অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: পূর্বাভাস স্পষ্ট হয়েছিল বৃহস্পতিবারই। মেঘলা পাহাড়ে আকাশ যেন অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছিল। আর শুক্রবার দুপুরে দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) পাতলেবাস দেখল অন্য ছবি। যে গুরুংকে একদা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার (GJM) একটা অংশ ব্রাত্য করে দিয়েছিল, তাঁর হাতেই মোর্চার পতাকা তুলে কার্যত তাঁরই নেতৃত্ব গ্রহণ করে নিলেন সমর্থকরা। আর এই দলে ছিলেন গুরুংয়ের একদা সতীর্থ, পরবর্তীতে শত্রু বনে যাওয়া বিনয় তামাং। তিনি বৃহস্পতিবারই ‘বিনয়পন্থী’ মোর্চা ছেড়ে ফিরে এসেছেন ‘গুরুংপন্থী’ মোর্চায়। শুক্রবার সেটাই স্পষ্ট হল সকলে মিলে গুরুংকেই ফের দায়িত্ব তুলে দেওয়ায়। পাতলেবাসে মোর্চার পার্টি অফিস আবার খুলেছে স্বমহিমায়। সমর্থকদের সংখ্যা বাড়ল আরও।
তবে সবটা এত সরল নয় মোটেও। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথের মতো সেখানকার রাজনীতিরও প্রতি বাঁকে লুকিয়ে অজানা কিছু। পাহাড়ে এই মুহূর্তে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চারই একাধিপত্য – তা ভাবলে ভুল হবে। বিনয় তামাং (Binay Tamang), বিমল গুরুংয়ের (Bimal Gurung) মিলমিশ হওয়ার পরও মোর্চায় আড়াআড়ি ভাগ রয়ে গেল। বিনয়পন্থী মোর্চা অর্থাৎ GJM-2 কিন্তু পুরোপুরি অবলুপ্ত হল না। এখন তার রাশ ভাইস প্রেসিডেন্ট অনীত থাপার হাতে। শুক্রবার পাতলেবাসে যখন গুরুংয়ের হাতে GJM-1’এর দায়িত্ব অর্পিত হচ্ছে, সেসময়ই অনীত থাপাকে GJM-2’র কার্যনির্বাহী সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করলেন তাঁর সমর্থকরা।
[আরও পড়ুন: ‘নিরুদ্দেশ বিধায়ক Hiran! খুঁজে দিলেই মিলবে পুরস্কার’, পোস্টার ঘিরে শোরগোল খড়গপুরে]
এই জায়গায় এসে সমীকরণে খানিকটা ধাঁধা লেগে যেতে পারে। বিষয়টা সহজ করে বললে খানিকটা এরকম – একসময়ে বিমল গুরুং, অনীত থাপা, বিনয় তামাংরা একই ছাতার তলায় ছিলেন। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার একেকজন দায়িত্বপ্রাপ্ত। ২০১৭ সালে সেই দলের বিভাজন শুরু হয়। পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্যাবিনেট বৈঠক চলাকালীন হামলার অভিযোগ তখন পাহাড় ছেড়ে অজ্ঞাতবাসে গুরুং। সেসময়ই বিনয় তামাং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে নিজের দল বলে দাবি করে সর্বময় কর্তা হয়ে বসেন। এ নিয়ে গুরুং অজ্ঞাতবাস থেকেই আইনি লড়াইয়ের ডাক দেন। মামলা কলকাতা হাই কোর্টে ওঠে। সওয়াল-জবাবের পর আদালতের নির্দেশে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ১ ও ২ – দুটি পার্টিকেই সিলমোহর দেওয়া হয়। প্রথমটি গুরুংপন্থী এবং দ্বিতীয়টি বিনয়পন্থী। উভয়েই পার্টির প্রতীক, পতাকা ব্যবহারের অনুমতি পান।
[আরও পড়ুন: কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের কবলে সুন্দরবনের মৎস্যজীবী, খবর পেয়েই মৃত্যু শ্যালকের]
বিনয়পন্থী মোর্চার রাশ ছিল মূলত বিনয় তামাং, অনীত থাপার (Binay Tamang) হাতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁদের উপর ভরসা করেছিলেন। একুশের নির্বাচনে পাহাড়ে তৃণমূল বিনয়পন্থী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে সমর্থন জানিয়ে প্রার্থীও দেয়নি তৃণমূল (TMC)। এরপর কালিম্পংয়ে তাঁদের প্রার্থী জিততেই সমস্ত কৃতিত্ব নিয়ে নেন অনীত। উলটোদিকে দার্জিলিং আসনটি হেরে যাওয়ায় খানিকটা মুখ পুড়েছে বিনয় তামাংয়ের। সেই সুযোগে অনীত থাপার গুরুত্ব বাড়তে থাকে। বঞ্চিত মনে করেন তামাং। সেই অভিমানে তিনি স্বহস্তে প্রতিষ্ঠিত দল ছেড়ে আদি মোর্চাতেই ফিরে যান। ফলে এই মুহূর্তে মোর্চা ১ গুরুং-তামাংয়ের হাতে এবং মোর্চা ২ অনীত থাপার হাতে। অর্থাৎ সহজ হিসেবে পাহাড়ে এখন গুরুং-তামাং বনাম অনীত থাপার ঠান্ডা রাজনৈতিক লড়াই শুরু হল।