সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দলছুট হাতির (Elephant) মৃত্যু ঘিরে তোলপাড় বাংলা-ঝাড়খণ্ডের সীমানার সুইসায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরুলিয়ার (Purulia) বাঘমুন্ডি ব্লকের তুন্তুরী সুইসা অঞ্চলের পাড়সিডি গ্রামের ঝাড়খণ্ড সীমানায় বিশালাকার এক দলছুট বন্য হাতির মৃত্যু হয়। তা নিয়ে ঘনায় রহস্য। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ঝাড়খণ্ডের বন বিভাগের কর্মীরা ও ঝাড়খণ্ডের তিরুলডি থানার পুলিশ। জানা গিয়েছে, মৃত হাতিটি ঝাড়খণ্ড (Jharkhand) ও বাংলার বনাঞ্চলের ‘ত্রাস’ গুর্জর সিং। হ্যাঁ, বিশাল বপু, ভয়াল দর্শন ও আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য এই নামকরণ করা হয় হাতিটির। ২০০০ সালে বলিউড সিনেমা ‘মেলা’র খলনায়কের চরিত্র অবলম্বনে তার নাম দেওয়া হয়েছিল। সেই গুর্জর সিংয়ের মৃত্যুতে কিন্তু মনখারাপ দুই বাংলার বনকর্মী ও জঙ্গল এলাকার মানুষদের।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সুবর্ণরেখা নদীর রাওকাল ঘাটে স্নান করতে গিয়ে পাড়শিডি গ্রামের কয়েকজন লোক দেখতে পান হাতির মৃতদেহ (Death)। জায়গাটি পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির সীমানায় ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোওয়া জেলার সপারুম গ্রাম। চাষের জমিতে পড়ে ছিল গুর্জর সিংয়ের দেহ। ঘটনা জানাজানি হতেই তুন্তুরী সুইসা অঞ্চলের পাড়শিডি গ্রাম-সহ ঝাড়খণ্ড সীমানার তিরুলডি থানার পইলং, সপারুম, তিরুলডি গ্রামের আট থেকে আশি বহু মানুষের ভিড় জমান বন্য হাতি দেখার জন্য। গ্রামের মহিলারা ওই বন্য হাতিকে ধূপ জ্বালিয়ে প্রণামও করেন।
[আরও পড়ুন: ‘গোটা পরিবারের দায়িত্ব সামলায়’, গৃহবধূর আয় নিয়ে পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাই কোর্টের]
বনদপ্তর সূত্রে খবর, গত কয়েকদিন ধরে ঝাড়খণ্ডের এই এলাকায় দাপাদাপি করে বেড়াচ্ছিল গুর্জর সিং। চাষের জমিতে প্রচুর ফসল নষ্ট করেছে, ঘরবাড়ি ভেঙেছে। কিন্তু চারদিন আগে সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট (Electric shockহয়। ১১০০০ ভোল্টের তার ছুঁয়ে যায় তার শরীর। তার পরও অবশ্য সে শক্তি হারায়নি। বিদ্যুতের ছোবল শরীরে নিয়েও তাণ্ডব চালাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে ধীরে ধীরে নিথর হয়ে পড়ে সে। বনকর্মীরা তার দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। রিপোর্ট বলছে, বিদ্যুতের শক খেয়ে ভিতরে ভিতরে দুর্বল হয়ে পড়েছিল গুর্জর সিং। আর সেটাই তার মৃত্যুর কারণ।
[আরও পড়ুন: তৃণমূলের নেতৃত্বে দিল্লি অভিযানে বাংলার কয়েক হাজার ‘বঞ্চিত’, ভাড়া করা হল বিশেষ ট্রেন]
এ নিয়ে পুরুলিয়ার ডিএফও (DFO) কার্তিকেয়ন এম বলেন, ”শুনেছি, হাতিটির মৃত্যু হয়েছে ঝাড়খণ্ডে। এই এলাকাটি যেহেতু করিডর, তাই সে বাঘমুন্ডিতেও আসত।” এমন এক মূর্তিমান ত্রাস চলে যাওয়ায় হাঁপ ছেড়ে বাঁচার কথা স্থানীয় বাসিন্দাদের। কিন্তু ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বাঘমুন্ডির পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা। গুর্জর সিংয়ের নিথর দেহ দেখে চোখে জল জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের। তাঁরা ধূপ জ্বালিয়ে গজরাজকে প্রণাম জানাচ্ছেন।