দীপঙ্কর মণ্ডল: স্কুলের সিসি ক্যামেরায় শিক্ষিকার ফুটেজ দেখে না কি ‘যৌন লালসা’ মেটান প্রধান শিক্ষক। মঙ্গলবার এমন অভিযোগ এসেছে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে। অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে স্কুলশিক্ষা দপ্তরে।
পূর্ব বর্ধমানের অভিরামপুর এড়াল হাইস্কুল। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত পড়ানো হয় স্কুলটিতে। শিক্ষক-শিক্ষিকা মিলিয়ে আছেন ২৫ জন। পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ১৫০০। উচ্চমাধ্যমিক স্তরে চুক্তির ভিত্তিতে পড়ান ওই শিক্ষিকা। তিনি প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীকে পাঠানো চিঠির কপি জেলাশাসক, মহকুমা শাসক ও জেলা স্কুল পরিদর্শকেও পাঠিয়েছেন। পুলিশে আলাদা করে অভিযোগ দায়ের করেননি। উলটোদিকে প্রধানশিক্ষক অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠি স্থানীয় আউশগ্রাম থানায় জমা দিয়েছেন। পুলিশি প্রক্রিয়া শুরু না হলেও বিষয়টির খোঁজ নিয়েছে স্কুলশিক্ষা দপ্তর। ডিআইকে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন: Kolkata Municipal Election: পুরভোটে লড়ছে ঘরের ছেলে, ক্ষোভে বাড়িছাড়া করল পরিবার]
প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে শিক্ষিকা লিখিত অভিযোগ করেছেন, তাঁকে বহুদিন ধরে কুপ্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষিকা থাকেন বোলপুরে। তাঁদের বসার জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তার ফুটেজ দেখে প্রধান শিক্ষক ‘যৌন লালসা’ মেটান। অভিযোগের সূত্র ধরে বোলপুরের কাছাকাছি কোনও স্কুলে বদলির আবেদনও করেছেন অভিযোগকারিণী।
শিক্ষামন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে ওই শিক্ষিকা অভিযোগ করেছেন, প্রধান শিক্ষক তাঁর উপর নির্যাতন চালাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন, “খুব দরকারে একবার ওঁর বাইকে চাপতে হয়েছিল। অপ্রয়োজনে বারবার উনি ব্রেক কষছিলেন। সে খুবই অস্বস্তিজনক পরিস্থিতি। ওইদিনের পর থেকেই উনি আমাকে কুপ্রস্তাব দিতে শুরু করেন। রাজি না হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতি পদে আমাকে অপদস্থ এবং হেনস্থা করে যাচ্ছেন। আমি সব সময় আতঙ্কে থাকি। সুস্থভাবে কাজ করতে পারছি না।”
প্রধান শিক্ষক পালটা দাবি করেছেন, ওই শিক্ষিকা দেরিতে স্কুলে আসেন। যখন খুশি বেরিয়ে যান। স্কুলের শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা চলছে বলেই তাঁর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত কুৎসা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমার একমাত্র অপরাধ আমি সরকারি নিয়মে কাজ করি। স্কুল ঠিকভাবে চালাই। স্কুলে ১৬টি সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। আমি যে ওঁর ফুটেজ দেখি তা উনি কি করে জানলেন। আসলে যারা নিয়ম মানে না, পুরুষ হলে ঝামেলা করে আর মহিলারা হলে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনে।” তাঁর দাবি, এদিনের ঘটনায় স্কুলের বদনামের কথা ভেবে ছাত্রীরা মাঠে বসে কেঁদেছে।
[আরও পড়ুন: দিল্লিতে অভিষেকের বৈঠকে গরহাজির, মিমি-নুসরতকে শোকজ তৃণমূলের]
শিক্ষিকার দাবি, ওই স্কুলে তিনি ১৭ বছর কাজ করছেন। প্রতিদিন সকাল সাতটার ট্রেন ধরে ন’টার মধ্যে স্কুলে পৌঁছন। তাঁর অভিযোগ, “প্রধান শিক্ষক আমাকে বিকেল সাড়ে তিনটের সময় একটি ক্লাস দেন এবং সাড়ে চারটে পর্যন্ত বসিয়ে রেখে মানসিক নির্যাতন করেন। আমার বাড়িতে স্বামী এবং ছয় বছরের শিশু কন্যা আছে। মেয়ে অসুস্থ হলেও আমি ছুটি পাই না। আমি এমন প্রধান শিক্ষকের শাস্তি চাই।” প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, “দোষ করলে আমি নিশ্চই শাস্তি মাথা পেতে নেব। চুক্তিভিত্তিক শিক্ষিকাদের চাইল্ড কেয়ার লিভ নেই। উনি তা চেয়েছিলেন। নিয়ম ভেঙে তা আমি কি করে ওইছুটি দেব।”