অর্ণব আইচ: রাজভবনের অস্থায়ী কর্মীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ কাণ্ডে নয়া মোড়। অভিযোগকারিণীকে জোর করে আটকে রাখা হয়েছিল। এই অভিযোগে রাজভবনের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিল কলকাতা পুলিশ। শুক্রবার হেয়ার স্ট্রিট থানায় রাজভবনের ৩ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন এক মহিলাও। এদিকে, শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে অভিযোগকারিণী গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন বলে খবর। প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে তাঁর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
সপ্তাহ দুই আগে রাজভবনের অস্থায়ী মহিলা কর্মীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে খোদ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের (CV Ananda Bose) বিরুদ্ধে। ওই মহিলা নিজেই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। আর তা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। মহিলার অভিযোগ অনুযায়ী, রাজভবনের (Raj bhavan) দোতলার একটি অফিস ঘরে জোর করে নিয়ে গিয়ে তাঁকে নিগ্রহ করা, আটকে রেখে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছে রাজভবনের ওই তিন কর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, রাজ্যপালের কনফারেন্স রুম থেকে কাঁদতে কাঁদতে মহিলা বেরনোর পর করিডর থেকে তাঁকে নিজের অফিস ঘরে নিয়ে গিয়ে সব কথা গোপন রাখার জন্য চাপ দেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: ভোটের আগে ফের খাস কলকাতায় উদ্ধার লক্ষ লক্ষ টাকা, গ্রেপ্তার ২]
সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা যায় না। কিন্তু এক্ষেত্রে মহিলার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করেন লালবাজারের আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, বিশেষজ্ঞরাই জানিয়েছিলেন, রাজভবনের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করায় কোনও বাধা নেই। সেই কর্মচারীরা রাজভবনের অন্দরের হলেও অসুবিধা নেই। তাই কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ৩ জন কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। তাই মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ করে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: সুপ্রিম নির্দেশিকার পরেও রাজ্যের নির্বাচিত ৭ নামে আপত্তি বোসের, উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে ফের জটিলতা]
মহিলার বয়ান অনুযায়ী, ওইদিন রাজ্যপাল তাঁকে নিজের ঘরে ডাকার পর তিনি সুপারভাইজারকে সঙ্গে নিয়ে গেল বের করে দেন রাজ্যপাল। তার পর ওই মহিলা কর্মীর সঙ্গে অশালীন আচরণ শুরু করেন বলে অভিযোগ এবং তিনি কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে নেমে আসেন। রাজভবনের অন্দরসজ্জা অনুযায়ী, ওই কনফারেন্স রুম, রাজ্যপালের অফিস, এডিসির অফিস -৩ টি ঘর পেরিয়ে যেতে হয়। মহিলার অভিযোগ, এই তিনটি ঘর পেরিয়ে যাওয়ার সময়েই রাজ্যপাল ফোন করে বলেন, মহিলাকে আটকাতে। তার পর যে তিন কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে, সেই তিনজনই তাঁকে আটকান। জোর করে টানতে টানতে অফিসে নিয়ে যায়। মহিলা চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন, প্রতিবাদ করেন। কিন্তু তাতে কেউ কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, তাঁকে টেনেহিঁচড়ে ঘরে নিয়ে যাওয়া, আটকে রাখা হয়, মোবাইলও নিয়ে নেওয়া হয়। আঘাত করা হয়। হুমকি দেওয়া হয়, এসব কথা প্রকাশ্যে আনা যাবে না।
এসবের পরও কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসেন অভিযোগকারিণী। নিজেই পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ মহিলা কর্মীর। তদন্ত শুরু করার পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে, আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে রাজভবনের কর্মীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১, ১৬৬ ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে হেয়ার স্ট্রিট (Hare Street) থানার পুলিশের তরফে।