সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: শহর পুরুলিয়ায় সোনার দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনার পরেও টনক নড়ল না বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষর। এখনও সেই আগের মতোই ঢিলেঢালা নিরাপত্তা। বিপদঘন্টি থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ নেই বলে অভিযোগ। একটি ব্যাঙ্কে তো কোনও সিসিটিভিই নেই। অথচ প্রায় মাসখানেক আগে ওই ডাকাতির ঘটনার পর জেলাজুড়ে স্বর্ণ বিপণীদের যেমন ১০ দফা নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল। তেমনই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষগুলিকেও সজাগ, সতর্ক থেকে নিজেদের সুরক্ষার বিষয়টি আঁটসাঁট করার কথা বলা হয়। কিন্তু কোথায় কী?
গত মঙ্গলবার পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে জেলা পুলিশের একটি দল শহর পুরুলিয়ার বিভিন্ন ব্যাঙ্কে গিয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে হতবাক হয়ে যায়। প্রায় এক মাস আগে সোনার দোকানে ৮ কোটি টাকা ডাকাতির পরেও ব্যাঙ্কের সুরক্ষা বিষয়ে এই বেহাল পরিস্থিতি দেখে রীতিমতো মাথায় হাত পড়ে পুলিশকর্তাদের। ফলে রীতিমতো ধমক খেতে হয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষদের। এরপরও কি টনক নড়বে? এ বিষয়ে একটা কথাও বলেননি বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “জেলার স্বর্ণ বিপণীদের যেমন ১০ দফা নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল তেমনই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে একাধিক নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তা রূপায়ণ হয়নি। আমরা এই বিষয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষদের নির্দেশিকা দ্রুত রূপায়ণ করতে বলেছি।”
[আরও পড়ুন: বৃদ্ধাকে ‘খুন’ তৃণমূল কর্মীর, প্রতিবাদে যুব তৃণমূল সভাপতির বাড়ি ঘেরাও স্থানীয়দের]
পুরুলিয়া জেলা পুলিশ জানিয়েছে, শুধু পুলিশের উপর সমস্ত দায়িত্ব চাপালেই হবে না। এরকম অপরাধ রুখতে হলে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক, সচেতন থাকতে হবে। সরেজমিনে সেই অবস্থা দেখতেই পুরুলিয়া জেলা পুলিশের দল ব্যাঙ্কগুলিতে যায়। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ নামে একটি ব্যাঙ্কে কোনও সিসিটিভি নেই। যা দেখে হতবাক হয়ে যান পুলিশকর্তারা। এ বিষয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুলিশ কথা বললে, তারা জানান সিসিটিভি রাখার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের কোন নির্দেশ আসেনি। এই বিষয়ে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ ওই রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখবে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া শহর পুরুলিয়ার একাধিক ব্যাঙ্কের বাইরের সিসিটিভির হালও বেহাল। একাধিক ব্যাঙ্কে জানলার গ্রিল পর্যন্ত নেই। দিনেদুপুরে জানলা দিয়েই যে কেউ প্রবেশ করে যেতে পারে। বিপদঘন্টি থাকলেও তা সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না। বিপদঘন্টি বাজলে আশেপাশের মানুষজনদের কী করণীয় সে বিষয়েও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কোনওরকম সচেতনতার প্রচার করেনি বলে অভিযোগ। ওই দিন এই বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির পাশের লোকজনদের মতামতও নেন পুলিশ কর্তারা। বিপদঘন্টির বিষয়ে তাদের কথা শুনে পুলিশকে রীতিমতো হতাশ।
সোনার দোকানের ডাকাতির ঘটনায় ‘লাইভ অপারেশনে’র প্রমাণ লোপাট করার জন্য ডিভিআর নিয়ে কুয়োতে ফেলে দিয়েছিল ডাকাতদল। ফলে তদন্তে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল এই ঘটনায় গঠিত সিটকে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ স্বর্ণ বিপনী-সহ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিল, যেন প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভির দুটি করে ডিভিআর থাকে। একটি ডিভিআর জনসমক্ষে থাকলেও আরেকটি ডিভিআর যাতে লুকিয়ে রাখা হয় যাতে দুষ্কৃতী বা অন্য কেউ টের না পায়। এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাও রূপায়ণ করেনি কোন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ব্যাঙ্কগুলিতে আগ্নেয়াস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও তারা শুধুমাত্র গ্রাহকের ভিড় সামলান। এই ছবি দেখে অবাক হয়ে যেতে হয় পুরুলিয়া জেলা পুলিশের দলকে। সতর্কও করা হয়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে।