছবিতে প্রসেনজিতের সঙ্গে দেখা যাবে ঋদ্ধি সেনকে (Riddhi Sen)।
প্রথমবার তরুণ পরিচালক পাভেলের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন প্রসেনজিৎ। ছবিতে তাঁকে ও ঋদ্ধিকে বাবা-ছেলের ভূমিকায় দেখা যাবে। পরিচালনার পাশাপাশি কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপের দায়িত্বও সামেলেছেন পাভেল। মূলত, বাবা-ছেলের সম্পর্ক নিয়ে চিত্রনাট্য বোনা হলেও, ভ্যালু-সিস্টেম ছবির শিরদাঁড়া এবং চিকিৎসাক্ষেত্র যাকে ‘ডিকোড’ করবে এমনটাই বক্তব্য পরিচালকের।
প্রসেনজিতের কথায়, “ডাক্তারকাকু’ পাভেলের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। কিন্তু আমি ওর সব ছবি দেখেছি। খুব সুন্দর বানায়। ‘ডাক্তারকাকু’ গত বছরই হওয়ার কথা ছিল। নানা কারণে, যে সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছি, সেই জন্য শুটিং শিডিউল করেও আমরা কাজটা করে উঠতে পারিনি। আশা রাখি, আগামী দিনে ছবিটা হবে। মূল বিষয় নিয়ে বলছি না। তবে ডাক্তারদের নিয়ে সারা পৃথিবীজুড়ে নানারকম আলোচনা-সমালোচনা দু’টোই হয়। কিন্তু বিগত দেড়-দু’বছর ধরে আমরা দেখেছি, ডাক্তার-সিস্টার-নার্স, এঁরাই আসলে আমাদের ত্রাতা। ঈশ্বরকে যেমন আমরা ডেকেছি। তাঁরা তাঁদের জীবন বিপন্ন করে, পরিবারের কথা না ভেবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটা সারা পৃথিবীজুড়েই। আমরা কিছু ডাক্তারের কথা জানতাম, তার মধ্যে প্রধানত যে মানুষটির কথা বলব, ডা. বিধানচন্দ্র রায়। তাঁর একটা অদ্ভুত ফিলোজফি ছিল। লোকে বলত, ডাক্তার দেখলেই মানুষ সুস্থ হয়ে যায়। এটা আসলে তাঁর চরিত্র।”
[আরও পড়ুন: বিক্রম ঘোষের সঙ্গে চালতাবাগানে ঢাক বাজালেন শাশ্বত! ‘বব বিশ্বাস’কে দেখে হতবাক অনুরাগীরা]
“‘ডাক্তারকাকু’ রিপ্রেজেন্টস ডক্টরস, যাঁরা শুধু ওষুধ দিয়ে নয়, মানসিকভাবে, ভালবেসে সাপোর্ট দেয়, এমনই চরিত্র লিখেছে পাভেল। যেটা আমাকে খুব টেনেছে। ডাক্তারদের নিজস্ব যে জায়গাটা, সেটা মানুষের কাছে পৌঁছনোর একটা সুযোগ করে দিল এই ছবি। চেষ্টা করব। এনা খুবই বাচ্চা মেয়ে। কিন্তু সে ইতিমধ্যেই দু’টো ছবি বানিয়েছে। এবং এই ছবিটা প্রযোজনা করা ওর খুব ইচ্ছে ছিল। অফকোর্স নতুন প্রোডাকশন আসুক। ইন্ডাস্ট্রি বড় হোক। আর যে মানুষটাকে কোলে করেছি, বড় হতে দেখেছি, যে এখন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড উইনার, সেই ঋদ্ধি ছবিতে আমার ছেলের ভূমিকায়। এটা আমার কাছে অসম্ভব বড় প্রাপ্তি। প্রায় তৃতীয় প্রজন্মের সঙ্গে আমি কাজ করছি, এটা খুব ইন্টারেস্টিং।” বলেন প্রসেনজিৎ।
এ পর্যন্ত পড়ে অনেকেরই মনে হতে পারে ‘অগ্নীশ্বর’-এর কথা। যে ছবিতে উত্তম কুমারের অভিনয় আজও অবিস্মরণীয়। মনে হতে পারে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ‘অলীক সুখ’-এর কথাও। তবে পাভেলের ছবির প্রেক্ষাপট বর্তমান সময়। ‘ডাক্তারকাকু’ ছবির ক্ষেত্রে প্রসেনজিতের চরিত্রটি সারা জীবন নিয়োজিত করেছে রোগীর সেবায়। তার ছেলেও (ঋদ্ধি) ডাক্তার। কিন্তু বাবা-ছেলের পেশাগত দ্বন্দ্ব ও আবেগের টানাপোড়েনই ছবির মূল উপজীব্য। কারণ তারা দু’জনে একই পেশায় এবং আদর্শগত পার্থক্যে জীর্ণ হয়েছে তাদের সম্পর্ক। কিন্তু যতই পার্থক্য থাকুক, এই দ্বিধাদীর্ণ যাত্রাপথ খুবই ইন্টারেস্টিং হবে, এখনই বলে দেওয়া যায়।
চিকিৎসক তো এক অর্থে ঈশ্বর। পাভেলের বিশ্বাসও তেমনটাই। বিশেষ করে, এই প্যানডেমিক পরিস্থিতি আমাদের আরও বেশি নির্ভরশীল করেছে ডাক্তারদের প্রতি। পাভেল বলছেন, “ডাক্তারকাকু’ ছবিটা আমি ডেডিকেট করছি সমস্ত ভাল চিকিৎসকদের যারা আমাদের অভিভাবকের মতো আগলে চলেছেন। তবে ‘ভাল ডাক্তার’-এর অন্য সংজ্ঞাও আমরা দেখেছি। ছবিতে দু’ধরনের চিকিৎসকের কথাই উঠে আসবে। আমার আগের ছবি ‘মনখারাপ’-এ আমি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটা তুলে ধরতে চেয়েছি। আর ‘ডাক্তারকাকু’ ছবিতে আমার লক্ষ্য, বলা চলে, মানুষের স্বাস্থ্য-বিষয়ক সামগ্রিক চিত্রটা তুলে ধরা।”
এনা সাহার ‘জারেক এন্টারটেনমেন্ট’ প্রযোজিত এই ছবি। তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ও করছেন। ছবির শুটিং নতুন বছরের জানুয়ারিতে শুরু। আর সিনেমাহলে আসবে ১ জুলাই অর্থাৎ ডক্টরস ডে-তে। এই ছবিটি ডক্টর বিধানচন্দ্র রায়ের প্রতি তাঁদের পুরো টিমের শ্রদ্ধার্ঘ্য বলা চলে।