কল্যাণ চন্দ্র, বহরমপুর: চিকিৎসার গাফিলতিতে ফের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আর জি কর কাণ্ডের আঁচ পড়েছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজেও। কর্মবিরতি চলছে হাসপাতালে। তার মধ্যে মঙ্গলবার সাপের কামড়ে জখম রোগীকে নিয়ে আসা হয়েছিল। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় ভর্তিও করানো হয় ওই রোগীকে। কিন্তু ভর্তির চার ঘণ্টার মধ্যে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। চিকিৎসার অভাবে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, অভিযোগ পরিবারের।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত যুবককের নাম বিদ্যাসাগর সরকার। তিনি বহরমপুর থানার চরমহুলা এলাকার বাসিন্দা। মঙ্গলবার সকালে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে সাপে কামড়ায়। তড়িঘড়ি ওই যুবককে উদ্ধার করে কর্ণসুবর্ণ হাসপাতাল নিয়ে যায় পরিবারের সদস্যরা। সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়। অভিযোগ, সেখানে রোগীকে ঠিক করে চিকিৎসা করা হয়নি। ওষুধ, ইনজেকশন দেওয়া হলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। এখানেই পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মৃতের স্ত্রী সুভদ্রা সরকার। তিনি জানান, 'হাসপাতালে ভর্তির পর তাঁর স্বামীকে একজন চিকিৎসক দেখেছিলেন ঠিকই। কিন্তু মনিটরিং হয়নি। সাপে কাটা বেশিরভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়ে গেল, এই ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না তিনি। ঠিকমতো চিকিৎসা হলে তাঁর স্বামী বেঁচে যেতেন বলে দাবি করছেন সুভদ্রাদেবী।
[আরও পড়ুন: দণ্ডি কেটে মায়ের সঙ্গে গঙ্গাস্নানে নামাই কাল! তলিয়ে মৃত্যু পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রের]
মঙ্গলবার বিকালেই হাসপাতালের বাইরে ছটপট করতে দেখা গেল আহত এক রোগীকে। গোলাম হোসেন নামে লালগোলার ওই ব্যক্তি কাঠ কাটতে গিয়ে মেশিনের মধ্যে দুই হাত ঢুকে যায়। মারাত্মক জখম হন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোন চিকিৎসা না পাওয়ায় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর পরিবারের লোকেরা।
অন্যদিকে, এদিন সকাল ৯ টা নাগাদ হাসপাতালের আউট ডোরের টিকিট দেওয়া বন্ধ করা হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। ডাক্তার দেখাতে পারবেন না জেনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়রা। যদিও রোগীদের চাপে পড়ে এক ঘণ্টার মধ্যেই আউটডোর খুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে না দেখে রোগীদের অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা।
এদিন দুপুরে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার আবেদন জানান মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ এবং হাসপাতাল সুপার। জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে ফেরার অনুরোধ জানিয়ে হাসপাতাল অধ্যক্ষ ডাঃ অমিতকুমার দা বলেন, "হাসপাতালের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যাম্পাসে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত আলো থেকে আরও অনেক সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা রক্ষীও বাড়ানো হয়েছে। ফলে হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য জুনিয়র চিকিৎসকদের কাছে অনুরোধ করা হল।"