সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: স্টোভে সাবুর আঠা জাল দিয়ে ক্যানভাস তৈরি, তারপর রং-তুলি দিয়ে এঁকে ফুটিয়ে তোলা সপরিবার দেবী দুর্গা। শ্বশুর, স্বামীর পেশাকেই ভালোবেসে পটচিত্র আঁকা শুরু করেছিলেন কৃষ্ণনগরের (Krishnagar) শিল্পী রেবা পাল। প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আগে তাঁর কাজের ব্যস্ততা বাড়ে। শত অভাবকে সঙ্গী করেই নেমে পড়েন দুর্গার পট আঁকতে (Drawing)। এত কষ্ট করে আঁকেন, তবু অর্থ আসে কই? তাঁর পটে উমার আগমন হলেও, আলোর ছিঁটেফোঁটাও পান না এই পটশিল্পী। আর সেটাই একমাত্র আক্ষেপ।
জরাজীর্ণ বাড়ি। বারান্দায় কোনওক্রমে স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না। সারাদিন খাটাখাটনি। দূর থেকে দেখলে স্রেফ এক বৃদ্ধার দৈনন্দিন লড়াইটাই চোখে পড়ে। কিন্তু সেই বৃদ্ধার হাতেই যে পটচিত্র এমন ভালো ফুটে ওঠে, কে-ই বা জানত? কৃষ্ণনগরের শিল্পী রেবা পালের সেই প্রতিভা প্রকাশিত হয় দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2023) আগে। জরাজীর্ণ বারান্দার নিচে বসে জনতার স্টোভে সাবুর আঠা জ্বাল দিয়ে পটচিত্র এঁকে চলেছেন ঘূর্ণির পটুয়া পাড়ার এই বৃদ্ধা শিল্পী। অর্থ নেই তেমন, তবু আজও হাল ছাড়েননি তিনি।
[আরও পড়ুন: করোনা ভ্যাকসিন তৈরির পুরস্কার, চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল জয় দুই বিজ্ঞানীর]
রেবাদেবী বলছেন, ”পাল বাড়িতে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই দেখেছি, শ্বশুর ও স্বামী পটচিত্র আঁকেন। স্বামীকে আগে সমস্ত সাহায্য করতাম। শ্বশুর-স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁদের শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এগিয়ে এসেছি। আর এই শিল্পই জীবনধারণের একমাত্র পথ ও অবলম্বন।” তাঁর তৈরি দেবদেবীর পটচিত্র কলকাতার কুমোরটুলি-সহ রাজ্য ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয়। সারা বছর কম-বেশি কাজ থাকলেও দুর্গাপুজোর (Durga Puja) সময় পটচিত্রের চাহিদা থাকে বেশি। কিন্তু খাটনি অনুসারে আয় নেই তেমন। তবুও জীবন জীবিকা নির্বাহ হিসেবে পটচিত্র শিল্পকেই আঁকড়ে ধরেছেন রেবা দেবী। একটাই আক্ষেপ, পরবর্তী প্রজন্ম আর এই পেশায় আসছে না। প্রতি বছর পুজোর সময় ক্লাবগুলিকে সরকারি অনুদান দেওয়া হয়। কিন্তু রেবা পালদের আর্থিক অনটন যেন আর কিছুতেই কাটে না।
দেখুন ভিডিও: