সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: অভিযোগ এক: ঘরে থাকা খাঁচায় ১২-১৪টা মুরগির ছানা ছিল। হঠাৎ করেই তাদের দেখা মিলছে না। কোনও ‘মুরগি চোর’ এ কাজ করেছে। সেই ‘মুরগি চোর’কে শাস্তি দিয়ে ওই ছানা ফেরত দিতে হবে। না হলে তার ক্ষতিপূরণ চায়।
অভিযোগ দুই: বাড়ির পাঁচিলের উপর দিয়ে ভাই বিদ্যুতের তার নিয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে সেই বিদ্যুৎবাহী তার খুলে ভাইকে শাস্তি দিতে হবে।
অভিযোগ তিন: আধার কার্ড, প্যান কার্ড কীভাবে লিংক হবে জানা নেই। তাই দুটো কার্ডই বাক্সে দিয়ে গেলাম। লিংক করিয়ে দেবেন।
গ্রামের মোড়লদের বৈঠকে বা ষোল আনার সালিশি সভায় এই অভিযোগ নয়। অভিযোগ নয় ফাঁড়ি বা থানাতেও। এমন বিচিত্র সব অভিযোগ জমা পড়েছে পুরুলিয়ার একাধিক ব্লকের নানান গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘দুয়ারে সরকার’-র অভিযোগ বাক্সে। দিনের শেষে পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে শিবিরের অভিযোগ বাক্স খুলে এমন সব অভিযোগ পত্র পেয়ে রীতিমতো হাসির খোরাক আমলা মহলে। জঙ্গলমহলের এই জেলায় ষষ্ঠ পর্যায়ের এই শিবির শুরু হওয়ার একেবারে প্রথম দিকে অভিযোগ বাক্স নিয়ে খুবই ‘সিরিয়াস’ ছিলেন বিডিওরা। শুধু কি বিডিও? মহকুমা শাসক থেকে অতিরিক্ত জেলাশাসক সহ স্বয়ং জেলাশাসকও। কিন্তু এ কি? চুরি যাওয়া মুরগি ছানা খুঁজে দেওয়ার আর্জি। হয় ‘মুরগি চোর’ ধরে সেই ছানা ফিরিয়ে দিতে হবে না হলে তার ক্ষতিপূরণ প্রয়োজন। আড়শার বেলডি এলাকার ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে এমন অভিযোগ পত্র পেয়ে শিবিরে থাকা আধিকারিকরা তা দ্রুত বিডিওর কাছে ফরওয়ার্ড করবেন কিনা, হেসেই লুটোপুটি। এই অদ্ভুত অভিযোগ পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের আমলাদের এখন সকলেরই জানা। শিবিরের অভিযোগ বাক্স নিয়ে কোন কথা হলেই তাদের ঠোঁটের কোণায় হাসি।
[আরও পড়ুন: ‘মিছিল থেকে ক্রমাগত উসকানিতেই অশান্তি’, রিষড়া কাণ্ডে হাই কোর্টে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট পুলিশের]
এখানেই শেষ নয়। বিদ্যুৎবাহী তার নিয়ে ভাইয়ে-ভাইয়ে ঝামেলা। তার সমাধান চেয়েও অভিযোগ পত্র জমা পড়েছে ‘দুয়ারে সরকার’-র ওই নীল অভিযোগ বাক্সে। বাঘমুন্ডির প্রত্যন্ত গ্রাম জিলিংসেরেঙ এলাকায় এই অভিযোগ নিয়ে কম হাসিঠাট্টা হয়নি সেখানকার সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের মধ্যে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে জয়পুর ব্লকের একটি শিবিরের অভিযোগ বাক্সর চিরকুট দেখে। অভিযোগকারী আধারের সঙ্গে প্যান কার্ডের লিংক করতে পারছেন না বলে আসল আধার ও প্যান কার্ডই তার লেখা চিরকুটের সঙ্গে ওই বাক্সে জমা করে দিয়ে গিয়েছেন।
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ” যে সব হাস্যকর বিচিত্র অভিযোগ আসছে সেসব না হয় আমরা বাতিল করে দিচ্ছি। কিন্তু ওই আধার কার্ড ও প্যান কার্ডের মালিককে খুঁজতে আমাদের কম ভোগান্তি হয়নি। সিভিক পুলিশের হাত ধরে ওই কার্ডগুলো যথাস্থানে ফেরত দিয়ে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, “অভিযোগ বাক্সে সিরিয়াস কোনও অভিযোগ নেই। এর থেকেই প্রমাণ ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির পুরুলিয়ায় খুব ভালভাবে চলছে।” পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এর থেকেই পরিষ্কার বিভিন্ন প্রকল্পে আবেদন বা আগের শিবিরগুলির পরিষেবা প্রদান নিয়ে কোথাও কোন সমস্যা নেই। সমস্যা নেই শিবির চলাকালীন আধিকারিকদের কাজকর্মতেও। এসব বিচিত্র অভিযোগ-ই তার বড় প্রমাণ। আর এমন হাস্যকর অভিযোগে শিবির শেষে আমলা মহলে আড্ডার খোরাক হলেও পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন কিন্তু এই বিষয়গুলিকে জেলার ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের নিরিখে সাফল্য হিসেবেই দেখছে।