সুমন করাতি, হুগলি: রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব যাত্রা, নাটকের মতো বিনোদনমূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লোকশিক্ষার কথা বলতেন। তিনি নিজে যেমন অভিনয় করেছেন, আবার গিরিশ ঘোষের নাটক দেখতেও যেতেন। একটা সময় ছিল গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতি বা লোকশিক্ষার উপাদান পাওয়া যেত যাত্রা, পুতুলনাচ, কবিগানের মাধ্যমে। নানা পৌরাণিক কাহিনি রামায়ণ-মহাভারত থেকে তুলে আনা নানা পর্বের গল্প পুতুল নাচের মাধ্যমে মানুষ জানতে পারত। সন্ধ্যা হলেই সেই পুতুল নাচের দর্শক হয়ে যেতে ৮ থেকে ৮০ সকলে। আজকের ইন্টারনেট আর OTT-এর যুগে সেসব বিস্মৃতপ্রায়। কিন্তু সত্যিই কি তাই? বরং হুগলির বৈঁচিগ্রামে উলটো ছবি। এখানকার রথের মেলার প্রধান আকর্ষণ পুতুল নাচ। এই সাত, আটদিন ফিরিয়ে আনে অতীতের নস্ট্যালজিয়া।
কালকেতু ফুল্লরা, বেহুলা লখিন্দর, হিরণ্যকশিপু, কংসবধ, চাঁদ সদাগর, অহল্যার শাপমোচন, রূপবান, রহিম বাদশা মতো নানা পৌরাণিক কাহিনি মঞ্চস্থ হত পুতুল নাচের মধ্যে দিয়ে। তবে সেসব দিন এখন আর নেই। এখন মানুষের হাতে হাতে মোবাইল (Mobile)। চাইলেই ইউটিউব, ফেসবুক খুলে হরেক রিল দেখা যায়। তাই মঞ্চে সরাসরি পুতুল নাচ দেখার প্রয়োজন পড়ে না। তবে এখনও কিছু জায়গায় পুতুল নাচ (Puppet Dance) দেখা যায়। রথের মেলা হোক বা অন্য কোনও অনুষ্ঠানে, গ্রামাঞ্চলে এখনো পুতুল নাচের ডাক পড়ে।
[আরও পড়ুন: ট্রাম্পকে একেবারে প্রাণে মেরে ফেলার জন্যই হামলা! তদন্তে নেমে বিস্ফোরক এফবিআই]
তেমনিই দেখা গেল হুগলির (Hooghly)পান্ডুয়ার বৈঁচিগ্রামে রথের মেলায়। বহুদিন আগে কালিপদ দাঁ বৈঁচিগ্রামে রথের সূচনা করেছিলেন। আগে পিতলের ৯ চূড়ার রথ থাকলেও পরবর্তীতে তা চুরি হয়ে যায়। বর্তমানে লোহার রথ তৈরি করা হয়েছে। তবে এই রথে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা নয়, দেখা পাওয়া যায় দাঁ বাড়ির কুলদেবতা রাজ রাজেশ্বরীর। আর দাঁ বাড়ির রথ ঘিরে যে মেলা, সেখানেই কয়েকটা দিন জমিয়ে বসে পুতুল নাচের আসর। এবার সেই মেলায় নদিয়ার হাঁসখালি বগুলা থেকে পুতুল নাচের একটি দল এসেছে।
হুগলির বৈঁচিগ্রামে রথের মেলায় পুতুল নাচের আসর। নিজস্ব ছবি।
গ্রামের বাসিন্দা প্রীতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ''অনেকদিন পর পুতুল নাচ দেখলাম, বেশ ভালো লাগল। এখন গ্রামাঞ্চলে আর এসব দেখা যায় না। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল ছেলেবেলায় ফিরে গেছি। আগে মায়ের হাত ধরে মেলায় যেতাম। সেই সময় দু-একবার পুতুল নাচ দেখেছি। পুরনো দিনের পৌরাণিক (Mythology) কাহিনি পুতুল নাচের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়, যা এককথায় দারুণ।'' শিল্পী বিকাশ সরকারের কথায়, ''আগের মতো আর পুতুল নাচের সেভাবে চাহিদা নেই। সময় বদলে গেছে, ঘরে ঘরে টিভি মোবাইলে মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে আমাদের পুতুল নাচের দল এখনও আমরা টিকিয়ে রেখেছি। আমাদের পরের প্রজন্ম আর তৈরি হচ্ছে না। আগামী দিনে এই দলও টিকিয়ে রাখা যাবে না। আমরা বিভিন্ন রাজ্যে ও জেলাতেও পুতুল নাচের ডাক পড়ে। তবে আগের থেকে তা তুলনায় অনেক কমেছে। সরকারি সাহায্য বলতে শিল্পী ভাতা। তবে এই শিল্প আর কদিন থাকবে, সেটাই এখন দেখার।''
[আরও পড়ুন: তৃণমূলের ‘শহিদ দিবসে’র পালটা বিজেপির ‘গণতন্ত্র হত্যাদিবস’! নয়া ঘোষণা শুভেন্দুর]
দাঁ পরিবারের সদস্য পার্থ দাঁ-র বক্তব্য, পুতুল নাচ বৈঁচিগ্রামের রথযাত্রার (Rath Yatra 2024) একটা ঐতিহ্য। গ্রামের প্রচুর মানুষ আসে এই রথযাত্রায়। বহু বছর ধরেই এই মেলায় পুতুল নাচ হয়ে আসছে। আগে কাঠের পুতুল নাচ হতো, কিন্তু অনেক ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় এখন তারের পুতুল নাচ হয়। তাও মানুষ উপভোগ করেন।