সুব্রত বিশ্বাস: পুরোপুরি বেসরকারিকরণের (Privatization) পথে হাঁটছে রেল। তবে দায়িত্ব নিতে রাজি নয় কোনও উদ্যোগপতি বলে জানা গিয়েছে। সংস্থাগুলির দাবি, রেলে ‘স্টাফ কস্ট’ বেশি। তাই দায়িত্ব নিতে গররাজি তারা। ফলে পরিকল্পিতভাবে কর্মী সংকোচন করে চলেছে রেলমন্ত্রক (Rail Ministry)। এই কর্মী সংকোচনের ফলে একদিকে চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে সুরক্ষা ব্যবস্থা (Security)। অন্যদিকে রেলে চাকরি পাওয়ার স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের। এমনই অভিযোগ তুলল রেলের বিভিন্ন কর্মী সংগঠন। কেন্দ্রীয় নীতিতে এই দুইয়ের ‘যূপকাষ্ঠে’ এখন বন্দি সমাজ ব্যবস্থা। বলছে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের যৌথ আন্দোলন কমিটি।
সম্প্রতি রেলমন্ত্রকের দেওয়া তথ্যে একেবারে প্রকাশ্যে এসেছে এসব। তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় রেলে ১৮,৮৪৮টি আধিকারিক পদের মধ্যে কর্মী রয়েছেন ১৬,১৬৮ জন। শূন্যপদের সংখ্যা ২,৬৮০টি। নন গেজেটেড ১৪ লক্ষ ৬৩ হাজার ২৮৬টি পদের মধ্যে কর্মী রয়েছেন ১২ লক্ষ ২ হাজার ৫৩ জন। শূন্যপদের সংখ্যা ২ লক্ষ ৬১ হাজার ২৩৩টি।
[আরও পড়ুন: জন্মদিনে প্রেমিক ও বান্ধবীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে তরুণীর রহস্যমৃত্যু, নেপথ্যে ত্রিকোণ প্রেম?]
এদিকে রেলে নিয়োগের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, নিয়োগ পদ্ধতিতে কোনওরকম সামঞ্জস্য নেই। কোনও বছরে বেশি কর্মী নিয়োগ হলে পরের বছরে নিয়োগ ‘শূন্য’। ফলে ঘাটতিতে ভারসাম্য হারাচ্ছে নিরাপত্তা, দাবি তুলেছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের প্রাক্তন প্রিন্সিপ্যাল সিসিএম তথা আইআরটিএস কৌশিক মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সেফটি ক্যাটাগরি ও ওই বিভাগের সঙ্গে যুক্ত বিভাগে কর্মীসংখ্যা কমে যাওয়ায় সুরক্ষা ব্যবস্থায় খামতি থাকছে। যা রেলের মতো পরিবহণে একেবারে অনুচিত।
কৌশিকবাবুর যুক্তির সপক্ষে নিয়োগ পদ্ধতির পরিসংখ্যান তুলে ধরা যেতে পারে। দেখা গিয়েছে, দেশে ২১ রেলের রিক্রুটমেন্ট বোর্ড (Rail Recruitment Board) ২০১৮ থেকে চলতি সময় পর্যন্ত যে এনপ্যানেল করেছে তা এরকম –
- ২০১৮-’১৯ সালে বোর্ড নিয়োগ করেছে ১,৭২৭ জন।
- ২০১৯-’২০ সালে ৭১,১২৫ জন।
- এই সালে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ যে বোর্ডে ছিল, রাঁচিতে ৪৩৪টি, কলকাতায় ২৭১টি ও এলাহাবাদে ৩৩৩টি।
- ২০২০-’২১ সালে ২,১২৩ জন।
- ২০২১-’২২ সালে ৩,১৮৮ জন।
- ২০২২-’২৩ সালে ৪৩,৮৩২ জন।
- ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নিয়োগ হয়েছে ৬,৩৫৪ জন।
সর্বভারতীয় স্তরে এই নিয়োগ একেবারে নগন্য বলে মনে করেছে রেলের কর্মী সংগঠনগুলি। পূর্ব রেলের মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ বলেন, ”রেলের সুরক্ষার দায়িত্ব যাদের হাতে, সেই চতুর্থ শ্রেণিতেই নিয়োগের হাল একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে।” তাঁর দাবি, আদপে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে কর্মী সংখ্যা কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। আরেকটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী –
- ২০১৮-’১৯ সালে ভারতীয় রেলে চতুর্থ শ্রেণিতে নিয়োগ হয়েছিল ৪,৭৬৬ জন। পূর্ব রেলে সে বছর সবচেয়ে কম নিয়োগ হয়ে ছিল ৩,০০৩ জন।
- ’১৯-’২০ সালে ওই ক্যাটাগরিতে নিয়োগ ছিল ৫৫,৯৪২ জন। ওই বছর সব চেয়ে বেশি ছিল নর্দান রেল ৬,৬৬৬ জন।
- ’২০-’২১ সালে ৩,৩২৭ জন। উত্তর-মধ্য রেলে সব চেয়ে বেশি নিয়োগ ছিল ওই বছর ৬৫৯ জন।
- ’২১-’২২ সালে ১,৪২৪ জন। দক্ষিণ -মধ্য রেলে সব চেয়ে বেশি নিয়োগ ওই বছর ৩৫৩ জন।
- ’২২-’২৩ সালে নিয়োগ ৪২,০৫৬ জন। সাদার্ন রেলে বেশি ছিল, সংখ্যাটা ৭৯৬১ জনের।
সেফটি ক্যাটাগরিতে যখন এই চিত্র, তখন যাদের উপর রেলযাত্রীদের নিরাপত্তা, সেই আরপিএফ ও আরপিএসএফে নিয়োগের চিত্র আরও করুণ –
- ২০১৮ সালে নিয়োগ হয়নি
- ২০১৯ সালে ১০,৪৬০ জন
- ২০২০ সালে ৯৩ জন
- ২০২১ ও ২০২২ সালে নিয়োগ হয়নি
সুরক্ষা বিভাগে নিয়োগ না হওয়ায় কাজের চাপ বাড়ছে। আরপিএফ (RPF) কর্মীদের মনোবল নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে নিরাপত্তা কমছে। সম্প্রতি এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা আশাতীত বলে বর্ণনা করেছেন আরপিএফ কর্তারাই। নন গেজেটেড ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের য়খন এই অবস্থা তখন আধিকারিক নিয়োগও হতাশাজনক।
[আরও পড়ুন: ৬৮ বছরে তৃতীয় বিয়ে সারলেন বিখ্যাত আইনজীবী হরিশ সালভে, পাত্রীকে চেনেন?]
২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে ভারতীয় রেলে আধিকারিক নেওয়া হয়েছে ৪১৭, ৪৮১, ১৯০, ৩৭, ৯৫ জন। নতুন পেনশন স্কিম-সহ একাধিক বৈষম্য সৃষ্টি করে একদিকে কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে, পাশাপাশি শূন্যপদে নিয়োগ বন্ধ করে কর্মী সংখ্যা কমিয়ে আনছে রেল। একে পুরোপুরি বেসরকারিকরণের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কেন্দ্র সরকারের বলে অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের যৌথ সংগ্রাম কমিটির।