সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: উইন্ডো ট্রলি ইনস্পেকশনে পুরুলিয়া (Purulia) স্টেশনে রেলমন্ত্রীর নামার কথা ছিল দুপুর দুটো পঁচিশে। সেই জায়গায় দু’ঘণ্টা পাঁচ মিনিট লেট করে ওই স্টেশনে স্পেশাল ট্রেন ঢুকল বিকাল ৪ টে ২৬ মিনিটে! করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর যেভাবে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অধিকাংশ ট্রেন নির্দিষ্ট সময় থেকে ৩-৪ ঘণ্টা দেরিতে যাওয়া প্রায় নিয়ম হয়ে গিয়েছে। যাকে ঘিরে বিস্তর অভিযোগ যাত্রীদের। আর সেই অভিযোগের মধ্যেই যাত্রীবাহী রেলের মতো রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের স্পেশাল ট্রেনও চলল দু ঘণ্টা লেটে।
এই ঘটনার জেরে পুরুলিয়া ও ঝালদা স্টেশনে রীতিমতো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে আরপিএফ ব্যর্থ হওয়ায় আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিক্ষা দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুভাষ সরকার ও পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোকে মাঠে নামতে হয়। তবুও বিশৃঙ্খলা এড়ানো গেল না। সেই বিশৃঙ্খলা ও হুড়োহুড়িতেই মঙ্গলবার পুরুলিয়া সফর সারলেন স্বয়ং রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। কিন্তু কেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ট্রেন লেট হওয়া ‘রুটিন’ হয়ে গিয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তর ভাঙলেন না। কেনই বা তাঁর পরিদর্শনেও স্পেশাল ট্রেনে দেরি হল? এই দুই অস্বস্তিকর প্রশ্ন এড়িয়ে রাজ্যের সমালোচনা করে গেলেন রেলমন্ত্রী। কটাক্ষ করলেন রেলমন্ত্রী থাকাকালীন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
এদিন সকালেই ওড়িশার রায়রঙ্গপুর থেকে উইন্ডো ট্রলি ইন্সপেকশন শুরু করেন তিনি। এদিন তাঁর পরিদর্শন ছিল একেবারে ঝাড়খণ্ডের হাটিয়া পর্যন্ত। সরকারিভাবে আদ্রা ডিভিশনের চান্ডিল, পুরুলিয়া ও ঝালদা স্টেশনে তাঁর পরিদর্শন থাকলেও লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে চান্ডিলের পরে বরাভূম এবং পুরুলিয়ার পরে জয়পুর স্টেশনেও কিছুক্ষণের জন্য নামতে হয় তাঁকে। এই পরিদর্শনে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। পুরুলিয়া স্টেশনে ছিলেন শিক্ষাদপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুভাষ সরকার। তবে এই সরকারি অনুষ্ঠানও যেভাবে ‘গেরুয়া’ হয়ে গেল তাতে নিন্দার ঝড় বইছে জঙ্গলমহল জুড়ে। পুরুলিয়া স্টেশনে অনুষ্ঠানের জন্য রেলের তরফে কোন সঞ্চালক না থাকায় মাইক্রোফোন হাতে সেই কাজ করলেন বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা।
[আরও পড়ুন: শাড়ি, গয়নায় সেজে পুরুষের জগদ্ধাত্রী বন্দনা! বাংলার কোথায় ব্যতিক্রমী রীতি পালন করা হয়?]
মন্ত্রীর এই পরিদর্শনে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের সঙ্গে ‘রাম নাম সত্য হে’ স্লোগান উঠল। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “সোমবার আমরা বলেছিলাম রেলের এই সরকারি অনুষ্ঠানকে বিজেপি লোকসভা ভোটের আগে রাজনীতির আঙিনায় ব্যবহার করছে। এদিন তাঁরা পুরুলিয়ার মানুষের কাছে তাদের চোখের সামনে প্রমাণ দিল। যেভাবে দক্ষিণ-পূর্ব রেল এখন দেরিতে চলছে। সেই ধারা মেনে রেলমন্ত্রীও দুঘন্টা লেটে চললেন। এর থেকেই পরিষ্কার বর্তমানে রেলের অবস্থা কী!”
রেলমন্ত্রীর স্পেশাল ট্রেন এদিন দেরিতে চলায় পুরুলিয়া স্টেশনে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় তাঁকে স্বাগত জানাতে আসা লোকশিল্পী থেকে ভিড় বাড়াতে বিজেপির তরফে নিয়ে আসা সাধারণ মানুষজনের। বিকাল ৪ টে ২৬ মিনিটে ওই স্পেশাল ট্রেন ঢুকতেই হইচই বেঁধে যায়। শুরু হয়ে যায় ঝামেলা। আরপিএফ-এর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সামাল দিতে চিৎকার শোনা যায় পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর। যদিও তার আগে থেকেই আরেক মাইক্রোফোন হাতে পুরুলিয়া শহর মণ্ডল বিজেপির সভাপতি সত্যজিত অধিকারী বলে যাচ্ছিলেন, “এমন কিছু করবেন না যাতে পুরুলিয়ার সম্মান নষ্ট হয়।” কিন্তু কে শোনে কার কথা! শেষমেষ এড়ানো গেল না বিশৃঙ্খলাকে। আর যার রেশ রয়ে গেল ঝালদাতেও।
তবে এদিন বিশৃঙ্খলা সামলে রেলমন্ত্রী নিজেই পুরুলিয়ার জন্য খানিকটা ‘কল্পতরু’ হয়ে বললেন, পুরুলিয়া স্টেশন হবে বিশ্বমানের। ১৫ দিন, এক মাস, দুমাস। ধীরে সুস্থে সেই বিশ্বমানের ডিজাইন তৈরি করার নির্দেশ দিয়ে গেলেন রেলের আধিকারিকদের। কিন্তু বরাদ্দ কত? রেলমন্ত্রীর জবাব, “টাকা নিয়ে কোনও অসুবিধা হবে না।” রেলমন্ত্রীকে সামনে রেখে পুরুলিয়ার সাংসদ বললেন, শহর পুরুলিয়ার গোশালাতে ওভারব্রিজ অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। আর লেভেলক্রসিংয়ে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকতে হবে না। রেলমন্ত্রী কটাক্ষের সুরে বলেন, “মমতাদির সময় এ রাজ্যে বরাদ্দ হয়েছিল ৪,৩৮০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সময় বাংলায় বরাদ্দ হয়েছে ১১,৯৭০ কোটি টাকা। সেই নানান প্রকল্পের জন্য দিদিকে একের পর এক চিঠি দেওয়া হচ্ছে কিন্তু সেই চিঠির কোন উত্তর মিলছে না। বাংলায় রেলের বিকাশের জন্য রাজ্যের তরফে কোন সহায়তা মিলছে না।” এর পরই তাঁর বার্তা, “বাংলায় রেলের উন্নয়নে রাজনীতির ঊর্ধে উঠে কাজ করতে হবে।” এদিন পুরুলিয়া স্টেশনে জেলার গেরুয়া বিধায়করা ছাড়া হাজির ছিলেন রাঁচির বিজেপি সাংসদ সঞ্জয় শেঠও।